আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সুদানের উত্তর করদোফান রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শহর এল-ওবাইদে একটি জানাজায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। সুদানের জাতিসংঘ কার্যালয়ের বরাতে এ খবর জানিয়েছে আল জাজিরা।
প্রতিবেদন মতে, স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে জাতিসংঘের দ্য অফিস সফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) গত মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) জানায়, করদোফান রাজ্যের রাজধানী শহর এল-ওবাইদে হামলা চালানো হয়েছে। তবে কখন এই হামলা চালানো হয় বা এর পেছনে কে বা কারা রয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।
তবে আরব আমিরাত সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এই হামলা চালিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এল-ওবাইদ শহরটি এখনও সুদানি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ওসিএইচএ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘করদোফান অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। আমরা আবারও অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধ করার এবং সকল পক্ষকে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তেল সমৃদ্ধ এই অঞ্চলে গত কয়েকদিনে লড়াই তীব্রতর হয়েছে। গত সপ্তাহে আরএসএফ এল-ওবাইদ শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার (৩৭ মাইল) উত্তরে বারা নামে একটি শহর সেনাবাহিনীর কাছ থেকে দখল করে নেয়। এরপর এই এলাকার হাজার হাজার মানুষ এল-ওবাইদে পালিয়ে এসেছে।
প্রায় একই সময়ে আরএসএফ উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশেরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর থেকে তারা এখানে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে বলে বিভিন্ন রিপোর্টে উঠে আসছে।
এই হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে অধিবাসীরা পালাচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য মতে, আরএসএফ-এর দখলের পর থেকে ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ এল-ফাশের শহর এবং আশেপাশের এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
এদিকে সুদানে গৃহযুদ্ধ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এল-ফাশের শহর দখলের পর মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
দারফুরের এল-ফাশের ও করদোফানের কাদুগলিতে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। অন্যদিকে আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের বিরুদ্ধে গণসমাবেশ ও সর্বাত্মক প্রতিরোধের আহবান জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
সুদানের দারফুরে যুদ্ধের বিভীষিকা ছাড়িয়ে এখন মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এল-ফাশের থেকে পালিয়ে আসা হাজারো মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন উত্তর দারফুরের তাউইলা শহরের একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে। বেঁচে যাওয়া এই মানুষদের চোখে-মুখে এখনও আতংকের ছাপ।
মঙ্গলবার সকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জানায়, সুদানের দুই কোটির বেশি মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে, আর অন্তত ৩ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ চরম অনাহারে মৃত্যুর মুখে রয়েছে। শহরগুলো এখনও অবরুদ্ধ থাকায় সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
এদিন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দোহায় এক সম্মেলনে সতর্ক করে বলেন, সুদানের সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এই দুঃস্বপ্নের অবসান এখনই ঘটাতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, এল-ফাশের ও আশপাশের এলাকা মানবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে লাখো মানুষ আটকা পড়েছে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাহীন অবস্থায়।
গুতেরেসের কথায়, ‘সুদানে আর কোনো অস্ত্র প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। একই সঙ্গে আমাদের বিচার নিশ্চিত করার ব্যবস্থাও করতে হবে, কারণ যে অপরাধগুলো ঘটছে তা এতটাই নৃশংস যে সেগুলোকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।’
এদিকে সুদানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াসিন ইব্রাহিম দেশবাসীকে জনযুদ্ধে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সরকার শান্তি উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে।
আরএসএফকে মদদ দেয়ার অভিযোগের মধ্যেই দোহা সম্মেলনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বলেন, এল-ফাশেরে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ ও বর্বরতায় তারা স্তম্ভিত। তিনি যুদ্ধের অবসান ও রাজনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানান, যাতে সুদানের ঐক্য ও সার্বভৌমত্ব অটুট থাকে।