বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫, ০১:৫৯:৩৮

যে বাঙালি পাইলট ভূপাতিত করেছিলেন ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান!

 যে বাঙালি পাইলট ভূপাতিত করেছিলেন ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ১৯৬৭ সালের ৫ জুন, ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় ইসরায়েল চারটি যুদ্ধবিমান নিয়ে জর্ডানের মাফরাক বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায়। এর আগে তারা মিশরীয় বিমানবাহিনীকে প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। তবে ওই হামলায় ইসরায়েল সফল হওয়ার আগেই দুটি যুদ্ধবিমান হারায়। এর একটি ভূপাতিত করেন বাঙালি পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম, যিনি সে সময় পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কর্মরত থেকে জর্ডানের হয়ে লড়ছিলেন।

ঘটনার দিন সাইফুল আজম জর্ডানের একটি হান্টার যুদ্ধবিমান নিয়ে ইসরায়েলের একটি মিস্টেয়ার বিমান ধাওয়া করে তা গুলি করে ভূপাতিত করেন এবং আরেকটি বিমান আক্রমণ করে ক্ষতিগ্রস্ত করেন। পরে জ্বালানি ও গোলাবারুদের অভাবে ফিরে আসেন মাফরাক ঘাঁটিতে।

পরে ইরাক সরকারের আমন্ত্রণে তিনি তার সঙ্গীদের নিয়ে যান হাবানিয়া বিমানঘাঁটিতে। ৭ জুন, ইরাকের এইচ-থ্রি বিমানঘাঁটিতে ইসরায়েলি হামলার সময় সাইফুল আজমের নেতৃত্বে ইরাকি হান্টার বিমানগুলো পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সাইফুল আজম সেখানে আরও দুটি ইসরায়েলি মিরাজ যুদ্ধবিমান গুলি করে ধ্বংস করেন। তার সহযোদ্ধারাও অন্য দুটি বিমান ভূপাতিত করেন।

এই ব্যতিক্রমী বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে জর্ডান সরকার ‘উইসাম আল-ইসতিকলাল’, ইরাক ‘নুত আল-সুজাত’ এবং পাকিস্তান ‘সিতারা-ই-বাসালাত’ সম্মাননায় ভূষিত করে। এর আগে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করায় তিনি পান ‘সিতারা-ই-জুরাত’।

১৯৭২ সালে সাইফুল আজম বাংলাদেশে ফিরে এসে যোগ দেন নবগঠিত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে। পরবর্তী সময় ২০০১ সালে তাকে ‘লিভিং ঈগল’ উপাধিতে ভূষিত করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ‘ইন্টারন্যাশনাল হল অব ফেম’-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ম্যাগাজিন Second to None-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে এয়ার কমডোর মোহাম্মদ আলী উল্লেখ করেন, সাইফুল আজম চারটি দেশের—পাকিস্তান, জর্ডান, ইরাক এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে, তিনি দুটি দেশের ভারত ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছেন।

অবসরের পর রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে সাইফুল আজম পাবনা থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত সামরিক বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার শহীদুল ইনাম খান এক লেখায় উল্লেখ করেন, সাইফুল আজমের সাহসিকতা এমনকি ইসরায়েলেও প্রশংসিত হয়েছিল। ২০২০ সালের জুনে তার মৃত্যুর পর ইসরায়েলের প্রধান পত্রিকাগুলোতে তাকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

একটি ঘটনার বর্ণনায় শহীদুল ইনাম লেখেন, ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে সাইফুল আজম যখন একটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানকে নিশানা করেন, তখন তিনি সরাসরি আক্রমণ না করে পাশ থেকে গুলি করেন, যাতে বিমানের লেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে পাইলট বেঁচে যান এবং প্যারাসুটে অবতরণ করেন।

পরে ওই ইসরায়েলি পাইলট জানান, তিনি যখন প্যারাসুটে নামছিলেন, তখন সাইফুল আজম রোল ও লুপ দিয়ে তার পাশে এসে হাত নাড়েন এবং এরপর অন্য একটি ইসরায়েলি বিমান ধ্বংস করতে এগিয়ে যান। পাইলট বলেন, সাইফুল চাইলে তাকেও গুলি করে মারতে পারতেন; কিন্তু তিনি তা করেননি।

জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ছয় দিনের যুদ্ধ শেষ হলেও, ততদিনে ইসরায়েল গোলান মালভূমি, গাজা, সিনাই উপদ্বীপ এবং পশ্চিম তীর (পূর্ব জেরুজালেমসহ) দখল করে নেয়, মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র বদলে যায়। তবে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সাইফুল আজমের বীরত্বপূর্ণ অবদান ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে