সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০১৬, ০৩:৫৫:০০

আইএসের সমর্থক বলে বাঙালি সাংবাদিককে মার ট্রাম্প সমর্থকদের

আইএসের সমর্থক বলে বাঙালি সাংবাদিককে মার ট্রাম্প সমর্থকদের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : খেল দেখাচ্ছেন বটে আমেরিকায় রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইস্পাহানি, ল্যাটিনো, মুসলিমদের বিরুদ্ধে উত্তেজক, বিদ্বেষপূর্ণ বিবৃতি দেওয়ার পর স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের দেশে এবার সাংবাদিককে পিটিয়ে দিলেন তার সমর্থকরা।

শিকাগোয় তীব্র প্রতিবাদ এবং গোলমালের জেরে বাতিল করতে হয়েছে ট্রাম্পের সভা, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে অভূতপূর্ব। সেই প্রতিবাদের ছবিই তুলছিলেন আমেরিকার সিবিএস নিউজের সাংবাদিক, ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাঙালী সোপান দেব। ‘‌তুই আইএসের সমর্থক নাকি রে?‌’‌–‌ বলে তাকে ধরে বেদম মারতে শুরু করে ট্রাম্প সমর্থকরা।

শেষে পুলিশ এসে গ্রেপ্তার করে ট্রাম্প সমর্থকদের হাত থেকে তাকে উদ্ধার করে। কিছুক্ষণের জন্য তাকে আটকও করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করার সময়ে সোপান বাধা দিয়েছিলেন বলেই নাকি তাকে আটক করা হয়েছে, এমনই সাফাই দিয়েছে স্থানীয় পুলিশ। কিন্তু সিবিএসের তরফে এক বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, সোপান তখন গোলমালে আহত এক ব্যক্তির ছবি তুলছিলেন। সেই ব্যক্তির মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল। হঠাৎই ঝাঁপিয়ে পড়ে ট্রাম্প সমর্থকরা। গ্রেপ্তারির সময়ে সোপান কোনও বাধা দেননি।

সাংবাদিকতার জন্য আমেরিকায় এডওয়ার্ড ম্যুরো পুরস্কার পেয়েছেন সোপান। টেলিভিশনে উৎকর্ষের জন্য এমি পুরস্কারের জন্যও তার নাম মনোনীত হয়েছিল। সিবিএস নিউজের হয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কভার করছেন।

ঘটনার পর সোপান টুইটারে জানিয়েছেন, এ যা হচ্ছে তা আমি জীবনে দেখিনি। চারধারেই এখন আইসিসের ভূত দেখছেন ট্রাম্প এবং তার সমর্থকরা। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে আইএসের সমর্থক বলে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছেন ট্রাম্প। পুলিস কোনও প্রতিবাদীকে ছেড়ে দিলে বলছেন, ওকে ছেড়ে দিল কেন?‌ ও তো মনে হয় আইসিস সমর্থক। ওর জেলে থাকা উচিত। আমাদের আদালতকে আরও শক্ত, আরও স্মার্ট হতে হবে!‌

এর আগেও নেভাদা রাজ্যের রেনোতে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের ছবি তোলার সময়ে এক ট্রাম্প সমর্থক সোপান দেবকে বলেছিলেন, কি, আইএসের জন্য ছবি তুলছো নাকি?‌ ট্রাম্পের সভায় এখন সাংবাদিকদের কোণঠাসা করা শুরু হয়েছে। কিছুকাল আগে এক মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থা করেছেন তার নিরাপত্তারক্ষীরা। সভায় বিদেশি সাংবাদিকদের তো থাকতেই দেওয়া হচ্ছে না।

আমেরিকার সাংবাদিকদেরও বন্দী করে রাখা হচ্ছে একটি ঘেরাটোপের মধ্যে। তার বাইরে যাওয়ার অনুমতি মিলছে না। ঘেরাটোপের বাইরে গিয়ে সমর্থক বা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেই রে রে করে আসছে পোষা নিরাপত্তাকর্মীরা। অবশ্য কারণও আছে। সেভাবে তিনি ইস্পাহানি, ল্যাটিনো বা মুসলিমদের বিরুদ্ধে উত্তেজক বিবৃতি দিয়েছেন, তার শোধ নিতে ট্রাম্পকে ছায়ার মতো অনুসরণ করছেন প্রতিবাদীরা।

এটাও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে অভূতপূর্ব। প্রতিবাদীদের ঠেকাতেই সমর্থক, নিরাপত্তারক্ষীদের এমন বাড়াবাড়ি। অবস্থা দেখে বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের তরফে এমন বিবৃতিও অভূতপূর্ব। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা সর্বসম্মতিক্রমে ২০১৬ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এমন হিংসার নিন্দা করছি। দেশের সর্বোচ্চ পদের অভিলাষীরা নিশ্চয়ই বুঝবেন যে এমন ঘটনা কখনই মানা যায় না। একটি উন্নতিশীল গণতন্ত্রের জন্য রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিকদের মধ্যে সুস্থ, সুন্দর আদান-‌প্রদান থাকাটা বিশেষ জরুরি।

ট্রাম্পকে ধমক দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। এই নির্বাচনে ট্রাম্প স্লোগান দিয়েছেন, আমেরিকাকে আবার মহান করো। ‘‌বিভাজনের রাজনীতির’‌ জন্য ট্রাম্পের এই স্লোগানকে ব্যঙ্গ করে ওবামা বলেছেন, আমরা এখনই মহান আছি। চেষ্টা করতে হবে দেশটাকে আরও ভাল করার। কিন্তু সেটা নিশ্চই কিছু লোকের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে নয়। জাতি আর ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন তৈরি করে নয়। আর অবশ্যই আরেকজন আমেরিকানকে হিংস্র আক্রমণ করে নয়!‌‌
১৩ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে