আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মদিন আসলে কবে, গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নথি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার পর তা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
ফাঁস হওয়া নথিতে তার জন্মদিন ১৯৪৯ সালের ২৯শে আগস্ট বলে দেখানো হলেও সরকারিভাবে তার জন্মদিন পরের বছরের সেপ্টেম্বরে।
বিরোধী কংগ্রেস দল বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখাতেই এই জাল নথি তৈরি করা হয়েছে বলে তাদের সন্দেহ।
নরেন্দ্র মোদির পুরনো একটি টিভি সাক্ষাৎকারও এর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে – যেখানে তিনি নিজে বলেছেন হাই স্কুলের পর তিনি আর পড়াশুনো করেননি। ফলে প্রধানমন্ত্রী মোদির আসল বয়স আর পড়াশুনো নিয়ে প্রশ্নের পাহাড় জমছে।
সেই ষাটের দশকের গোড়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি-র জন্য যেভাবে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন মেরিলিন মনরো, অনেকটা সেভাবেই নরেন্দ্র মোদিকেও হ্যাপি বার্থডে গেয়ে অভিবাদন জানিয়ে থাকেন বলিউড অভিনেত্রী মল্লিকা শেরাওয়াত।
প্রতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ভারতের সব চ্যানেলে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানও করা হয়ে থাকে। আর এ সবেরই ভিত্তি হল নরেন্দ্র মোদির সরকারি ওয়েবসাইটে তার ঘোষিত জন্মদিন – ১৯৫০র ১৭ সেপ্টেম্বর।
কিন্তু টাইমস অব ইন্ডিয়া দাবি করেছে, তাদের কাছে গুজরাট ইউনিভার্সিটির এমন একটি নথি হাতে এসেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদি ১৯৮৩তে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রি পেয়েছেন ৬২ শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়ে – কিন্তু সেখানে তার জন্মদিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৪৯র ২৯শে আগস্ট।
'দিন, মাস, সাল, বয়স কিছুই মিলছে না'
গুজরাটের বিরোধী দল কংগ্রেসও বলছে তাদের হাতেও প্রমাণ এসেছে যে মোদির জন্মদিনের তারিখে গরমিল আছে।
কংগ্রেস নেতা ও দলের জাতীয় মুখপাত্র শক্তি সিং গোহিল বলছিলেন, "নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে সর্বত্র মোদি ১৭ সেপ্টেম্বরকে নিজের জন্মদিন বলে দাবি করে এসেছেন। কিন্তু আমি স্টুডেন্ট রেজিস্টার ও তার স্কুল ছাড়ার সময়কার যে সার্টিফিকেট পেয়েছি তাতে বলা হচ্ছে তার জন্মদিন ১৯৪৯র ২৯শে আগস্ট। কেন এটা হবে? এ তো দিন, মাস, সাল, বয়স কিছুই মিলছে না!"
এর পেছনে কোনো কারসাজি থাকতে পারে বলে অনেকে সন্দেহ করছেন কারণ গত সাত বছর ধরে নরেন্দ্র মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে গুজরাট সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু প্রশ্ন জমা পড়লেও তার কোনো জবাব মেলেনি।
কিন্তু এখন ভারতের তথ্য কমিশনারের নির্দেশের পর গুজরাট ইউনিভার্সিটি জানিয়েছে তিনি প্রথম শ্রেণীতে এম এ পাস করেছিলেন।
অথচ বছর দশ-বারো আগে মোদি নিজেই ‘রুবারু’ নামে এক টিভি অনুষ্ঠানে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলে, হাইস্কুলের পর তিনি আর পড়েননি।
এ কারণেই কংগ্রেসের সন্দেহ, প্রধানমন্ত্রীকে উচ্চশিক্ষিত প্রমাণ করার জন্যই তড়িঘড়ি হয়তো এসব নথি বানানো হয়েছে – আর তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে জন্মদিনের হিসেবে ভুলচুক হয়ে গেছে।
শক্তি সিং গোহিল যেমন বলছিলেন, "এই নথি জাল না-হলে এতদিন তারা চুপ ছিলেন কেন? নরেন্দ্র মোদি প্রথম শ্রেণীতে এম এ পাস করেছেন, এটা জানাতে এতদিন সমস্যা কোথায় ছিল?"
"আর এম এ পড়েছেন খুব ভাল কথা, কিন্তু তার জন্য যে বিএ ডিগ্রি লাগে সেই সার্টিফিকেট কই? না কি শিক্ষামন্ত্রী স্মৃতি ইরানি দিল্লি ইউনিভার্সিটি থেকে সেই নথি এখন তৈরি করাচ্ছেন?"
এই বিতর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর বা ক্ষমতাসীন বিজেপির পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বয়স বা পড়াশুনো নিয়ে তার পেশ করা হলফনামার সঙ্গে সব কিছু যে ঠিকঠাক মিলছে না, সেই সন্দেহ কিন্তু ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।-সূত্র : বিবিসি
২ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই