আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম আবারও রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ৫০০ ডলারের সীমা ছুঁইছুঁই করছে। মার্কিন-ভেনিজুয়েলা উত্তেজনার জেরে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে মূল্যবান এই ধাতুর দিকে ঝুঁকছেন। একই সঙ্গে রুপার দামও পৌঁছেছে নতুন উচ্চতায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৪ হাজার ৪৮৬ দশমিক ৪১ ডলারে দাঁড়িয়েছে, সেশনের শুরুতে যা রেকর্ড ৪ হাজার ৪৯৭ দশমিক ৫৫ ডলারে পৌঁছেছিল। ফেব্রুয়ারি ডেলিভারির জন্য মার্কিন স্বর্ণের ফিউচার ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৪ হাজার ৫১৯ দশমিক ৭০ ডলারে লেনদেন হয়েছে।
কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, ‘মার্কিন-ভেনিজুয়েলা উত্তেজনা বিনিয়োগকারীদের কাছে অনিশ্চয়তার বিপরীতে সুরক্ষা হিসেবে স্বর্ণকে আবারও নজরে এনেছে। মার্কিন সুদের হার আরও কমতে পারে-এমন প্রত্যাশার মধ্যেই চলতি সপ্তাহে স্বর্ণের দামে এই উত্থান দেখা যাচ্ছে।
ওয়াটারার আরও বলেন, বিনিয়োগকারীরা মূল্যবান ধাতুকে পোর্টফোলিও বৈচিত্র্য আনার কার্যকর উপায় এবং মূল্য সংরক্ষণের মাধ্যম হিসেবে দেখছেন। তবে স্বর্ণ ও রুপার দামের ঊর্ধ্বগতি এখনও চূড়ায় পৌঁছায়নি।
এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ভেনিজুয়েলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার আওতায় সব তেল ট্যাঙ্কারকে ‘অবরোধ’-এর ঘোষণা দেন। এতে করে বৈশ্বিক বাজারে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।
স্বর্ণের দামে সমর্থন জুগিয়েছে আরেকটি খবরও। ট্রাম্প জানুয়ারির শুরুতে নতুন ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করতে পারেন বলে আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে বাজার আগামী বছরের জন্য দুটি মার্কিন সুদের হার কমানোর সম্ভাবনাও মূল্যায়ন করছে।
ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত বুলিয়নের দাম চলতি বছর ৭০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি, সুদের হার কমানো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রয়, ডলারের দুর্বলতা এবং এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে নতুন বিনিয়োগ প্রবাহ-সব মিলিয়ে শক্ত ভিত্তি পেয়েছে স্বর্ণের বাজার।
নাগার বাজার বিশ্লেষক ফ্র্যাঙ্ক ওয়ালবাউম বলেন, বছরের শেষের দিকে বাজারে তারল্য কমে গেলে দামের ওঠানামা আরও তীব্র হতে পারে। এছাড়া ভূ-রাজনৈতিক খবর ও সুদের হার নিয়ে প্রত্যাশার পরিবর্তনের প্রতি স্বর্ণের বাজার বিশেষভাবে সংবেদনশীল থাকতে পারে।
এদিকে স্পট মার্কেটে রুপার দাম রেকর্ড ৬৯ দশমিক ৯৮ ডলার ছুঁয়েছে। চলতি বছরে রুপার দাম বেড়েছে ১৪১ শতাংশের বেশি। সরবরাহ ঘাটতি, শিল্প খাতে চাহিদা এবং বিনিয়োগ প্রবাহের কারণে রুপার বৃদ্ধির হার স্বর্ণকেও ছাড়িয়ে গেছে।
পেপারস্টোনের সিনিয়র কৌশলবিদ মাইকেল ব্রাউন বলেন, উৎসবের মৌসুমে তারল্য কমে যাওয়ায় বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা যেতে পারে। তবে ভলিউম বাড়লে আবারও ঊর্ধ্বগতি শুরু হবে বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, আগামী বছর স্বর্ণের জন্য ৫ হাজার ডলার এবং দীর্ঘমেয়াদে রুপার জন্য ৭৫ ডলার একটি স্বাভাবিক লক্ষ্য হতে পারে।
অন্যদিকে স্পট প্লাটিনামের দাম ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ২ হাজার ১৪৫ দশমিক ১০ ডলারে পৌঁছেছে, যা ১৭ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্যালাডিয়ামের দামও ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে তিন বছরের সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮১৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে।