আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে এমন বিদেশিদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ফ্যাক্টচেকিং, কনটেন্ট মডারেশন, ভুল তথ্য প্রতিরোধ বা অনলাইন নিরাপত্তায় কাজ করেছেন এমন ব্যক্তিরা নতুন এই নীতির আওতায় পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ নির্দেশনার বিষয়ে প্রথমে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং পরে এনপিআর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসগুলোকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ‘সুরক্ষিত মতপ্রকাশ’ বা ফ্রি স্পিচ দমনকারী বা তাতে জড়িত এমন ব্যক্তিদের ভিসা আবেদন অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
চিঠিতে ভিসা আবেদনকারীদের অতিরিক্ত যাচাই-বাছাইয়ের কথাও বলা হয়েছে। বিশেষ করে যাদের ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তি, কনটেন্ট মডারেশন, ফ্যাক্টচেকিং, ট্রাস্ট অ্যান্ড সেফটি বা অনলাইন নিরাপত্তার মতো কাজে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যাবে। দূতাবাস কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আবেদনকারীর লিংকডইন প্রোফাইলসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের কোনো লেখা বা প্রতিবেদন থাকলে সে সম্পর্কেও খোঁজ নিতে হবে।
যদি কোনো তথ্য পাওয়া যায় যে আবেদনকারী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মতো কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন, তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তাকে ‘ভিসার জন্য অযোগ্য’ ঘোষণা করবেন।
নতুন এই নির্দেশনা প্রথমে এইচ-১বি ভিসা আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। সাধারণত প্রযুক্তি খাতসহ উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশিদের এই ভিসা দেওয়া হয়। যদিও পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, শেষ পর্যন্ত এটি সব ধরনের ভিসার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসে আমাদের মুখ বন্ধ করার মতো কাজ করবে এমন কোনো কর্মকাণ্ড আমরা সমর্থন করি না। প্রেসিডেন্ট নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্যায় সেন্সরশিপের শিকার হয়েছেন। তিনি চান না, আমেরিকার নাগরিকেরা এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হোক।
এর আগে গত মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছিলেন, যারা আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাস্ট অ্যান্ড সেফটির মতো কাজকে ‘সেন্সরশিপ’ হিসেবে দেখানো হলে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। পার্টনারহিরো নামের ব্যবসা-প্রক্রিয়া আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্ট অ্যান্ড সেফটি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যালিস গোগুয়েন হান্সবার্গার বলেন, শিশু সুরক্ষা, অনলাইন প্রতারণা, জালিয়াতি, যৌন অপরাধ ঠেকানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ ট্রাস্ট অ্যান্ড সেফটির আওতায় পড়ে। এগুলোকে সেন্সরশিপের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা উদ্বেগজনক।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার পর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপর থেকেই প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন তিনি। নতুন এই ভিসা নিষেধাজ্ঞাকেও অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অভিবাসন সীমিত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখছেন। সূত্র: রয়টার্স, এনপিআর, দ্য গার্ডিয়ান