মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৬, ০৬:৩৪:৪৮

এক রহস্যময়ী ঘটনা, মৃত মায়ের সঙ্গে রাত কাটাতেন ছেলে!

এক রহস্যময়ী ঘটনা, মৃত মায়ের সঙ্গে রাত কাটাতেন ছেলে!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তালা ভেঙে ঘরে ঢুকতেই পুলিশের নজরে পড়ল দেহটা। মেঝের ওপর পড়ে পচেগলে একসা! গন্ধে ঘরের ভেতর টেকা দায়।  ঘরের কোথাও এক চিলতে ফাঁকফোকর নেই।  যেসব জায়গায় তা থাকার কথা, সেখানেও কাগজ গুঁজে রাখা।  এই ঘরেই দিন তিনেক ধরে পড়ে ছিলেন বছর পঞ্চান্নর ছবিরানি পাঁজার দেহ।  আর সেখানেই গত তিন রাত ধরে মায়ের দেহের সঙ্গে ঘুমাতের তারই ছেলে!

হাওড়ার শিবপুরের ২/২ চন্দ্রকুমার ব্যানার্জি লেনের এ ঘটনায় অনেকেই তিন নম্বর রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া দেখছেন।  যদিও রবিনসন স্ট্রিটে প্রায় মাস দুয়েক ধরে দিদি, মা এবং পোষ্যদের দেহ নিয়ে দিন কাটাতেন মধ্যবয়সী পার্থ দে।

এ ক্ষেত্রেও তেমনটা হতে পারত।  যদি না কোনোভাবে পুরনো ওই বাড়ির ঘর থেকে পচা গন্ধ প্রতিবেশীদের নাকে এসে লাগত! আর তার পরেই ওই বাড়ির অন্য বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। কিন্তু, ঘরের বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে রাখায় পুলিশ কোনও ভাবে ঘরের ভেতর ঢুকতে পারেনি।

ছবিরানি দেবীর ছেলে তাপস পাঁজা গত তিন দিন ধরেই সকালে ওই ঘরে তালা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যেতেন। ফিরতেন সেই রাত করে। আর ঘরে ঢুকেই নাকি দরজা বন্ধ করে রাখতেন ভেতর থেকে।  পচা গন্ধের খবর পেয়ে পুলিশ তার মোবাইলে যোগাযোগ করে।

কিন্তু বারবার সেই মোবাইল বেজেছে।  লিখিত অভিযোগ না পেলে পুলিশ প্রথমে দরজা ভাঙতে রাজি হয়নি।  এর পরেই খবর দেয়া হয় ছবিরানি দেবীর মেয়েকে।  তিনি চন্দননগরে থাকেন।  সেখান থেকে তার স্বামী নবকুমারবাবু শিবপুর এসে পৌঁছে, অভিযোগ দায়ের করায় পুলিশ তার সামনে ঘরের তালা ভেঙে ঢুকে ছায়ারানি দেবীর দেহ উদ্ধার করে।  যদিও মায়ের দেহ উদ্ধারের পরও ফোন ধরেননি ছেলে!

শিবপুরের ওই শরিকি বাড়ির দোতলায় মা ও ছেলের ছোট সংসার।  বাড়ি নিয়ে শরিকি বিবাদ আদালত অবধি পৌঁছায়।  তা নিয়ে মামলাও চলছিল। ছবিরানি দেবীর স্বামী মারা গিয়েছেন বছর দশেক আগে।  ছোট্ট সংসারে আয় বলতে তাপসবাবুর রোজগার।  

তিনি পেশায় কলমিস্ত্রি।  দীর্ঘদিন ধরেই ছবিরানি দেবী মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন।  ওই বাড়ির অন্য বাসিন্দাদের দাবি, মাকে নাকি মাঝে মারধরও করতেন ছেলে।  ওই পরিবারের এক শরিক গৌতম পাঁজা বলেন, গত ১৫ দিন ধরে বৌদিকে (ছবিরানি) দেখতে পাইনি।  আর তাপসকেও গত ৫ দিন ধরে শুধু রাতেই বাড়ি ফিরতে দেখছি।  

আবার সকালবেলাতেই ঘরে তালাচাবি দিয়ে কোথায় বেরিয়ে পড়তো! তবে সোমবার সন্ধ্যায় ওই ঘর থেকে উত্কট গন্ধ বেরোচ্ছে দেখে, এলাকার লোকজনের সন্দেহ হয়।  তার পরেই খবর দেয়া হয় পুলিশে।

অস্বাভাবিক মৃত্যুর একটি মামলা রুজু করে তাপসবাবুকে খুঁজছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে তাদের সন্দেহ, ছবিরানি দেবীকে খুন করা হয়েছে।  এ ঘটনাকে ঘিরে বেশ কয়েকটি প্রশ্নও উঠছে।  মৃত মায়ের সঙ্গে কেন একই ঘরে রাত কাটাতেন তাসপবাবু? কেন সকালবেলাতেই ঘরে তালা দিয়ে বেরিয়ে যেতেন তিনি?

কেন মায়ের মৃত্যুর কথা বাড়ির অন্য লোকদের কাছে বলেননি? মোবাইল ফোন অন থাকা সত্ত্বেও কেন তিনি তা ধরছেন না? ঘরের ফাঁকফোকরে কাগজ গুঁজে রাখল কে বা কারা এবং কেন? সবদিক খতিয়ে দেখছে তদন্তকারীরা। প্রাথমিকভাবে তাপসবাবুর মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।  যেন এক রহস্যময়ী ঘটনা। -আনন্দবাজার
১৯ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে