বুধবার, ০২ জুলাই, ২০২৫, ০৯:৪৩:৫৯

১৯৭৩ সালের পর এই প্রথম এমন হলো ডলারের দাম!

১৯৭৩ সালের পর এই প্রথম এমন হলো ডলারের দাম!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ডলার বিশ্ববাজারে ১০ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে, যা ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় পতন। ১৯৭৩ সারে যুক্তরাষ্ট্র স্বর্ণমান থেকে বেরিয়ে এসে বড় ধরনের দরপতনের মুখে পড়েছিল। 

এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এবার ডলারের এই পতনের পেছনে আছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী শুল্কনীতি ও আত্মকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্যনীতি, মূল্যস্ফীতির শঙ্কা এবং সরকারি ঋণের ঊর্ধ্বগতির কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা দুর্বল হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের প্রতি সন্দেহ বাড়ছে।

ডলার দুর্বল হওয়ায় যেমন আমদানির খরচ বেড়েছে, তেমনি রপ্তানিকারকরা লাভবান হচ্ছেন। তবে ট্রাম্পের বারবার শুল্ক আরোপের হুমকিতে বাণিজ্য পরিস্থিতি অনিশ্চয়তায় পড়েছে। শুরুতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে, এ আশায় ডলার শক্তিশালী হয়েছিল, কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বরং শুল্কভিত্তিক মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা, উচ্চ সুদহার এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ ডলারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

এ পরিস্থিতিতে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের বিদেশি মুদ্রা গবেষণা বিভাগের স্টিভ ইংল্যান্ডারের মতে, ডলার শক্তিশালী না দুর্বল, সেটাই মুখ্য নয়; বরং বিশ্ব তোমার অবস্থানকে কীভাবে দেখছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।

২০২৫ সালে এসে দেখা যাচ্ছে, শেয়ারবাজার ও বন্ডবাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও ডলারের পতন অব্যাহত। বছরের শুরুতে ডলার কিছুটা শক্তিশালী থাকলেও, এখন তা ১৯৭৩ সালের ধসের পর সর্বোচ্চ পতনের মুখে।

বিনিয়োগকারীদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি
ডলারের অবমূল্যায়নের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আয় কমে যাচ্ছে। যেমন, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২৪ শতাংশ বাড়লেও ইউরোয় হিসাব করলে তা মাত্র ১৫ শতাংশ। ফলে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা এখন ইউরোপসহ অন্যান্য অঞ্চলে নতুন সুযোগ খুঁজছেন। ইউরোপের ইউরোস্টক্স ৬০০ সূচক ডলারে রূপান্তর করলে প্রায় ২৩ শতাংশ পর্যন্ত লাফ দিয়েছে।

বাড়তি ব্যয়, বাড়ছে ঋণ
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে, যদিও ট্রাম্প নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে ব্যয় কমানোর কথা বলেছিলেন। অনুমান করা হচ্ছে, নতুন বাজেট প্রস্তাব পাস হলে আগামী দশকে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের ঘাটতি তৈরি হবে। সেই ঘাটতি পূরণে সরকারকে ট্রেজারি থেকে বেশি ঋণ নিতে হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, যারা এই ঋণ দেয়, তারাই এখন মার্কিন বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

ডলার দীর্ঘদিন ধরে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নিরাপদ মুদ্রা হিসেবে বিবেচিত হলেও, বর্তমান অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে সেই আস্থায় ভাটা পড়ছে। বিনিয়োগকারীরা এখন ডলার ও মার্কিন সম্পদের বিকল্প খুঁজছেন। ডলারের ওপর আস্থার এই সংকট আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

ডিডলারাইজেশন
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে শত শত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যার মধ্যে ছিল ডলারভিত্তিক লেনদেন বন্ধ এবং সম্পদ জব্দ। অনেক দেশ এটিকে ডলারকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহারের নজির হিসেবে দেখেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘ডিডলারাইজেশন’ প্রবণতা শুরু হয়, অর্থাৎ ডলার বাদ দিয়ে অন্য মুদ্রায় লেনদেন বাড়াতে থাকে বিভিন্ন দেশ।

যদিও পুরোপুরি ডিডলারাইজেশন এখনো অনেক দূরের বিষয়, তবে ক্রমবর্ধমান সরকারি ঋণ এবং আন্তর্জাতিক আস্থার সংকট যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে। সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে