শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০১৬, ০২:৫৯:৫২

স্লোগানে স্লোগানে মুখর ধর্মশালার রাস্তা

স্লোগানে স্লোগানে মুখর ধর্মশালার রাস্তা

ইশতিয়াক পারভেজ, ভারত থেকে : হিমালয়ের শীতলতা যেন ধর্মশালার মানুষকে করে তুলেছে আরও শান্ত। চারদিকে তাকালেই দেখা যায় গালভরা হাসিমুখ।  নেই কোনো  শোরগোল, হাঙ্গামা। কিন্তু গতকাল সকালে হোটেল থেকে বের হতেই শোনা গেল স্লোগানে স্লোগানে মুখর ধর্মশালার রাস্তা।

শ’দুয়েক মোটরসাইকেল, ভ্যান গাড়িতে পতাকা উড়িয়ে স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যাচ্ছে মিছিল। তাদের পিছনেই পাহাড়ি রাস্তার ঢাল বেয়ে ছুটছেন বৃদ্ধ, তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ, শিশু, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও ভিক্ষুসহ হাজার হাজার মানুষ।

এগিয়ে যেতে স্পষ্ট হলো স্লোগানগুলো। ‘১৯৫৯ ইয়াদ কর ইয়াদ কর’ ‘চীন সরকার  নেহি চলেগি অত্যাচার’ ‘হামারি তিব্বত আজাদ কর আজাদ কর।’ ধীরে ধীরে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠলো। স্বাধীনতার জন্য দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা  তিব্বতের মানুষের এই আন্দোলন। প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে দালাই লামার মন্দির থেকে ছুটে আসছে মানুষের ঢল।

১৯৭১ এর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখা হয়নি। কিন্তু ছবি দেখে বড়দের কাছে শুনেছি সেই সময় যশোহর রোড ধরে কিভাবে স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশের মানুষ ছুটে পালিয়ে ছিল ভারতের দিকে। কিন্তু কেন তিব্বতের স্বাধীনতার জন্য মিছিল ভারতে! কারণ চীনের সরকারের কাছ থেকে স্বাধীনতা চেয়ে পালিয়ে ভারতে এসেছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী দালাই লামা। যার মন্দিরকে কেন্দ্র করে ধর্মশালাতে গড়ে উঠেছে এক খণ্ড তিব্বত। এখানেই এখন তিব্বতের অস্থায়ী রাজধানী।   
তিব্বতির এই অনাহুত বসতি বেশ ভালোভাবেই মেনে নিয়েছেন ধর্মশালাবাসী। সেখানকার কোতয়ালী বাজারের বেশ কয়জন দোকানদার তাদের দাবির প্রতি সম্মান জানালেন। বলেন, ‘আমরা ওদের ভালোবাসি, মায়াও হয় দেশের স্বাধীনতার জন্য ওরা কত কষ্ট করছে। এখন যেভাবে পাহাড়ের উপর থেকে ওরা নিচে নামছে। কিন্তু ওঠার সময় এই ভাবে  হেঁটে উঠবে। এত উঁচু পাহাড়ি এলাকায় হেঁটে ওঠার যে কষ্ট তা মিলিয়ে যাবে যদি তিব্বত স্বাধীন হয়।’

ফেরার পথে দেখা গেল মিছিল শেষে ফিরে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। চলে যাবেন তাদের আশ্রয়স্থল ম্যাকলয়েডগঞ্জে। ছোট ছোট শিশুরা ভীষণ কাঁদছিল। মায়েরা হয়তো তাদের সান্ত্বনা দিতে বলছিলেন, ‘স্বাধীন হলে দেশে ফিরে যাবো। আর কষ্ট থাকবে না’।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আগের চিত্রের সঙ্গে এখানে আরও একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ধর্মশালাতে তিব্বতের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে রীতিমতো সরকার গঠন করে। যেমনটি করেছিল ১৯৭১ সালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার। ১৯৯১ সালে তিব্বতের এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এখানে নিয়ম করে নির্বাচনও হয় প্রতিবছর।

আগামী ২০শে মার্চই তাদের নির্বাচন। শুরু থেকেই এখানে আন্দোলন চলছে অহিংসভাবে। কিন্তু ধীরে ধীরে নিজেদের প্রতিবাদ স্বাধীনতার দাবি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এখন অনেক তরুণই নিজ গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেন। সম্প্রতি ম্যাকলয়েডগঞ্জে এমন ঘটনায় আলোড়িত হয় বিশ্ব মিডিয়া। বর্তমানে তিব্বতের স্বাধীনতাকামীদের অন্যতম নেতা দালাই লামা আছেন যুক্তরাষ্ট্র সফরে। কিন্তু তিনি দেশে না থাকলেও তার অনুসারীরা এক দণ্ডও চুপ নেই নিজেদের স্বাধীনতার অধিকার আদায় করে নিতে।

প্রতিবছরই বিশেষ বিশেষ দিনে হিমালয়ের কোল থেকে পতাকা হাতে স্লোগান দিতে দিতে ছুটে আসে হাজার হাজার মানুষ। যা দেখে ধর্মশালাবাসীও প্রার্থনা করেন-‘ ওদের এই কষ্ট শেষ করো, তাদের স্বাধীনতা দাও, মুক্তি দাও।’ -এম.জমিন

১১ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে