আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের ছত্তিশগড় হাইকোর্ট সম্প্রতি একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। এই রায়ে প্রমাণিত হয়েছে, ন্যায়বিচার পেতে দেরি হলেও তা কখনো অস্বীকার করা হয় না।
মধ্যপ্রদেশ স্টেট ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের একজন বিলিং অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলেন জগেশ্বর প্রসাদ অবস্থী। ২০০৪ সালে ১০০ রুপি ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে তাঁকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন নিম্ন আদালত। কিন্তু গত ৩৯ বছর ধরে এই মামলার আইনি লড়াই চালিয়ে নিজেকে অবশেষে নির্দোষ প্রমাণ করেছেন জগেশ্বর প্রসাদ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাইকোর্টের বিচারপতি বিভু দত্ত গুরু আগের রায় সম্পূর্ণ বাতিল করে দিয়েছেন। কারণ তিনি এই মামলার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ খুঁজে পাননি।
মামলাটি ছিল ১৯৮৬ সালের। সে সময় অভিযোগ করা হয়েছিল, জগেশ্বর প্রসাদ বকেয়া বিল নিষ্পত্তির জন্য কর্মচারী অশোক কুমার বর্মার কাছে ১০০ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন। হাইকোর্ট দেখতে পান এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা মামলায় গুরুতর ত্রুটি ছিল।
নিম্ন আদালতের রায়ের ত্রুটি হিসেবে হাইকোর্ট বলেছেন, ঘুষ চাওয়ার প্রমাণ দিতে কোনো স্বাধীন সাক্ষী ছিল না। ছায়া সাক্ষী স্বীকার করেছেন, যে তিনি কথোপকথন শোনেননি এবং ঘুষ গ্রহণও দেখেননি। এ ছাড়া সরকারি সাক্ষীরা ২০-২৫ গজ দূরে ছিলেন, ফলে লেনদেন দেখতে পাওয়া তাঁদের পক্ষে অসম্ভব ছিল। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জব্দ করা ঘুষের টাকা একটি ১০০ টাকার নোট ছিল নাকি দুটি ৫০ টাকার নোট ছিল, তা স্পষ্ট ছিল না।
জগেশ্বর কোর্টে জানান, কথিত ওই ঘটনার সময় তাঁর বিল পাসের কোনো ক্ষমতা ছিল না এবং সেই ক্ষমতা তিনি এক মাস পরে পেয়েছিলেন। আদালত এই যুক্তির সঙ্গে একমত হন যে, শুধুমাত্র ঘুষের টাকা পাওয়া গেলেই অপরাধ প্রমাণিত হয় না, এর পেছনে উদ্দেশ্য ও দাবির প্রমাণ থাকা প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্টের বেশ কয়েকটি রায় উল্লেখ করে বিচারক বলেন, এই ফাঁদটি ব্যর্থ হয়েছিল। তাই নিম্ন আদালতের সাজা অগ্রহণযোগ্য।
১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত জগেশ্বর সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন। পরে বদলি হন অন্যত্র। ওই সময়ে অর্ধেক বেতনে চাকরি চালাতে হয়েছে তাঁকে। পদোন্নতি হয়নি, বাড়েনি বেতন। সন্তানদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আর মানসিক চাপে ভুগে স্ত্রী মারা গেছেন। জগেশ্বর প্রসাদ বলেন, ‘আমি সততার জন্য পরিচিত ছিলাম… কিন্তু সবকিছু শেষ হয়ে গেল।’
অবসরের পরও তাঁকে পেনশন দেওয়া হয়নি। জীবিকা নির্বাহের জন্য স্কুলের প্রহরীর কাজ করেছেন, করেছেন নানা খণ্ডকালীন চাকরি। আদালতের তারিখ আর শুনানিতেই গেছে যৌবন ও বার্ধক্য। এখন তিনি আর নতুন করে কোনো মামলা লড়ার শক্তি পান না। শুধু বাড়ি মেরামতের জন্য সামান্য আর্থিক সাহায্য চান সরকারের কাছে।