শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৬, ০৯:১৬:৫৩

বাংলাদেশিদের পক্ষ্যে রুখে দাড়ালেন মমতা, বিজেপি-কংগ্রেসের মাথায় হাত!

বাংলাদেশিদের পক্ষ্যে রুখে দাড়ালেন মমতা, বিজেপি-কংগ্রেসের মাথায় হাত!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ভারতে বসবাসরত বাঙালিদের পক্ষ্যে রুখে দাড়ালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার সীমান্ত শহর বনগাঁ স্টেডিয়ামে শুক্রবার এক নির্বাচনি জনসভায় জোড়ালো অবস্থানের কথা জানান। এসময় বিরোধী সিপিএম-কংগ্রেস জোট এবং বিজেপি’র তীব্র সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

বিজেপি প্রসঙ্গে মমতা বলেছেন, ওরা লাট সাহেবরা লাট সাহেবের মতো পার্টি চালায়, আর নির্বাচন এলেই হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেয়। উদ্বাস্তু বাঙালিদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেয়। আগের বারে যখন নির্বাচন এল, তখন ওরা (বিজেপি) এসে বলল, বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছে তাদের বাক্স প্যাটরা দিয়ে ওপারে পাঠিয়ে দেব। আমি এখনো বলি ওপার বাংলা থেকে যারা উদ্বাস্তু হয়ে এখানে এসেছেন, তারা আমাদের চোখের মণি। তারা চোখের মণির মতো থাকবে, তাদের সব অধিকার আমরা দিয়ে রাখব।

মমতা বলেন আমিই করেছিলাম নিঃশর্ত জমির দলিল নিয়ে আন্দোলন, এটা বিজেপি করেনি। যে সব উদ্বাস্তু নাগরিক ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় এসেছেন তারা আমাদের দেশের নাগরিক। তাদের নাগরিকত্ব কে দেবে? কেন্দ্র দেবে, না রাজ্য দেবে? তারা অলরেডি এখানকার নাগরিক। সব অধিকার তাদের আছে। তারা সব সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন এবং পাবেন। তারা আমাদের গর্ব।

তৃণমূল নেত্রী বলেন, ওপার বাংলায় যখন ‘জয় বাংলা’ বলে মুক্তি আন্দোলন হয়েছিল, তখন এপার বাংলার মানুষ তাদের অনেক সাহায্য করেছিল। দুই বাংলার মধ্যে আমি কোনো তফাত করি না। আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।

তিনি বলেন, কতগুলো রাজনৈতিক দল যারা কাজ করে না, ক্ষমতা থাকলেও কাজ করতে জানে না, বাংলায় সর্বনাশ করে বেড়ায়, সেই দলগুলো মিলে একটা সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। এরা ঘুম থেকে উঠে মমতাকে গালাগালি দিয়ে চা বিস্কুট খাচ্ছে, দুপুর বেলায় খেতে যাচ্ছে, মমতাকে গালাগালি দিয়ে ভাত খেতে যাচ্ছে, বিকেলে আবার গালাগালি দিয়ে চা বিস্কুট খেতে যাচ্ছে, রাতে আবারও গালাগালি দিয়ে ভাত খেতে যাচ্ছে। এতে এত অম্বল হচ্ছে তাও বুঝতে পারছে না। এরা রাতে ঘুমিয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্ন দেখছে। এদের কি বলবেন আপনারা? এরা এতগুলো লোক, আর আমি একা। কিন্তু আমি একা নই, মানুষ আমার সঙ্গে রয়েছে। এটাই বড় শক্তি। এসব লোকেদের কাজ নেই, কর্ম নেই, শুধু তৃণমূল আর তৃণমূল, এরা পাগল হয়ে গেল। এদের কাছে তৃণমূলের সব কিছু খারাপ। আর সব ভালো কে? লাল পার্টির দল।

মমতা বিগত বামফ্রন্ট জমানার কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাটাকে যারা লাল সন্ত্রাসে সন্ত্রস্ত করে দিয়েছিল, তাদের নাকি গণতন্ত্র চাই! বাংলায় গণতন্ত্র কি কোনো দিন ছিল? আপনারা ‘কমরেড’দের জিজ্ঞাসা করুন গণতন্ত্র কাকে বলে? সিপিএম-কংগ্রেস এবং বিজেপিকে এ কথা জিজ্ঞাসা করতে হবে। আপনাদের মনে নেই থানায় গেলে পুলিশ এফআইআর করতে পারত না ওটা পার্টি অফিস ঠিক করবে। কার ঘরে মেয়ে বিয়ে দেবে, কার বাড়ি পুজো হবে, তাও পার্টি অফিস ঠিক করত। এত তাড়াতাড়ি এখন তাদের মুখে এত বড় বড় কথা! ওরা চাষির ধান কেটে নিত, পুকুরের জলে বিষ মিশিয়ে দিত, ধোপা-নাপিত বন্ধ করে দিত, জোর করে জমি দখল করে নিত। সিপিএম? ৪৬ টা গণহত্যা করেছিলে। নেতাইয়ে কী হয়েছিল মনে আছে? বুদ্ধদেব বাবুর আমলে নন্দীগ্রামে এতগুলো মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, কাউকে এলাকায় ঢুকতে পর্যন্ত দেয়া হয়নি। সব ভুলে গিয়েছেন?

তিনি বলেন, আপনাদের মনে নেই কটা মানুষ সে সময় ভোট দিতে পারত? কাউকে ওরা ভোট দিতে দিত না ভোট কেন্দ্রে যেতে দিত না, তাদের মুখে আজ বড় বড় কথা! ভূতের মুখে রাম নাম?

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ সিপিএম-কংগ্রেস এক হয়েছে। সিপিএম উঠেছে কংগ্রেসের কাঁধে। যদিও সিপিএমই একদিন বলত ‘অলি-গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়’। ভুলে গেছেন সে সব স্লোগান? আর আজ, সিপিএম কংগ্রেসকে বলছে, দাদা তোর পায়ে পড়ি রে, মেলা থেকে বউ নয়, ভোট এনে দে। দাদা তোর পায়ে পড়ি রে, আমাদের জন্য ভোট এনে দে। আরে ভোট টা আনবে কোথা থেকে? দাদারই তো ভোট নেই, তারা কোথা থেকে ভোট আনবে? দাদার সাইনবোর্ড বিক্রি হয়ে গেছে।

বাম-কংগ্রেস জোট প্রসঙ্গে মমতা বলেন, কেরালায় ওরা চুলোচুলি, আর বাংলায় কোলাকুলি করছে। আর বিজেপি তো দিল্লিই সামলাতে পারে না।

তিনি বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিরোধীরা টিভির সামনে বসে কুঁকড়িয়ে কুঁকড়িয়ে কথা বলছে, আর নালিশের পরে নালিশ। তাই ভোটের পরে ঠিক করেছি ওদের জন্য বানাবো কটা বালিশ। একেবারে বালিশ নিয়ে ঘুমিয়ে থাকবে। ভোটের বাক্সে ওদের ভোট না দিয়ে ভালো করে বালিশ দেবে মানুষ। বালিশ নিয়ে ওরা ভালো করে ঘুমোবে, বিশ্রাম নিক। ওরা বনবাসে যাক। আপনাদের আশীর্বাদ এবং দোয়ায় ১৯ মে আর একটা নতুন সরকার রাজ্যে আসবে সেদিন সিপিএম–কংগ্রেস-বিজেপি বুঝবে কত ধানে কত চাল।

তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন কখনো কখনো চমকাতে হয়।’ এ প্রসঙ্গে রামকৃষ্ণ দেবের গল্প শুনিয়ে বলেন, ‘কখনো কখনো ফোঁস করা দরকার। এবার ভোটে ফোঁস করার সময়। যাতে দিল্লি জানতে পারে বাংলাকে অসম্মান করা মানে বাংলা মাকে অসম্মান করা।
১৬ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে