আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সৌদি আরব দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে- আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আগেই হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল। সেই পূর্ভাবাস সত্য কি মিথ্যা তা স্পষ্ট না হলেও সৌদি অর্থনীতি যে মুখ থুবরে পড়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ববাজারে তেলের অব্যাহত দরপতনে বাজেট ঘাটতির মুখে থাকা সৌদি আরব ৬০০-৮০০ কোটি ডলার ঋণ নিতে বিদেশি ব্যাংকের দারস্থ হয়েছে।
এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে এটিই হবে তেলনির্ভর দেশটির প্রথমবারের মতো উল্লেখযোগ্য হারে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার ঘটনা।
পাঁচ বছর মেয়াদী ওই ঋণ নেওয়ার জন্য রিয়াদ ইতোমধ্যে দাতাদের কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করেছে, যাতে প্রয়োজনে অর্থের পরিমাণ বাড়ানো যায় এমন শর্তও থাকবে।
রাজতান্ত্রিক কঠোর শাসনে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির গোপনীয় এই খবরটি প্রকাশকারী সূত্রের নাম জানায়নি রয়টার্স। বিষয়টি নিয়ে সৌদি অর্থ মন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগাযোগ করা হলেও এ বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
গত কয়েক বছর ধরে তেলের দর পড়তে পড়তে ৩০ ডলারের নিচে নেমে এসেছিল। সৌদি আরবের আয়ের ৯০ শতাংশই আসে তেল রপ্তানি থেকে। ফলে মন্দার বাজারে অভ্যন্তরীণ ব্যয় মেটাতে গিয়ে দেশটির রিজার্ভ দ্রুত উবে যাচ্ছে।
গত বছর সৌদি আরবের বাজেট ঘাটতি ১০,০০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি পৌঁছায়। সরকার বর্তমানে দেশটির বৈদেশিক সম্পদের বিপুল ভাণ্ডার খরচ করে এবং অভ্যন্তরীণ বন্ড ইস্যু করে এই ঘাটতি মেটাচ্ছে।
কিন্তু যে হারে এই বৈদেশিক সম্পদ ব্যয় হচ্ছে তাতে কয়েক বছরের মধ্যেই তা ফুরিয়ে যেতে পারে। আর বন্ড ইস্যুর কারণে ব্যাংক ব্যবস্থায় ইতোমধ্যে তারল্য সঙ্কট তৈরি করেছে।
দেশটির বৈদেশিক সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৬০,০০০ কোটি ডলারের মতো। অন্যদিকে সরকারি ঋণের পরিমাণ সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম।
নতুন ঋণের বিষয়ে লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক সংস্থা ‘ভেরাস পার্টনারস’ সৌদি সরকারের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে।
সৌদি অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক গ্রুপে ঋণ প্রস্তাব পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছে সিটি গ্রুপের সাবেক কর্মকর্তা মার্ক অ্যাপলিন ও অ্যান্ড্রু এলিয়ট প্রতিষ্ঠিত এই ফার্ম।
তবে এ বিষয়ে ‘ভেরাস পার্টনারস’র এর কোনো মুখপাত্রের মন্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করেছিল, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ক্রমাগত কমতে থাকায় মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ সৌদি আরব পাঁচ বছরের মধ্যে দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে।
আইএমএফের ‘মিডল ইস্ট ইকোনমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে বলে, ওই বছরে সৌদি আরবের বাজেট ঘাটতি ২১.৬ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। আর পরের বছর (চলতি বছর) এর পরিমাণ হতে পারে ১৯.৪ শতাংশ।
এর অর্থ দাঁড়ায়, ব্যয় নির্বাহের জন্য আরো বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে সৌদি আরবের। অথচ দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে ৬৫৪. ৫ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে।
তেলের দাম কমতে শুরু করার পর থেকে সৌদি আরবের রিজার্ভের পরিমাণ ২০১৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৭৩ বিলিয়ন ডলার কমেছে বলে কাতারভিত্তিক আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল।
আইএমএফের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক মাসুদ আহমেদ গত বছর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘তেলের দাম কমায় এ অঞ্চলের রপ্তানিকারক দেশগুলোকে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। কেবল এবছরই তাদের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৩৬০ বিলিয়ন ডলার।’
ধাক্কা সামলাতে সৌদি কর্তৃপক্ষ গত বছর থেকেই সংকোচনমূলক বিভিন্ন পরিকল্পনা নিতে শুরু করে। বিদেশি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তহবিল হিসাবে দেওয়া ৭০ বিলিয়ন ডলার প্রত্যাহার করে নেয় সৌদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেবল সৌদি আরব নয়, প্রতিবেশী তেলসমৃদ্ধ অন্য দেশগুলোকেও পরিস্থিতি সামাল দিতে বড় ধরনের ব্যয় সঙ্কোচনের পথে হাঁটার পথ ধরে।
১০ মার্চ, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস