শনিবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৫, ০২:৪২:১২

র‍্যাঙ্কিংয়ে গতবারের চেয়ে পাঁচ ধাপ পিছিয়েছে ভারতের পাসপোর্ট

 র‍্যাঙ্কিংয়ে গতবারের চেয়ে পাঁচ ধাপ পিছিয়েছে ভারতের পাসপোর্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে ভারতের উত্থান সত্ত্বেও, দেশটির পাসপোর্টের অবস্থান ক্রমাগত দুর্বল হচ্ছে। 

ভিসা-মুক্ত ভ্রমণের ভিত্তিতে তৈরি হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্সে ভারত এ বছর গতবারের চেয়ে পাঁচ ধাপ পিছিয়ে ৮৫তম স্থানে নেমে এসেছে। যেখানে বৈশ্বিক অর্থনীতির পঞ্চম বৃহত্তম শক্তি ভারতের চেয়ে ছোট অর্থনীতির দেশ রুয়ান্ডা (৭৮তম), ঘানা (৭৪তম) এবং আজারবাইজান (৭২তম)-এর অবস্থান ওপরে। খবর বিবিসির। 

হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্সের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, ভারতীয় পাসপোর্টধারীরা এখন ৫৭টি দেশে ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার পান। এই সূচকের শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর (১৯৩টি দেশে ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার), এরপর রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া (১৯০) এবং জাপান (১৮৯)।

র‍্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকার কারণ কী?
গত এক দশকে ভারতীয় পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা-মুক্ত প্রবেশের সুযোগ দেওয়া দেশের সংখ্যা বাড়লেও, ভারতের র‍্যাঙ্কিং কেন নিচে নামছে, সেই প্রশ্ন উঠছে। যেমন—২০১৫ সালে ভিসা-মুক্ত গন্তব্য ছিল ৫২টি, সে বছর র‍্যাঙ্কিং ছিল ৮৫তম। ২০২৫ সালে ভিসা-মুক্ত গন্তব্য বেড়ে ৫৭টি হলেও, র‍্যাঙ্কিং অপরিবর্তিত রয়েছে (৮৫তম)।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর প্রধান কারণ হলো বৈশ্বিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতা। দেশগুলো দ্রুত নিজেদের মধ্যে ভ্রমণ অংশীদারিত্ব বাড়াচ্ছে। হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের ২০২৫ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৬ সালে যেখানে একজন ভ্রমণকারীর জন্য গড়ে ভিসা-মুক্ত গন্তব্য ছিল ৫৮টি, তা ২০২৫ সালে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ১০৯টি হয়েছে। যেমন—চীন গত এক দশকে ভিসা-মুক্ত গন্তব্যের সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৮২ করেছে, ফলে তাদের র‍্যাঙ্কিং ৯৪তম থেকে ৬০তম-এ উন্নীত হয়েছে।

আর্মেনিয়ায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত অচল মালহোত্রা বলেন, পাসপোর্টের শক্তি কোনো দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকদের স্বাগত জানানোর উদারতার ওপরও নির্ভর করে।

মালহোত্রা মনে করিয়ে দেন যে, ১৯৭০-এর দশকে ভারতীয়রা অনেক পশ্চিমা ও ইউরোপীয় দেশে ভিসা-মুক্ত ভ্রমণের সুযোগ পেত। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে খালিস্তান আন্দোলন ও পরবর্তী রাজনৈতিক উত্থান ভারতের ভাবমূর্তিকে দুর্বল করেছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, অনেক দেশ এখন অভিবাসীদের নিয়ে সতর্ক হচ্ছে। ভারত থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ অন্য দেশে অভিবাসন বা ভিসার মেয়াদ শেষেও থেকে যাওয়ায় ভারতের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

ভারতের পাসপোর্ট এখনো নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০২৪ সালে দিল্লি পুলিশ পাসপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগে ২০৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া, ভারতের কষ্টসাধ্য অভিবাসন প্রক্রিয়া এবং ধীরগতিতে ভিসা প্রক্রিয়াকরণের জন্যও দেশটির বদনাম রয়েছে।

মালহোত্রা বলেন, ভারত সম্প্রতি চালু করা ই-পাসপোর্ট (যা বায়োমেট্রিক তথ্য সহ একটি চিপ ব্যবহার করে) পাসপোর্টের নিরাপত্তা এবং অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ করতে সাহায্য করতে পারে। তবে ভারতীয়দের বৈশ্বিক গতিশীলতা বাড়াতে আরও কূটনৈতিক যোগাযোগ এবং ভ্রমণ চুক্তি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই দুর্বল পাসপোর্টের কারণে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য কাগজপত্র বেশি লাগে, ভিসা খরচ বাড়ে, ভ্রমণ সুবিধা কম হয় এবং দীর্ঘ অপেক্ষার সম্মুখীন হতে হয়, যা দেশের সফট পাওয়ার এবং বৈশ্বিক প্রভাবকে প্রতিফলিত করে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রতিবেদন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। বিবিসি এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সূত্র: বিবিসি 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে