আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রণতরী থেকে ছোড়া হচ্ছে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র। দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কেঁপে উঠছে সমুদ্রের জলরাশি। শত মাইল দূর থেকেও শোনা যাচ্ছে তার প্রতিধ্বনি। ক্ষেপণাস্ত্রের ঝরণায় উত্তাল হয়ে উঠেছে মহাসাগর। আকাশপথে উড়ে যাচ্ছে হেলিকপ্টার, চলছে সর্বত্র নজরদারি। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে ডুবন্ত সাবমেরিন। স্থলভাগেও সমান তৎপরতা—মিসাইল লঞ্চার থেকে শত্রুপক্ষের নিশানায় ছুটছে ক্ষেপণাস্ত্র। এমনই এক সামরিক শক্তির মহড়া চালালো রুশ বাহিনী।
২৫ জুলাই প্রশান্ত মহাসাগর, ব্যারেন্স সাগর ও বাল্টিক সাগরের জলরাশিতে ‘অপারেশন জুলাই স্টর্ম’ নামে এক বিশাল নৌ-মহড়া চালায় রাশিয়ার নৌবাহিনী। এই মহড়ায় অংশ নেয় ১৫০টিরও বেশি যুদ্ধজাহাজ, ১২০টি যুদ্ধবিমান, ১০টি স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং ১৫,০০০ সামরিক সদস্য। মহড়াটির সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন রাশিয়ার নৌবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এডমিরাল আলেকজান্ডার ময়সেফ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, ব্যারেন্স সাগরে রাশিয়ার ‘নর্দান ফ্লিট’-এর ওরেল পারমাণবিক মিসাইল সাবমেরিন কৌশলী মহড়া চালাচ্ছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় ফ্লিটের যুদ্ধজাহাজগুলো ক্রুজ মিসাইলসহ নানা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছে। এছাড়া মহড়ায় স্থলভিত্তিক ব্যাসন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার ব্যবহারের দৃশ্যও উঠে আসে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এই মহড়ার প্রধান উদ্দেশ্য হলো বহুমুখী যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সামরিক সক্ষমতা যাচাই এবং কৌশলগত প্রস্তুতি জোরদার করা। একই সঙ্গে সমুদ্রপথে অর্থনৈতিক ও সামরিক স্বার্থ রক্ষায় সেনাদের প্রস্তুতি কতটা তা যাচাই করা হচ্ছে। এছাড়া নতুন সামরিক প্রযুক্তির কার্যকারিতা এবং বিদ্যমান অস্ত্রশস্ত্রের আধুনিকায়ন কতটা সফল, তাও পরীক্ষা করা হচ্ছে এই মহড়ার মাধ্যমে।
সমর বিশ্লেষকদের মতে, চলমান বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে এমন বিশাল আকারের মহড়া কেবল সামরিক শক্তি প্রদর্শন নয়, বরং অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে ন্যাটো জোটকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়ার একটি কৌশল হিসেবেও দেখা যেতে পারে। রাশিয়া যেন বলতে চাচ্ছে—এখনো তারা সমুদ্র ও আকাশপথে কৌশলগত দিক থেকে অতীব প্রস্তুত ও সক্রিয়।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার র্যাংকিং অনুযায়ী, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পর রাশিয়ার নৌবাহিনী বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শক্তিশালী নৌবাহিনী। বিশাল এই বহরে রয়েছে পারমাণবিক সাবমেরিন, ডেস্ট্রয়ার, ফিগ্রেট এবং অত্যাধুনিক মিসাইল ক্রুজার। যা বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি এবং কৌশলগত প্রভাব বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।