আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাতারাতি ‘নায়ক’ উপাধি পেয়েছেন আহমেদ আল আহমেদ। তিনি যে সাহসিকতায় অস্ত্রধারীকে জাপটে ধরে গুলি করা থামিয়েছেন তাতে তাকে বীর বললে কমই বলা হয়।
রোববার অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বন্ডাই বিচে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে হামলাকারী পিতা-পুত্র হত্যা করে কমপক্ষে ১৫ জনকে। এ সময় অসীম সাহস নিয়ে পেছন থেকে গিয়ে হামলাকারীকে জাপটে ধরেন আহমেদ। তিনি সঙ্গে সঙ্গে হামলাকারীর বন্দুক নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন। এতে রক্ষা পায় অনেক মানুষ। এ জন্য অস্ট্রেলিয়া জুড়ে প্রশংসায় ভাসছেন আহমেদ। এ খবর দিয়ে অনলাইন এনডিটিভি বলছে, সিডনির বন্ডাই বিচে
গুলিবর্ষণের সময় তার দ্রুত সিদ্ধান্ত ও সাহসিকতা বহু মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, নিরস্ত্র ওই ব্যক্তি গুলি চলার মধ্যেই এক বন্দুকধারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং তাকে কাবু করে ফেলেন।
মাত্র ১৫ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, পার্ক করা গাড়ির আড়ালে লুকিয়ে থাকা লোকটি হঠাৎ পেছন দিক থেকে বন্দুকধারীর দিকে দৌড়ে যান। তিনি বন্দুকধারীর গলা চেপে ধরেন, তার হাত থেকে রাইফেল কেড়ে নেন এবং তাকে মাটিতে ফেলে দেন।
এরপর তিনি অস্ত্রটি উল্টো করে বন্দুকধারীর দিকেই তাক করে ধরেন। ওই সাহসী ব্যক্তির নাম আহমেদ আল আহমেদ। বয়স ৪৩ বছর। পেশায় তিনি একজন ফল বিক্রেতা। হামলার সময় তিনি নিজেও গুলিবিদ্ধ হন। দু’টি গুলি তার শরীরে লাগে।
একটি টুইট পোস্টে বলা হয়েছে, এখানে দেখা যাচ্ছে এক সাহসী মানুষ একাই বন্দুকধারীকে ধরাশায়ী করছেন। অবিশ্বাস্য দৃশ্য। সেভেন নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মুস্তাফা নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি আহমেদের চাচাতো ভাই। তিনি বলেন, তিনি (আহমেদ) হাসপাতালে আছেন। ভেতরে ঠিক কী অবস্থা, আমরা পুরোপুরি জানি না।
তবে আমরা আশা করছি, তিনি ভালো থাকবেন। তিনি শতভাগ একজন নায়ক। আহমেদের ওই রাতেই অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি কেবল ওই এলাকা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। পরিস্থিতি বুঝে তিনি নিজ উদ্যোগেই হস্তক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেন। অনলাইনে তার সাহসিকতার জন্য ব্যাপক প্রশংসা করা হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ নিজেও তাকে ‘নায়ক’ বলে অভিহিত করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, এই হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হন। পরে ঘটনাস্থলেই এক বন্দুকধারীর মৃত্যু হওয়ায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬। আহত অবস্থায় ২৯ জনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, হামলাকারীরা পিতা ও পুত্র। পিতার বয়স ৫০ বছর। তার নাম সাজিদ আকরাম। তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। ছেলে ২৪ বছর বয়সী নাভিদ আকরাম। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।
নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ জানিয়েছে, হানুক্কার প্রথম দিন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শত শত মানুষ জড়ো হন। এই হামলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে একজন ইসরাইলি নাগরিকও রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, হামলার পরপরই জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। তিনি বলেন, হানুক্কা বাই দ্য সি অনুষ্ঠানে বন্ডাই বিচে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এটি ইহুদি অস্ট্রেলীয়দের ওপর লক্ষ্য করে চালানো আক্রমণ। আনন্দ ও ধর্মীয় উদ্যাপনের দিনে এটি ছিল চরম অশুভ কাজ- ইহুদিবিদ্বেষ, সন্ত্রাসবাদ, যা আমাদের জাতির হৃদয়ে আঘাত করেছে।
তিনি আরও বলেন, ইহুদি অস্ট্রেলীয়দের ওপর হামলা মানে প্রতিটি অস্ট্রেলীয়র ওপর হামলা। আমাদের দেশে ঘৃণা, সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের কোনো জায়গা নেই। আমরা একে নির্মূল করবো।