আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্ববাজারে একের পর এক রেকর্ড ভাঙছে মূল্যবান ধাতুর দাম। সোনা, রুপা ও প্লাটিনামের মূল্য ইতোমধ্যে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বছরের শেষ প্রান্তিকে বাজারে তারল্য সংকট, অনুমানভিত্তিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমার প্রত্যাশা এবং চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রভাবেই এই মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর রয়টার্স।
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রথমবারের মতো রুপার দাম আউন্সপ্রতি ৭৭ ডলারের ঘর ছাড়িয়েছে। একই সঙ্গে সোনা ও প্লাটিনামও পৌঁছেছে সর্বকালের সর্বোচ্চ দামে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমাতে পারে এমন প্রত্যাশা এবং বৈশ্বিক অস্থিরতায় নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে মূল্যবান ধাতুর চাহিদা বেড়েছে।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) স্পট রুপার দাম ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ৭৭ দশমিক ৩০ ডলারে দাঁড়ায়। দিনের একপর্যায়ে দাম ওঠে ৭৭ দশমিক ৪০ ডলারে, যা নতুন রেকর্ড। চলতি বছরে রুপার দাম বেড়েছে প্রায় ১৬৭ শতাংশ। সরবরাহ ঘাটতি, যুক্তরাষ্ট্রে ‘ক্রিটিক্যাল মিনারেল’ হিসেবে স্বীকৃতি এবং শক্তিশালী বিনিয়োগ প্রবাহ এই ঊর্ধ্বগতির প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে স্পট সোনার দাম ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৫৩১ ডলার ছাড়িয়েছে। লেনদেনের একপর্যায়ে সোনার দাম ৪ হাজার ৫৪৯ ডলারে পৌঁছে নতুন রেকর্ড গড়ে। ফেব্রুয়ারিতে ডেলিভারির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের গোল্ড ফিউচার্সও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৫২ ডলারে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালে ফেডারেল রিজার্ভ দুই দফা সুদের হার কমাতে পারে এমন প্রত্যাশা মূল্যবান ধাতুর বাজারে গতি বাড়াচ্ছে। জেনার মেটালসের সিনিয়র স্ট্র্যাটেজিস্ট পিটার গ্রান্ট বলেন, ডলারের দুর্বলতা ও ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাজারে অস্থিরতা তৈরি করলেও সামগ্রিক প্রবণতা এখনো শক্তিশালী রয়েছে।
ডলার সূচক সাপ্তাহিকভাবে নিম্নমুখী থাকায় বিদেশি ক্রেতাদের কাছে ডলারে মূল্য নির্ধারিত সোনার আকর্ষণ বেড়েছে। পাশাপাশি নাইজেরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানসহ বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাও নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা জোরদার করেছে।
অন্যদিকে প্লাটিনামের দাম ৯ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৪৩৭ ডলারে উঠেছে, যা নতুন রেকর্ডের কাছাকাছি। প্যালাডিয়ামের দামও ১৪ শতাংশ বেড়ে তিন বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সব মিলিয়ে চলতি সপ্তাহে মূল্যবান ধাতুর বাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী, যার মধ্যে প্লাটিনামের সাপ্তাহিক উত্থান ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী।
এদিকে দেশের বাজারে প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট সোনার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৮৩ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ লাখ ১১ হাজার ৯৯৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৮১ হাজার ৭২৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৩৯৯ টাকা।