শাহিদুল ইসলাম : সকালে ঘুম থেকে উঠে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক ছাড়া অনেকের যেন দিন শুরু হয় না। আবার দিনের বেলা কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রামের ছুতোয় কিংবা ক্লান্তি দূর করতে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে থাকেন অনেকেই। আমাদের দেশে পথে ঘাটে চোখে পড়ে অনেক চায়ের দোকান। শহরে ৫-৬ টাকায়, গ্রামে ২-৩ টাকায় এক কাপ গরম চা মেলে। একটু দামি রেস্তরাঁ বা ফাস্ট ফুডের দোকান হলে এক কাপ চায়ের জন্য মূল্য দিতে হতে পারে ৫০-১০০ টাকা। কিন্তু এক কাপ চা পানে যদি পকেট থেকে বের হয়ে যায় লাখ টাকা তবে তা ভাবার বিষয়।
চায়নার ‘ডং হং পাও’ এমন এক ধরনের চা, যার এক কাপ করতে দিতে হবে অবিশ্বাস্য মূল্য। এক কাপ চায়ের দাম ১০ হাজার মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ৮০ টাকা ধরলে বাংলাদেশি টাকায় ৮ লাখ টাকা! এটাই বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দামি চা।
এক কেজি ‘ডং হং পাও’ চায়ের দাম ১ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যদি আপনি সোনার দামের সঙ্গে এই চায়ের দাম তূলনা করেন, তাহলে দেখা যায় এক গ্রাম সোনার যে দাম তার থেকে এক গ্রাম ডং হং পাও চায়ের দাম ৩০ গুণ বেশি।
বিবিসি-র এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০২ সালে এক ভদ্রলোক ২৮ হাজার ডলার দিয়ে মাত্র ২০ গ্রাম চা কিনেছিলেন। এই চা চীনের উইয়ি পর্বতমালায় চাষ করা হয়। ঔষধি গুণাগুণের জন্যই এই চায়ের রয়েছে জগৎজোড়া খ্যাতি।
চীনা উপাখ্যান অনুযায়ী, মিং সাম্রাজ্যের এক রাজার মা মুমূর্ষু অবস্থায় এই চা পানে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেন। এরপরই এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। সেই থেকে নানা রোগের ওষুধ হিসেবে এই চা ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
চীনের উইয়ি পর্বতের উচ্চতম স্থানে ছয়টি ঝোপে এই চা চাষ করা হয়। মিং শাসনামল থেকে চা চাষের স্থানগুলোকে অত্যন্ত সুরক্ষিত অবস্থায় লাল গাউন দিয়ে আচ্ছাদিত করে রাখা হয়। এ জন্য এই চা পাতাকে ইম্পেরিয়াল রেড রোবও বলা হয়ে থাকে।
বর্তমানে এই চা অত্যন্ত দুর্লভ এক বস্তু, যা চীনাদের জাতীয় সম্পদ। বিবিসির প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালের পর প্রাচীন ওই ঝোঁপ থেকে নতুন করে কোনো চা উৎপাদিত হচ্ছে না, আর হবেও না।
বিশ্বে গুটিকয়েক ভাগ্যবান মানুষের কাছে এই চা সংরক্ষিত আছে। ২০০৫ সালের আগেই তারা এ চা কেনেন। তারা পরম যত্নে এই চা সংরক্ষণ করছেন। কারণ তাদের সংরক্ষণকৃত চা শেষ হলে পৃথিবী থেকে শেষ হয়ে যাবে মহামূল্যবান ‘হং ডং পো’ চা। আর সে কারণেই এর মূল্য আকাশ ছোঁয়া। আর কিছু দিন গেলে এই চা হীরার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হবে- এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই!- বিবিসি
২৭ এপ্রিল,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