বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০১৬, ০৭:৩৮:০৬

‘আমি ‘শুভম’ নই, আমি আনসার আহমদ শেখ’

‘আমি ‘শুভম’ নই, আমি আনসার আহমদ শেখ’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের মহারাষ্ট্রের এক অটোরিকশা চালকের ছেলে আনসার আহমদ শেখ সব বাধা অতিক্রম করে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা ইউপিএসসি পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছে।

২১ বছর বয়সী ওই মুসলিম যুবককে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার জন্য এক সময় হিন্দু নামে পরিচিত হতে হয়েছিল। অবশেষে মঙ্গলবার যখন ইউপিএসসি’র ফল প্রকাশ হয় তখন তিনি তার অধ্যবসায় এবং পরিশ্রমের ফল পেয়েছেন। প্রথমবারের চেষ্টাতেই তিনি কঠিন পরীক্ষায় সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে ৩৬১ র‍্যাঙ্ক অর্জন করে সফল হয়েছেন।

আনসার আহমদ শেখের পারিবারিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়। খরার কবলে পড়া মারাঠাওয়াড়ার জালনা জেলার শেলগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আনসারের বাবা অটো রিকশা চালান এবং তার বড় ভাই একটি গ্যারাজে সহকারির কাজ করেন।

আনসার আহমদ শেখ ২০১৫ সালে মহারাষ্ট্রের পুনের ফার্গুসন কলেজ থেকে ৭৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হন এবং পরবর্তীতে ইউপিএসসি’র জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। এ সময় তাকে অনেক সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছে। মুসলিম হওয়ার কারণেই অসহিষ্ণুতার শিকার হয়ে তিনি সেময় পুনের মতো শহরে বাসা ভাড়া পাননি। অবশেষে নাম পরিবর্তন করার পরে সমস্যার সমাধান হয়।

লোকেরা তার নাম শুনলেই কেউ বাসা ভাড়া দিতে চাইত না। আনসারের বন্ধু হিন্দু হওয়ার সুবাদে অবশ্য খুব সহজেই ঘর ভাড়া পেয়ে যান। যদিও আনসার একনাগাড়ে ঘর ভাড়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ালেও মুসলিম হওয়ার কারণে তিনি তা পাননি। বাসাভাড়া না পেয়ে বিপর্যস্ত হয়ে অবশেষে তিনি তার এক হিন্দু বন্ধুর নামের আশ্রয় নেন। এরপর বাসাভাড়া খুঁজতে বেরিয়ে তিনি নিজেকে ‘শুভম’ বলে পরিচয় দিতেই সফল হন এবং বাসাভাড়া পেয়ে যান। শেষমেশ তার থাকা খাওয়ার সমস্যা মিটে যায়।

প্রবল প্রতিকূলতা শেষে চরম সাফল্য লাভ করায় ওই মুসলিম যুবক এখন সগর্বে বলেছেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, আমি ‘শুভম’ নই, আমি আনসার আহমদ শেখ।’

আনসারের অটো রিকশা চালক বাবার তিন স্ত্রী, সংসারে প্রায়ই অশান্তি লেগে থাকত। তার দুই বোনের মাত্র ১৪/১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গেছে। মূলত মা এবং গ্যারাজে কাজ করা ভাইয়ের প্রচেষ্টায় তিনি আজ সফলতার শীর্ষে উঠেছেন।

মহারাষ্ট্রের পুনেতে গত তিন বছর ধরে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে আনসারের, তাতেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকারি আমলা হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা ছড়াবেন তিনি। তার কথায়, ‘প্রশাসক হিসেবে আমি প্রান্তিক মানুষের ওই সব সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করব, যে সমস্যাগুলো আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি।’

আনসার বলেন, ‘আমার মা এবং আমার ভাই সবসময় আমাকে সাহায্য করেছে। তাদের ছাড়া এই সাফল্য পাওয়া সম্ভব ছিল না। আমি তাদের কাছে ঋণী।’ তার সফলতায় বন্ধু-বান্ধব, শুভানুধ্যায়ী, মিডিয়াকর্মী থেকে শুরু করে পরিচত, অপরিচিত মানুষদের শুভেচ্ছা জানানোর ঢল নেমেছে।-প্যারিস টুডে
১০ মে, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে