সোমবার, ০৪ এপ্রিল, ২০১৬, ০৯:৩৮:৪৫

ক্যান্সারের রোগীদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে তিনি

ক্যান্সারের রোগীদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে তিনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মরিশেট্টি কুমার, পরচুলা তৈরির কারিগর হিসেবেই যার পরিচিতি। ভারতের ব্যাঙ্গালোরে তাঁর দোকান থেকে তৈরি শত শত পরচুলা পড়ে ক্যান্সার রোগীদের জীবনে যেন নতুন প্রাণের সূচনা করছে।

তিনি বলেছেন, কোনও কাজই ছোট বা বড় নয়। কেউ হয়তো ভাবতে পারে যে তারা যেটা করছে সেটা ক্ষুদ্র বা অর্থহীন। কিন্তু আমি আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি হাসিমুখে-পরচুলা তৈরি করাই আমার কাজ।

মরিশেট্টি কুমার বলেন, যেসব মানুষ রোগে ভুগে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে, তারা এই পরচুলা পড়ে খুশী হচ্ছে-তাদের মনে আশার সঞ্চার জাগছে-তাদের জন্য এতুটুক করতে পারাটা ভাগ্যের ব্যাপার। সেসব রোগীদের জন্য আমি সামান্য কিছু করতে পারছি।

একটি কৃষক পরিবারে জন্ম নেন কুমার। কিন্তু তরুণ বয়সেই ঘর ছেড়ে পালান তিনি- লক্ষ্য ছিল কান্নাডা ভাষার চলচ্চিত্র তৈরিতে যে দল কাজ করছে তাদের সাথে কাজ করবেন তিনি।

সেই দলের সাথে কাজও করেছেন দীর্ঘকাল। চলচ্চিত্র ইউনিটের সাথে দীর্ঘ কাজের অভিজ্ঞতায় তিনি শিখেছে কিভাবে মানুষের ফেলে দেয়া চুল দিয়ে বিভিন্নভাবে পরচুলা তৈরি করা যায়।

পরচুলা তৈরির কাজটি অনেক কষ্টকর বলা যায়-সাধারণ চুলগুলো প্রতিটিই হাতে বুনতে হয়। যদিও তিনি যখন এ কাজটি শেখেন তখন ক্যান্সার বা কেমোথেরাপি এবং এ কারণে রোগীদের চুল পড়ে যেতে পারে সে সম্পর্কে কিছুই জানতেননা।

মরিশেট্টি কুমারের কাছে একদিন একজন কাস্টমার এলেন যিনি ক্যান্সারের কারণে তার সব চুল পড়ে যাওয়া আক্ষেপ করছিলেন। আর সে সময়েই এই রোগ আর রোগের প্রভাবে চুল পড়ে যাবার বিষয়ে জানলেন তিনি।

মরিশেট্টি কুমার বলেন, আমার ওই কাস্টমারের মাথায় পরচুলা পড়িয়ে দেবার পর তার চোখের যে উজ্জ্বল দৃষ্টি দেখতে পেরেছিলাম সেটাই আমার জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসলো।

টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র তারকাদের জন্য পরচুলা তৈরির কাজ করতেন মি: কুমার, কিন্তু তা থেকে সরে এসে তিনি শুধুমাত্র ক্যান্সার রোগীদের জন্য পরচুলা তৈরি শুরু করে দিলেন।

পরচুলা তৈরির জন্য তিরুপাটি শহর থেকে সাধারণ চুল কিনেন কুমার। কারণ ওই জায়গাটি মাথার চুল ফেলার জন্য মঙ্গলজনক বলা হয় বলে তীর্থযাত্রীরা সেখানে তাদের মাথার চুল ফেলেন। তার কাজে সাহায্য করেন তাঁর স্ত্রী ললিতা মরিশেট্টি।

ললিতা মরিশেট্টি মূলত কিনে আনা চুলগুলো পরিস্কার করে সেগুলো ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে তারপর রোদে শুকান। তারপর চুলের সেই বান্ডিল নিয়ে সেগুলো বাঁধতে বসেন।

স্বামী-স্ত্রীর যৌথ চেষ্টায় একটি দোকানও খুলেছেন তারা। এই পর্যন্ত ২০ হাজারেরও বেশি পরচুলা তৈরি করেছেন শুধুমাত্র ক্যান্সার রোগীদের জন্য। এই পরচুলাগুলোর দামও খুব কম নির্ধারণ করেছেন মরিশেট্টি কুমার।

তিনি বলেন, আমি খুব বেশি দাম পাইনা, কিন্তু এই কাজ করে আমি যে মানসিক শান্তি পাই তা ব্যাপক-এককথায় বুঝানোর মতো নয়। -বিবিসি
০৪ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে