আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মাটির উপরে কালী মন্দির। মন্দিরের নিচে সুড়ঙ্গ আর গুপ্তকক্ষ। সেখানেই নাকি লুকনো রয়েছে ৩০০ কিলোগ্রাম সোনা ও ৩০০ কোটি টাকা! গুয়াহাটি লাগোয়া রানি চা বাগানে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার এমনই এক ধন-ভাণ্ডারের কথা সুপ্রিমকোর্টে জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা গোয়েন্দা।
২০১০ সালে রানি চা বাগানের মালিক মৃদুলকুমার ভট্টাচার্য এক বাগানকর্মীর ছেলেকে গুলি করে মারার পর থেকে গত বছর পর্যন্ত বন্ধ ছিল ওই বাগান। এর পর ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনসুকিয়া জেলার কুনাপাথারে তার চা বাগানেই ক্ষিপ্ত চা শ্রমিকরা তাকে ও তার স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারে।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা গোয়েন্দা মনোজকুমার কৌশল সুপ্রিমকোর্টে মামলা করে দাবি করেছেন, তিনি তদন্তে জানতে পারেন অন্যান্য চা বাগানের মালিকদের কাছ থেকে উলফার হয়ে টাকা তুলতেন মৃদুলবাবু। এবং উলফার সাহায্যে মিয়ানমার থেকে চোরাই সোনা আমদানি করে ব্যবসা করতেন। মৃদুলবাবু তার চা বাগানে ওই ধনভাণ্ডার লুকনোর জন্য মাটিতে গর্ত ও সুড়ঙ্গ তৈরি করেছিলেন। সেখানে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ও ৩০০ কিলোগ্রাম সোনা এবং দু’টি এ কে-৪৭ রাইফেল ছিল।
আর তা ঢাকতেই গর্তের উপরে একটি কালী মন্দির তৈরি করান তিনি। তিনি মারা যাওয়ার আগে সম্পদের খানিকটা অংশ সরিয়েও ফেলেছিলেন বলে কৌশলের দাবি।
ওই সাবেক সেনা গোয়েন্দার দাবি, মৃদুলবাবু মারা যাওয়ার দেড় বছর পরে, ২০১৪ সালের ১৫ মে তিনি ওই গুপ্তধনের সন্ধান পান। ১ জুন তিনি সেখানে যান। কিন্তু তার আগেই অসম পুলিশের নেতৃত্বে ১৩ জন লোক বাকি সম্পদ সরিয়ে ফেলে। কৌশল ধনভাণ্ডারের খোঁজে ফের কালী মন্দিরের আশপাশে খনন কাজ চালানো এবং পুরো ঘটনার সিবি আই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
তার বক্তব্যের পক্ষে বিভিন্ন ছবি ও তথ্যও তিনি আদালতে জমা দিয়েছেন। তার দাবি, এ নিয়ে তিনি আসাম সরকারের এক কর্তা, কেন্দ্রীয় সরকার, এমনকী প্রধানমন্ত্রীকেও রিপোর্ট দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর গত ১৩ এপ্রিল এ নিয়ে একটি কমিটি গড়ে অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল মনিন্দর সিংহকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেন। খোঁজ-খবর নিয়ে এবং ঘটনার সিবি আই তদন্ত করানোর ব্যাপারে আসাম সরকারের মতামত নিয়ে ছ’সপ্তাহের মধ্যে আদালতকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ আজ বলেন, এমন গুপ্তধনের ভা-ার থাকা বা পুলিশের টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে কোনও খবর নেই। আসাম পুলিশও গুপ্তধন ‘চুরির’ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, উলফার সঙ্গে মৃদুলবাবুর সম্পর্ক পরের দিকে খুব খারাপ হয়ে যায়। পেঙেরিতে উলফা তাঁকে মারার চেষ্টাও করে। ১৯৯৫ সালে চা-বাগানের ডাঙা জমিতে কালী মন্দিরটি তৈরি করান মৃদুলবাবু। প্রতিমার সোনার জিভ ও সোনার দুটি চোখ ২০১০ সালের মার্চে চুরি হয়ে যায়।
মৃদুলবাবুর ছেলে অত্রি ভট্টাচার্য বলেন, এই ধরণের অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন। এমন কোনও গুপ্তধন বাগানে ছিল না। ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সালের অগস্ট পর্যন্ত বন্ধ ছিল বাগান। সেই সময়ের মধ্যে বাগানের সবকিছু লুঠ হয়ে, তছনছ হয়ে যায়। আমাদের ফের সব নতুন করে গড়তে হয়েছে। আমরা যেকোনো রকম তদন্তকেই স্বাগত জানাই।
আলোচনাপন্থী উলফার মুখপাত্র মৃণাল হাজরিকা বলেন, সংগঠন এ ব্যাপারে কিছু জানত না। কেউ যদি আমাদের নাম নিয়ে এই সম্পদ জমা করে থাকে তা নিয়ে উলফার কিছু বলার নেই। -আনন্দবাজার।
১৭ এপ্রিল,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম