বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫, ০৮:২১:০৩

বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেবে জাপান!

বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেবে জাপান!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে অর্থনৈতিক অগ্রগতির কারণে বিদেশে কাজ করতে আগ্রহ কমছে কর্মীদের। ফলে শ্রমিক সংকট মেটাতে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর দিকে নজর দিচ্ছে জাপান। বিকল্প শ্রমিক উৎস হিসেবে দেশটি এখন বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তানসহ কয়েকটি দেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া জানিয়েছে, জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও উজবেকিস্তানের এজেন্সিগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালাতে একটি বেসরকারি সংস্থা নিয়োগ করতে যাচ্ছে। এই সংস্থা জাপানে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া, শ্রমের চাহিদা এবং প্রাতিষ্ঠানিক বাধাগুলো বিশ্লেষণ করবে।

মূলত নার্সিং, খাদ্যসেবা ও নির্মাণ খাতে কর্মী ঘাটতি মোকাবেলায় বিদেশি শ্রমিকের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে চায় জাপান। এই উদ্দেশ্যে দেশটির ওনোদেরা গ্রুপের অধীনে পরিচালিত উচ্চমানের সুশি রেস্তোরাঁ ওনোদেরা ইউজার রান সম্প্রতি উজবেকিস্তানের অভিবাসন সংস্থার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে। এই চুক্তির আওতায় জাপানে কাজ করতে আগ্রহী তরুণদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালু হবে, যেখানে ছয় মাস পর্যন্ত জাপানি ভাষার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পরে নির্দিষ্ট দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জাপানে নিয়ে যাওয়া হবে। বছরে প্রায় ২০০ জনকে রেস্তোরাঁ ও নার্সিং খাতে নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে এই প্রকল্প।

একইভাবে, জাপান-চীন-এশিয়া এডুকেশনাল মেডিকেল কালচারাল এক্সচেঞ্জ নামের আরেকটি সংস্থা বিদেশি শিক্ষার্থীদের জাপানে পড়াশোনায় সহায়তা করে। সংস্থাটি চলতি বছরের এপ্রিলে উজবেকিস্তানে তিনটি জাপানি ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র চালু করেছে।

এদিকে, চেইন রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠান ওয়াতামি বাংলাদেশে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করতে যাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য প্রতি বছর প্রায় ৩ হাজার বাংলাদেশিকে জাপানে নির্দিষ্ট দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিক হিসেবে পাঠানো।

যদিও এখন পর্যন্ত দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো থেকে জাপানে শ্রমিকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। জাপানের টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ও নির্দিষ্ট দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিক প্রোগ্রামে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতের মাত্র ১ হাজার ৪২৭ জন, শ্রীলঙ্কার ৪ হাজার ৬২৩ জন এবং উজবেকিস্তানের ৩৪৬ জন শ্রমিক নিবন্ধিত ছিলেন।

তবে জাপান সরকার আশা করছে, এই দেশগুলো থেকে আগত শ্রমিকের সংখ্যা ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। জাপানের শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভারতের কর্মীবাহিনীর সংখ্যা ছিল ৪৯২ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন এবং প্রতি বছর সেখানে প্রায় ১ কোটি নতুন কর্মী যুক্ত হচ্ছে। একই বছরে ভারতের ১৫-২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ থেকেও জাপানে কর্মী পাঠানোর হার বাড়ছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ও নির্দিষ্ট দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিক প্রোগ্রামে বাংলাদেশের কর্মী সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৭৭ জনে।

বর্তমানে জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ও নির্দিষ্ট দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিক প্রোগ্রামের অধীনে প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার বিদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি—প্রায় অর্ধেকই—ভিয়েতনাম থেকে আগত, যাদের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬১৯ জন।

উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৩ সালে চীনের মাথাপিছু জিডিপি ৭ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন পাঠানোর হার কমতে শুরু করে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে জাপানে চীনা টেকনিক্যাল ইন্টার্নের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ হাজার ৯৬০ জন।

এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তানসহ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো জাপানের নতুন শ্রমিক সরবরাহকারীতে পরিণত হতে পারে বলে মনে করছে দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে