আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পুরো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ তদন্তের জেরে শিগগিরই এই পদক্ষেপ নিতে চলেছে দেশটি।
এতে আদালতের দৈনন্দিন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ তদন্তের প্রতিশোধ হিসেবে পুরো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) লক্ষ্য করে শিগগিরই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন আগে থেকেই কয়েকজন আইসিসির বিচারক ও প্রসিকিউটরের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
তবে এবার আদালতকেই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হলে তা হবে বড় ধরনের নাটকীয় ঘটনা।
এ বিষয়ে অবগত ছয়টি সূত্র জানিয়েছে, “এনটিটি স্যাংশন” বা পুরো প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত খুব শিগগিরই ঘোষণা করা হতে পারে। আদালত ইতোমধ্যেই সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি বৈঠক করেছে। কূটনৈতিক মহলেও আলোচনার খবর পাওয়া গেছে।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুরো আদালতকে টার্গেট করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে সুনির্দিষ্ট সময় নিয়ে কিছু জানাননি তিনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র অভিযোগ করেন, আদালত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নাগরিকদের ওপর “অযৌক্তিক এখতিয়ার” দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, আদালত যদি কাঠামোগত পরিবর্তন না আনে, তাহলে ওয়াশিংটন নিজেদের সেনাসদস্য ও স্বার্থ রক্ষায় অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেবে।
এদিতে পুরো প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে কর্মীদের বেতন দেওয়া, ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার বা সফটওয়্যার চালানো পর্যন্ত বিঘ্নিত হতে পারে। সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে আদালতের কর্মীদের ২০২৫ সালের বাকি মাসগুলোর বেতন আগাম পরিশোধ করা হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপ আগেও নেওয়া হয়েছিল।
আদালত বিকল্প ব্যাংকিং সেবা ও সফটওয়্যার সরবরাহকারীর খোঁজও করছে।
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগভিত্তিক আইসিসি ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট এবং হামাসের বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধের অপরাধে অভিযোগ এনেছে।
এর আগে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের কর্মকাণ্ড তদন্ত নিয়েও আদালতের কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, আদালতের ১২৫ সদস্যদেশের কয়েকটি দেশ আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা ঠেকানোর চেষ্টা করবে। তবে সব ইঙ্গিতেই বোঝা যাচ্ছে, ওয়াশিংটন এবার আক্রমণ আরও বাড়াতে পারে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই আদালতকে “জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি” এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে “আইনের অপব্যবহারের হাতিয়ার” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আদালত গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার করার এখতিয়ার রাখে। তবে শর্ত হলো, অপরাধটি সদস্য রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে বা নাগরিক দ্বারা সংঘটিত হতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এই আদালতের সদস্য নয়। তবে আদালত ফিলিস্তিনকে সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সংঘটিত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে বিচারের এখতিয়ার রাখার দাবি করছে। এই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল উভয়েই প্রত্যাখ্যান করেছে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউস আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর করিম খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। তিনি নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছিলেন। বর্তমানে যৌন হয়রানির অভিযোগে তদন্তের মুখে ছুটিতে আছেন করিম খান, যদিও সেই অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।