বুধবার, ০৬ আগস্ট, ২০২৫, ০৭:১২:৫৫

পাকিস্তানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সেনাপ্রধান অসীম মুনির

পাকিস্তানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সেনাপ্রধান অসীম মুনির

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোর শীর্ষে অবস্থানে আছে দেশটির সেনাবাহিনী। তাই পাকিস্তানের সেনাপ্রধান পদে যে ব্যক্তি থাকেন— দেশটির শাসনতান্ত্রিক সংস্কৃতি অনুসারে তিনি খুবই প্রভাবশালী হন।

কিন্তু সাম্প্রতিক কালে পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনির তার পূর্বসূরী সব সেনাপ্রধানের চেয়েও অনেক বেশি প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতে লড়াকু মনোভাব এবং সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকার জন্য পুরো জাতির কাছে বিশেষভাবে সম্মানিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হচ্ছেন অসীম মুনির। 

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এ পর্যন্ত দু’জন সেনাপ্রধান সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ পদবী ফিল্ড মার্শাল অর্জন করেছেন- আইয়ুব খান এবং অসীম মুনির।

তবে এখানে পার্থক্য আছে। ১৯৫৮ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর নিজেই নিজেকে ফিল্ড মার্শাল পদবী দিয়েছিলেন আইয়ুব খান; অন্যদিকে অসীম মুনিরকে এই পদবী প্রদান করেছে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক সরকার। জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় গত মে মাসে পাকিস্তানে সামরিক অভিযান অপারেশন সিঁদুর পরিচালিত করে ভারত। 

সে অভিযানের জবাব দিতে পাল্টা অপারেশন ‘বুনিয়ান উল মারসুস পরিচালনা’ করে পাকিস্তান এবং তাতে নেতৃত্ব দেন সেনাপ্রধান অসীম মুনির। সাহসিকতা ও কৃতিত্বের সঙ্গে এ অভিযান পরিচালনা করায় মে মাসেই ‘জেনারেল’ পদবী থেকে উন্নীত হয়ে ‘ফিল্ড মার্শাল’ হন তিনি।

এখন পাকিস্তানে গুঞ্জন শুরু হয়েছে যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারিকে সরিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে চান অসীম মুনির এবং তার এই চাওয়া পূরণ হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট সম্প্রতি এই গুঞ্জনের সত্যতা অনুসন্ধান করেছে। অনুসন্ধান বা খোঁজ-খবরের অংশ হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছে ইকোনমিস্ট। তবে উভয় নেতৃত্বই গুঞ্জনের সত্যতা নেই বলে দাবি করেছে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ বিভাগ ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশন্স (আইএসপিআর)-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী এই ‘অর্থহীন ছাইপাঁশ’ উল্লেখ করে দ্য ইকোনোমিস্টকে বলেছেন, “এসব আসলে অর্থহীন ছাইপাঁশ কথাবার্তা। সেনাপ্রধান দেশের প্রেসিডেন্ট হতে চান— এ তথ্যের কোনো সত্যতা নেই।”

“ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনির কখনও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। ভবিষ্যতেও এমন কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সেনাপ্রধান এবং সেনাবাহিনী একটি বিশেষ ‘ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ’ মেনে চলে। দেশের জাতীয় স্বার্থের জন্যই এটা মেনে চলা হয়। বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির সঙ্গেও আমরা তা মেনে চলছি”, ইকোনমিস্টকে বলেন আইএসপিআরের মহাপরিচালক।

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি এই গুঞ্জনকে ‘বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা’ উল্লেখ করে বলেন, “এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি এবং বর্তমান প্রেসিডেন্টকে অব্যাহতি দিয়ে আমরা সেনপ্রধানকে দেশেল নতুন প্রেসিডেন্ট করব— এ তথ্যের কোনো সত্যতা নেই।”

বস্তুত, ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনির পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ইতিহাসের সবচেয়ে চৌকস কর্মকর্তাদের একজন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে পাকিস্তানের মাঙ্গলা অফিসার্স ট্রেইনিং স্কুলে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। বিশেষ কৃতিত্ব দেখানোর জন্য সেখানেই সোর্ড অব অনার পেয়েছিলেন তিনি। এটা প্রশিক্ষণার্থী পর্যায়ে একজন পাকিস্তানি  সেনাকর্মকর্তার জন্য সর্বোচ্চ সম্মান। এছাড়া নিজের ক্যারিয়ারে একই সঙ্গে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-এর মহাপরিচালকও ছিলেন তিনি।

২০২২ সালে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হন ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনির। সূত্র : গালফ নিউজ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে