আন্তর্জাতিক ডেস্ক : উইসকনসিনের প্রাইমারিতে হারলেন দুই ফ্রন্ট রানারই৷ ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনয়ন পাওয়ার রাস্তা কঠিন করে দিয়ে বড় ব্যবধানে জিতলেন টেড ক্রুজ৷ আর হিলারি ক্লিন্টনের পথে কাঁটা হয়ে উঠতে না পারলেও নিউ ইয়র্কের লড়াইয়ের আগে আত্মবিশ্বাসের মাত্রা অনেকটাই বাড়িয়ে নিলেন বার্নি স্যান্ডার্স৷
উইসকনসিন ট্রাম্পের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল ক্রুজের জন্য৷ কারণ, এই প্রাইমারিতে হারলে লড়াই থেকে পুরোপুরি ছিটকে যেতেন তিনি৷ কঠিন এই মুহূর্তে দরকারি জয় পেয়ে উৎসাহিত টেক্সাসের সিনেটর তাই উইসকনসিনকেই 'টার্নিং পয়েন্ট' বলেছেন৷ মিওয়াউকিতে বিজয় সমাবেশে তার দাবি, 'এই বিশ্বাস আমার ক্রমেই দৃঢ় হচ্ছে যে, রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য যে ১২৩৭ জন ডেলিগেটের সমর্থন দরকার, তা আমরা পেয়ে যাব৷ হয় ক্লিভল্যান্ডের আগে, অথবা ক্লিভল্যান্ডেই৷ ডেলিগেটদের সংখ্যাগরিষ্টের সমর্থন আমরাই পাব৷'
উইসকনসিনে হারের পরেও অবশ্য ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে থাকলেন৷ তবে ক্লিভল্যান্ডে জাতীয় কনভেনশনের আগে প্রয়োজনীয় ডেলিগেট সংখ্যা তিনি জোগাড় করতে পারবেন, এমন সম্ভাবনা ক্রমশ কমছে৷ সে ক্ষেত্রে কনভেনশনে লড়াইটা ফের শুরু হবে একেবারে শূন্য থেকে৷ আর দলের মধ্যে ট্রাম্পের যা অবস্থান, তাতে তার মাথাব্যথার যথেষ্ট কারণ আছে৷ ককাস বা প্রাইমারি ভোটগুলির পর ট্রাম্প সচরাচর যে ভাবে একটি করে সাংবাদ সম্মেলন করেন, উইসকনসিনে হারের পর সেই রুটিনেও ব্যতিক্রম হয়েছে৷ তবে তাব প্রচার বিভাগের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে প্রবল আক্রমণ করা হয় ক্রুজকে৷
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'উইসকনসিনের গভর্নর, রক্ষণশীল টক রেডিয়োর অনেক শোয়ের সঞ্চালক এবং গোটা দলীয় ব্যবস্থাটাই মিথ্যাবাদী টেড ক্রুজের পিছনে ছিল৷ টেড ক্রুজ তো হাতের পুতুলের চেয়েও খারাপ৷ উনি ট্রয়ের ঘোড়া, যাকে দলের মাথারা ব্যবহার করছেন ট্রাম্পের কাছ থেকে মনোনয়ন ছিনিয়ে নেয়ার জন্য৷' এ দিনের লড়াইটা জিতে ট্রাম্পকে একটা ধাক্কা দিতে পারলেও সংখ্যার বিচারে টেড ক্রুজ যে খুব এগিয়ে গেলেন, এমন কিন্তু নয়৷ বরং নিজের শহর নিউ ইয়র্ক এবং এপ্রিলের শেষ দিকে পূর্ব আমেরিকার যে একগুচ্ছ রাজ্যে ভোট, সেখানে ট্রাম্প অনেক এগিয়ে৷
