আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তিনি বলতেন, যা কাজ করে দিয়েছি, চারশো বছরেও কেউ করতে পারবে না! সেই তিনিই এখন দোষ-ত্রুটির জন্য করজোড়ে ক্ষমা চাইছেন পশ্চিমবঙ্গ জনতার কাছে! দিনকয়েক আগে কলকাতায় উড়ালসেতু ভেঙে প্রাণহানির পরেও যিনি পুরানো বাম আমলের দিকে আঙুল তুলেছেন, তিনিই এখন বলছেন সব দোষ তার!
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে প্রথম পর্বের ভোট মিটতে না মিটতেই সুর আমূল বদলে গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী! প্রবল আক্রমণাত্মক মেজাজে সকলের আগে প্রচার শুরু করেছিলেন যিনি, লাগাতার ঘটনার ঝাপ্টায় তার গলাতেই এখন ক্ষমাপ্রার্থনা! পাঁচ বছর আগে দুঃখপ্রকাশের সুর শুনে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে কটাক্ষ করতেন তৃণমূলের নেতারা। আর এখন তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য শুনে মজা পাচ্ছে সিপিএম!
নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে আসানসোলের কুলটিতে বুধবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ক্ষমা করবেন! দোষ-ত্রুটি সবই আমার। দোষ-ত্রুটি যদি হয়, যদি কখনও ভুল বোঝেন, তা হলে আমার উপরে অভিমান করবেন। মান করবেন! কিন্তু দয়া করে আপনাদের আশীর্বাদ, শুভেচ্ছা, দোয়া তৃণমূলের মাথা থেকে সরিয়ে নেবেন না! তা হলে আমার পক্ষে পথ চলা মুশকিল হয়ে যাবে!’’ বর্ধমান জেলাতেই অন্য সভায় তিনি আরও বলেছেন, ‘‘ভুল করলে মানুষকে সংশোধন করার সুযোগ দিতে হয়। সব সময় বলবো না, আমি সবজান্তা!’’
শুধু সরাসরিই ক্ষমা চাওয়াই নয়, দুর্নীতির প্রশ্নেও পাল্টা আক্রমণ ছেড়ে এ বার রক্ষণাত্মক ঢঙে ব্যাট করতে দেখা গিয়েছে মমতাকে। নারদ-কাণ্ডের যে ছবিকে তিনি ‘ভেজাল’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, এ বার সেই ঘটনাতেও প্রকারান্তরে দোষ কবুল করে ফেলেছেন তিনি! দুর্গাপুরে অন্য একটি সভায় এ দিনই মমতা বলেছেন, ‘‘কখনও এক লক্ষ, দু’লক্ষ, ৫০ টাকার নোট দেখিয়ে কী বোঝানো হচ্ছে? আর যারা হাজার হাজার টাকা চুরি করে ব্ল্যাকমেলিং করে দেশটাকে বিক্রি করে দিচ্ছে, সেগুলি কী? যদি কেউ টাকা দিয়েছে, সে-ও অন্যায় করেছে!’’
আপাতদৃষ্টিতে অভিযুক্তদের আড়াল করে স্টিং-কারীদেরই কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। কিন্তু বিরোধীদের মতে, কেউ টাকা দিলে যদি দোষী হয়, তবে টাকা নিলেও যে দোষ— সেই সত্যও ঘুরিয়ে স্বীকার করা হয়ে গিয়েছে মমতার মন্তব্যে!
এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। কি ঘটতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে, আবার কি সেই মমতা ব্যানার্জী। নাকি সারদা, রোজভ্যালী ও নারদ কেলেঙ্কারীর ছাপ পড়বে তৃণমূল শিবিরে। পরিবর্তনের ডাক দিয়ে ক্ষমতায় আসা মমতা-সরকার গত ৫ বছরে কতটা পরিবর্তন করেছে বাংলাকে। তা এখন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ভালো বলতে পারবে। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের জরিপে ভারতের সবচেয়ে অনিরাপদ রাজ্যের তকমাটা জুটে গেছে মমতার বাংলার। সেই সাথে ১ লক্ষ কোটি টাকার উপর ঋণ তো রয়েছেই। বিরোধীদের অভিযোগ, মা-মাটি-মানুষের কথা বলে, মূলত মমতা বাংলার মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকা করেছেন।
৭ এপ্রিল, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস