আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিদেশে পড়াশোনার জন্য জার্মানি এখন শিক্ষার্থীদের শীর্ষ পছন্দের একটি দেশ। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা, তুলনামূলক কম টিউশন ফি, পড়াশোনা শেষে কাজের সুযোগের কারণে দেশটি ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা খণ্ডকালীন কাজ করে নিজের খরচও চালাতে পারেন। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে জানতে হবে জার্মানির আইন, নিয়মকানুন ও সীমাবদ্ধতা।
পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের অনুমতি
জার্মানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সেমিস্টার চলাকালে প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারেন। আর সেমিস্টার বিরতিতে পাবেন পূর্ণকালীন কাজের সুযোগ। অর্থাৎ বছরে একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ১৪০ পূর্ণদিন বা ২৮০ অর্ধদিন কাজ করতে পারেন। এর বেশি কাজ করলে ভিসা বা রেসিডেন্স পারমিট বাতিলের ঝুঁকিও থাকে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ বা গবেষণাভিত্তিক কাজ এই সীমার মধ্যে ধরা হয় না। আবার অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ বা টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করলে বিশেষ অনুমতির ভিত্তিতে নির্ধারিত সময়ের বাইরে কাজ করা যায়।
শুধু জার্মানিতে নয়, বিনামূল্যে পড়া যাবে ইতালিতেওশুধু জার্মানিতে নয়, বিনামূল্যে পড়া যাবে ইতালিতেও
কাজ করতে যা প্রয়োজন
জার্মানিতে কোনো কাজ পেতে শিক্ষার্থীর কিছু আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর, জার্মান ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর। এই নথিগুলো না থাকলে কোনো প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দিতে পারে না।
ন্যূনতম বেতন
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জার্মানিতে ঘণ্টাপ্রতি ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ১২.৮২ ইউরো। মাসে যদি আয় ৫২০ ইউরোর বেশি হয়, তাহলে শিক্ষার্থীকে সামাজিক নিরাপত্তা অবদান দিতে হয়। আর বছরে একবার ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হয়। তবে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর আয় সাধারণত এই সীমার নিচেই থাকে, তাই তাদের কর দিতে হয় না।
কী ধরনের চাকরি মেলে
জার্মানিতে শিক্ষার্থীরা নানা ধরণের পার্ট-টাইম চাকরিতে যুক্ত হতে পারেন। যার মধ্যে থাকতে পারে অন-ক্যাম্পাস চাকুরি। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে লাইব্রেরি সহকারী, প্রশাসনিক সহায়ক, ছাত্রসংস্থার সদস্য এবং রিসার্চ বা টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট।
এছাড়াও অফ-ক্যাম্পাস চাকুরিতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, খুচরা দোকান, বা সুপারমার্কেটে কাজ করতে পারেন। অনেকে কল সেন্টার বা পার্সেল সার্ভিসেও কাজ করেন।
যাদের ভাষাজ্ঞান বা প্রযুক্তিগত দক্ষতা আছে, তারা অনুবাদ, আইটি সাপোর্ট, কনটেন্ট রাইটিং বা ফ্রিল্যান্স ডিজাইনিংয়ের মতো কাজও করতে পারেন।
ইরাসমাস মুন্ডাস জয়েন্ট মাস্টার্স স্কলারশিপ কীভাবে পাবেন, জানেন?ইরাসমাস মুন্ডাস জয়েন্ট মাস্টার্স স্কলারশিপ কীভাবে পাবেন, জানেন?
কোথায় পাবেন চাকরির খোঁজ
জার্মানির বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ক্যারিয়ার সেন্টার বা জব বোর্ড। যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরির তথ্য প্রকাশিত হয়। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম স্টেপস্টোন, ইনডিড, লিংকডইন, জিং এবং গ্লাসডোরে নিয়মিত পার্ট-টাইম চাকরির বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়া স্থানীয় রেস্টুরেন্ট বা দোকানেও সরাসরি আবেদন করা যায়।
জার্মানি এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পান। এতে একদিকে যেমন তাঁদের আর্থিক চাপ কমে, অন্যদিকে পেশাগত দক্ষতা বাড়ে।
জার্মানিতে পড়াশোনা শুধু একাডেমিক শিক্ষা নয়, বরং আত্মনির্ভরতা শেখারও একটি যাত্রা। সুনির্দিষ্ট আইন, শ্রমিক সুরক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়ক অবকাঠামো শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করে নিরাপদ ও ইতিবাচক অভিজ্ঞতার ক্ষেত্র। ফলে জার্মানিতে পড়তে যাওয়া মানে কেবল ডিগ্রি অর্জন নয়, নিজেকে গড়ে তোলারও এক বড় সুযোগ।