তা সত্ত্বেও হয়তো টেনেটুনে কনভেনশনের আগে ডেলিগেট সংখ্যায় ক্রুজ পৌঁছে যেতেও পারেন৷ তবে সেটা বাস্তবে হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ তার সেরা বাজি ব্রোকারড কনভেনশন৷ কারণ, দলের একটা বড় অংশের কাছে টেড ক্রুজই ট্রাম্পকে আটকানোর জন্য এখন একমাত্র বিকল্প৷ সে জন্য ক্লিভল্যান্ডে ফের লড়াই হলে রাজনৈতিক ভাবে ক্রুজই এগিয়ে থাকবেন৷ তৃতীয় প্রতিদ্বন্দ্বী জন কাসিচ সাকুল্যে একটিমাত্রই রাজ্য এখনো পর্যন্ত জিতেছেন৷ কাজেই তার সরাসরি মনোনয়ন পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই৷ তবু ট্রাম্পের কাজটা কঠিন করে দেয়ার লক্ষ্য নিয়েই লড়াইয়ে থাকছেন তিনিও৷
অন্য দিকে , উইসকনসিনে জিতে শেষ সাত বারের মধ্যে ছ'বার হিলারিকে হারিয়ে দিলেন স্যান্ডার্স৷ তবে ডেলিগেট সংখ্যার বিচারে হিলারি তার তুলনায় এতটাই এগিয়ে রয়েছেন যে, শেষ পর্যন্ত তার মনোনয়ন পাওয়া আটকে যাবে, এমন সম্ভাবনা প্রায় নেই৷ উইসকনসিনে একমাত্র মিলওয়াউকি ছাড়া প্রত্যেকটি কাউন্টিতে জিতেছেন স্যান্ডার্স৷ কিন্তু যেহেতু উইসকনসিনের ক্ষেত্রে প্রান্ত ভোটের অনুপাতে ডেলিগেটসংখ্যা ভাগ হয়, সে জন্য খুব বেশি সুবিধা তিনি পাচ্ছেন না৷ এই রাজ্যের ৮৬ জন ডেলিগেটের মধ্যে অন্তত ৪৪ জনের সমর্থন স্যান্ডার্স পাবেন বটে, কিন্তু হিলারিও অন্তত ২৮ জনের সমর্থন পাবেন৷ কাজেই বিল -পত্নীর সমর্থকরা এখনো উদ্বেগের কোনো কারণ দেখছেন না৷
স্যান্ডার্স অবশ্য দাবি করেছেন, উইসকনসিন থেকে তিনি যথেষ্ট 'ভরবেগ' সঞ্চয় করেছেন৷ কয়েক মাস আগেও যেখানে তার লড়াইকে কোনো গুরুত্বই দেয়া হয়নি, সেখান থেকে আজকের জায়গায় পৌঁছতে পারার জন্য কৃতিত্বও দাবি করেন৷ ওয়াইয়মিংয়ের লারামিতে জনতার সামনে নিজের জন্মস্থান নিউ ইয়র্কেও তিনিই জিতবেন বলে দাবি করে হিলারিকে স্যান্ডার্সের কটাক্ষ, 'দয়া করে কথাটা গোপন রাখবেন৷ সেক্রেটারি ক্লিন্টনকে বলবেন না যেন৷ উনি একটু একটু উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন৷ ওঁনাকে আরো বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলতে আমি চাই না৷ কিন্তু আমার বিশ্বাস নিউ ইয়র্ক জয়ের একটা দারুণ সুযোগ এসেছে আমাদের সামনে৷ আর ওই রাজ্যে ডেলিগেটের সংখ্যা প্রচুর৷'
স্যান্ডার্সের জয়ের পর এ দিন টুইট করে তাকে অভিনন্দন জানান হিলারি৷ উইসকনসিনের ফল তাকে আদৌ বিচলিত করেছে বলে মনে হয়নি৷ বরং নিউ ইয়র্কের দিকে লক্ষ রেখে এগোচ্ছেন তিনি৷ সেনেটর হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য যেটাকে নিজের হোম গ্রাউন্ড হিসেবেই দেখছেন বিল -পত্নী৷ ১৯ এপ্রিল নিউ ইয়র্ক এবং তার পর থেকে পূর্ব উপকূলের যে রাজ্যগুলিতে একের পর এক ভোট, সেখানে হিলারির সমর্থনের পাল্লা অনেক বেশি ভারী৷ কাজেই ডেমোক্র্যাট শিবিরে উইসকনসিনের ফল বিরাট কিছু ওলটপালট ঘটিয়ে দেবে, এমন সম্ভাবনা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা৷-টাইমস অফ ইন্ডিয়া
৭ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই