মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫, ০৭:৪৯:৫৮

খবরটি পাওয়া মাত্রই ইরানজুড়ে উচ্ছ্বাস, বিজয়ের আনন্দ!

খবরটি পাওয়া মাত্রই ইরানজুড়ে উচ্ছ্বাস, বিজয়ের আনন্দ!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার খবরটি পাওয়া মাত্রই ইরানজুড়ে পালিত হচ্ছে বিজয় উৎসব। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পরপরই ইরানের রাজনৈতিক ও সামরিক মহলে দেখা গেছে উচ্ছ্বাস।

তেহরানসহ দেশের বিভিন্ন শহরে রাস্তায় নেমে আনন্দ মিছিল করেছে হাজার হাজার মানুষ। স্লোগানে মুখরিত হয়েছে রাজধানী, আগুন জ্বালিয়ে উদযাপন করা হয়েছে ‘জয়’।

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরই ইরানের শীর্ষ নেতারা একে ‘ঐতিহাসিক জয়’ হিসেবে আখ্যা দেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা-এর খবরে বলা হয়, এ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ইরানের বিভিন্ন শহরে বিজয় র‍্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ইরানের সহরাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ রেজা আরেফ বলেন, এই বিজয়ের মাধ্যমে ইরান শুধু সামরিক নয়, কূটনৈতিক অঙ্গনেও প্রমাণ করেছে-আমেরিকা ও পশ্চিমা শক্তির শিং ভেঙে দেওয়ার মতো সক্ষমতা আমাদের আছে। এটাই ইরানের প্রকৃত শক্তির বহিঃপ্রকাশ।

এদিকে ইরানের সংসদের স্পিকার ও প্রাক্তন আইআরজিসি (ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড) কমান্ডার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফের উপদেষ্টা মাহদি মোহাম্মাদি একে একটি যুগান্তকারী বিজয় বলে মন্তব্য করেন। এক্স-এ দেওয়া বার্তায় তিনি লিখেছেন, একটি নতুন যুগের সূচনা হলো।

পারমাণবিক ইস্যুতে নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে, পারমাণবিক শক্তি অধিদপ্তর-এর মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি জাতীয় টেলিভিশনে বলেন, আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেউ উপড়ে ফেলতে পারবে না। আমাদের সক্ষমতা ও বিজ্ঞানভিত্তিক অগ্রগতির কারণে এই খাত আর কখনও থেমে থাকবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধবিরতি ইরানের জন্য কৌশলগতভাবে একটি সফলতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ এতে সরাসরি সংঘাত থেকে সরে এসে ইরান একটি ‘শক্ত অবস্থান’ নিয়ে আলোচনায় বসার সুযোগ পেয়েছে। পাশাপাশি নিজ দেশের জনগণের কাছে নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও কূটনৈতিক দক্ষতা তুলে ধরার সুযোগও তৈরি হয়েছে।

ইরানের শহরগুলোতে বিজয় উদযাপনে মুখর জনগণ। রাস্তায় নেমে তারা ‘আমেরিকা নিপাত যাক’, ‘ইসরায়েল ধ্বংস হোক’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখর হয়। বহু জায়গায় দেখা গেছে পতাকা মিছিল, ধর্মীয় সংগীত ও বিপ্লবী স্লোগান।

তবে আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহলে যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল বৈরিতা বহু দশকের, ফলে এই যুদ্ধবিরতি কতদিন স্থায়ী হবে, তা নিশ্চিত নয়।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের ভুখণ্ডে হামলা চালায়, যার লক্ষ্য ছিল দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলো। জবাবে ইরানও পালটা হামলা চালায় ইসরায়েলে। সংঘাত চরমে পৌঁছালে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে সমন্বয় করে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান কাতার ও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

শেষ পর্যন্ত, এই উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন, যা উভয় দেশ মেনে নিতে সম্মত হয়। এই ঘোষণার মাধ্যমে আপাতত এই সংঘাতের অবসান ঘটে।

ইরান বলছে, এই যুদ্ধবিরতি শুধুই সাময়িক বিরতি নয়, বরং এটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে- তারা ভয় পায় না, বরং প্রতিরোধ করতে জানে। তেহরান মনে করছে, মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে তারা এখন আরও দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাসী অবস্থানে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে