শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫, ০৮:১৯:৩৯

হঠাৎ শুকিয়ে যাচ্ছে যে সাগর, যে আশঙ্কা!

হঠাৎ শুকিয়ে যাচ্ছে যে সাগর, যে আশঙ্কা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্থলবেষ্টিত হ্রদ কাস্পিয়ান সাগর দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। কাজাখস্তানের শহর আকটাটের বাসিন্দারা বলছেন, সাগরের পানি প্রায় ১০০ মিটার সরে গেছে। এটি এখন দেখলেই বোঝা যায়।

পরিবেশবিদ ও গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই হার অব্যাহত থাকলে শতকের শেষ নাগাদ সাগরের পানি ১৮ মিটার পর্যন্ত কমে যেতে পারে। একইসঙ্গে এটি তার প্রায় ৩৪ শতাংশ পৃষ্ঠভাগ হারাতে পারে।

প্রাচীনকাল থেকেই কাস্পিয়ান সাগর স্থানীয় মানুষের জীবনের অংশ ছিল। পরিবেশবিদ আদিলবেক কোজিবাকভ জানান, তার শৈশবে পরিবারের ফ্রিজে সবসময় স্টারজন মাছের ক্যাভিয়ার থাকত। এখন সেই মাছ বিলুপ্তপ্রায় এবং দোকানে প্রাকৃতিক ক্যাভিয়ার পাওয়া যায় না। স্টারজনসহ আরও অনেক প্রজাতির মাছের আবাসস্থল নষ্ট হয়ে গেছে। গবেষকরা বলছেন, মাত্র ৫ থেকে ১০ মিটার পানির স্তর কমলেও সীল, স্টারজন ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।

রাশিয়া, কাজাখস্তান, তুর্কমিনিস্তান, ইরান এবং আজারবাইজান—এই পাঁচ দেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে কাস্পিয়ান সাগর।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তন নয়, রাশিয়ার পানিনীতি এবং দখলদারি প্রকল্পও কাস্পিয়ান সাগরের সংকটের জন্য দায়ী। রাশিয়ার ভলগা নদী থেকে আসে কাস্পিয়ানের ৮০-৮৫ শতাংশ পানি। কিন্তু বিগত দশকে নদীতে অসংখ্য বাঁধ ও রিজার্ভার তৈরি করা হয়েছে। কৃষি ও শিল্পে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে কাস্পিয়ান সাগরে পানির প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে।

আদিলবেক কোজিবাকভ বলেন, ‘আমরা জানি সাগর শুকিয়ে যাচ্ছে। এটি বুঝতে কোনো গবেষণার প্রয়োজন নেই—চোখেই দেখা যাচ্ছে।’

আরও একটি বড় সমস্যা হলো, সাগরের আশপাশে থাকা তেলক্ষেত্র ও তাদের পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির ভূমিকা। সোভিয়েত আমলে আবিষ্কৃত এসব তেলক্ষেত্র এখন আন্তর্জাতিক কোম্পানির হাতে। এসব কোম্পানির সঙ্গে সরকার যে গোপন চুক্তি করেছে, তাতে পরিবেশের আসল ক্ষতি সম্পর্কে তথ্য জানার সুযোগ নেই। কাজাখস্তানের পরিবেশ আইনজীবী ভাদিম নি বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন, যদিও সেটি এখনো গ্রহণ করা হয়নি।

নি বলছেন, এই চুক্তিগুলো গোপন রাখায় তা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। আর যে সব তথাকথিত পরিবেশগত গবেষণা প্রকাশ করা হয়, তা অনেক সময় কোম্পানির স্বার্থরক্ষার জন্য পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ইউরোপে ‘গ্রিন এনার্জি’ পাঠাতে গিয়ে স্থানীয়রা পড়ে থাকছে দূষণ, বর্জ্য ও পানির ঘাটতির মাঝে।

আকটাউ শহরে পরিবেশবাদী কোজিবাকভ স্থানীয় প্রশাসন, নাগরিক সমাজ ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে কাজ করছেন কাস্পিয়ান সাগর রক্ষায়। তিনি বলেন, এই সাগর শুধু গবেষকদের নয়, এখানকার প্রতিটি বাসিন্দার ভবিষ্যৎ জড়িত এর সঙ্গে। পরিবেশ রক্ষা শুধু কাগজে-কলমে নয়, এটিকে বাস্তবিকভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।

কাস্পিয়ান সাগর শুধু একটি জলাশয় নয়, বরং এটি রাশিয়া, কাজাখস্তান, ইরান, আজারবাইজান ও তুর্কমেনিস্তানের মাঝখানে একটি ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত কেন্দ্র। এটি চীন থেকে ইউরোপে যাওয়ার সবচেয়ে দ্রুত পথ ‘মিডল করিডোর’-এর অংশ। একই সঙ্গে এটি তেল ও গ্যাসের বিশাল ভাণ্ডার। ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪-এ কাস্পিয়ান সাগর উপকূলে অবস্থিত কাজাখস্তানের আকতাউ বন্দর শহর।

অনেকে আশঙ্কা করছেন, কাস্পিয়ান সাগর হয়তো একই পরিণতির দিকে এগোচ্ছে, যেভাবে আরাল সাগর গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে শুকিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন নদীর পানি কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার করে সাগরটিকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলে। বর্তমানে আরাল সাগর তার ১০ শতাংশ মাত্র টিকে আছে। এখন কাস্পিয়ান সাগরের ভবিষ্যৎও একই ধরনের বিপদে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে হয়তো এই সাগর শুধু ইতিহাস হয়ে থাকবে। তথ্যসূত্র : আলজাজিরা

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে