রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫, ০৬:০৮:২৩

ভারতের বস্ত্র কেনা বন্ধ করলো মার্কিন ক্রেতারা

ভারতের বস্ত্র কেনা বন্ধ করলো মার্কিন ক্রেতারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন শুল্কের চাপ ভারতীয় বস্ত্রশিল্পে সরাসরি আঘাত হানতে শুরু করেছে। ৭ আগস্ট থেকে ২৫ শতাংশ শুল্কের প্রথম ধাপ কার্যকর হওয়ার পরপরই মার্কিন ক্রেতারা ভারত থেকে বস্ত্রপণ্য তোলা বন্ধ করে দিয়েছেন ও নতুন অর্ডার দেওয়াও স্থগিত রেখেছেন। এই পরিস্থিতি ভারতের বস্ত্রশিল্পে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

ভারতের শীর্ষ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান গোকালদাস এক্সপোর্টসসহ বেশ কিছু বড় কোম্পানি ঝুঁকি কমাতে নতুন বাজার খোঁজা, বিভিন্ন মহাদেশে উৎপাদন কারখানা স্থাপনসহ বৈচিত্র্যময় ব্যবসায়িক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। তারা বলছে, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এই সংকট থেকে কিছুটা মুক্তি দিতে পারে।

অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের (এইপিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও কেটি কর্প প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রেমল উদানি বলেন, এটি বস্ত্র ও পোশাকশিল্পের জন্য এক অস্তিত্ব সংকট। বিদ্যমান শুল্কের সঙ্গে অতিরিক্ত শুল্ক মিলে প্রায় ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২৭ আগস্টের পর ৬৫ শতাংশে পৌঁছাবে। মার্কিন ক্রেতারা পণ্য কেনা বন্ধ করে দিয়েছে ও নতুন অর্ডারও স্থগিত করেছে। দ্রুত সমাধান না হলে অর্ডার বাতিল, কারখানা বন্ধসহ নানা নেতিবাচক পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে।

গোকালদাস এক্সপোর্টস মনে করছে, কেনিয়া ও ইথিওপিয়ার সঙ্গে ১০ শতাংশ মার্কিন পারস্পরিক শুল্কহার থাকার কারণে তাদের আফ্রিকার ব্যবসা তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ভাইস চেয়ারম্যান শিবরামকৃষ্ণণ গণপতি বলেন, গত কয়েক বছরে আমরা ব্যবসায়িক ঝুঁকি কমাতে পণ্যের বৈচিত্র্য এনেছি এবং ভারত ও আফ্রিকায় উৎপাদন কারখানা গড়েছি। যে কোনো জায়গায় দ্রুত উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে আমরা প্রস্তুত। পাশাপাশি, বিক্রির বাজারও বৈচিত্র্যময় করেছি। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যে আমাদের জন্য বড় সহায়ক হবে।

সম্প্রতি ঘোষিত ভারত-যুক্তরাজ্য এফটিএ চীনকে পেছনে ফেলে ১২ শতাংশ শুল্ক সুবিধা দেবে ও ভারতকে বাংলাদেশের সমপর্যায়ে নিয়ে আসবে। একই সঙ্গে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি ভারতীয় পোশাক রপ্তানিতে বড় সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে বলে মনে করেন গণপতি।

ভারতের কটন টেক্সটাইল এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ড. সিদ্ধার্থ রাজাগোপাল বলেন, ভারতীয় বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানিতে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ একটি বড় ধাক্কা। যুক্তরাষ্ট্র এই খাতের সবচেয়ে বড় বাজার হওয়ায় পূর্ণমাত্রায় শুল্ক কার্যকর হলে রপ্তানি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি আরও বলেন, বস্ত্রশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই সরকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন, যাতে এই কঠিন সময়ে রপ্তানির গতি যতটা সম্ভব বজায় রাখা যায়।

ম্যানমেড ফাইবার অ্যান্ড টেকনিক্যাল টেক্সটাইল এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক এ. রাভিকুমার জানান, ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বস্ত্রপণ্য রপ্তানি করা কার্যত সম্ভব হবে না। এত বেশি শুল্ক রপ্তানিকারক বা ক্রেতা কেউই বহন করতে পারবে না।

ভারতীয় রপ্তানিকারকরা এখন আশা করছেন, আগামী ২১ দিনের মধ্যে শুল্ক কমানো হবে। এরপরেই আবার শাস্তিমূলক শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা।

খায়তান অ্যান্ড কো. এর অংশীদার আয়ুষ এ. মেহরোত্রা বলেন, ভারতীয় বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য এ শুল্কের প্রভাব তাৎক্ষণিক এবং মারাত্মক। তারা এখন মার্কিন বাজারে বড় ধরনের প্রতিযোগিতামূলক অসুবিধার মুখে পড়ে গেছেন। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো যেহেতু আরও অনুকূল শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে, তাই ক্রেতারা এই বিকল্প উৎসগুলোর দিকে ঝুঁকতে পারে। এতে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য সংকট আরও তীব্র হবে।

তিনি আরও বলেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে- চুক্তিতে মূল্য সমন্বয়ের সুযোগ বা শুল্কভার ভাগাভাগির পথ খুঁজে বের করতে হবে, বিশেষত যখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শর্তাবলীতে ঝুঁকি বণ্টন স্পষ্ট নয়। আগাম চুক্তি বাতিলের ঝুঁকি সাবধানে মূল্যায়ন করা জরুরি।

তবে গণপতি বলেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সুবাদে চীনের তুলনায় ভারত ১২ শতাংশ শুল্ক সুবিধা পাবে। এ চুক্তি ভারতকে বাংলাদেশের সমকক্ষও করে তুলবে। একই সঙ্গে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি ভারতীয় পোশাক রপ্তানিতে বড় সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে বলে মনে করেন তিনি। সূত্র: ডেকান হেরাল্ড

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে