আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিয়ের দুইদিন বাকি… বাড়িতে আনন্দ, উৎসব আর সাজ সাজ রব। এরমধ্যে ফোনে নিজের মায়ের সঙ্গে দীর্ঘসময় কথা বলেন মালয়েশিয়া প্রবাসী নূর মোহাম্মদ। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা পরই আকস্মিক বন্যা ভাসিয়ে নিয়ে যায় তার ঘরবাড়ি। মুহূর্তের মধ্যে সব আনন্দ রূপ নেয় বিষাদে।
নূর মোহাম্মদ মালয়েশিয়া থেকে এসেছিলেন বিয়ে করতে। কিন্তু এরমধ্যেই ঘটে যায় এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এই বিপর্যয়ে নিজের মা-সহ পরিবারের ২৪ সদস্যকে হারান তিনি। যেখানে বিয়ে করতে প্রবাস থেকে এসেছিলেন। সেখানে তিনি নিজ দেশ পাকিস্তানে ফিরে পরিবারের ২৪ জনের জানাজা পড়েছেন।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে নূর মোহাম্মদ বলেন, “আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না মা কতটা খুশি ছিল।” কাদির নগর গ্রামে নিজের পরিবারের ৩৬ রুমের বাড়িটির ধ্বংসস্তূপের পাশে বসে কাঁদছিলেন তিনি।
নূর মোহাম্মদ বলেন, “সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। বাড়ির কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই। শুধু বড় বড় পাথর আর ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে। যেগুলো বন্যার পানিতে ভেসে এসেছে। বন্যার সঙ্গে আসা পাথরগুলো সামনে যা ছিল তার সব ধসিয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি বাড়িঘর, দোকান, মার্কেট কিছুই।”
তিনি বলেন, “অনেক বড় বন্যা এসে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। নিয়ে গেছে আমার বাড়ি, মা, বোন, ভাই, আমার চাচা, আমার দাদা এবং শিশুদের।”
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের বুনের বিভাগের কাদির নগর গ্রামটি স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার হয়েছে। বুনের বিভাগে গত কয়েকদিনে অন্তত ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
নূর মোহাম্মদ ১৫ আগস্ট মালয়েশিয়া থেকে পাকিস্তানে ফেরেন। সেখানে তিনি শ্রমিকের কাজ করেন। ওইদিনই ইসলামাবাদ বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে আসার কথা ছিল তার। তখন বাড়িতে তার বিয়ের পুরো প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু বিয়ের বদলে পরিবারের ২৪ জনের জানাজায় উপস্থিত হতে হয়েছে তাকে।
মা, বোন, ভাই, চাচা, দাদা তার বাড়িতে থাকক। আর বিয়ে উপলক্ষ্যে অন্য আত্মীয়রা এসেছিলেন। তারাও ভয়াবহ এ বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন। তবে বিমানবন্দর থেকে আনতে যাওয়ায় তার বাবা আর আরেক ভাই বেঁচে গেছেন।
পাকিস্তানের পাহাড়ি অঞ্চলগুলো অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ও মেঘ বিস্ফোরণের কারণে ভয়াবহ আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়। যা মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে কেড়ে নিয়েছে ৪৫০টিরও বেশি প্রাণ। সূত্র: রয়টার্স