সিরাজুল ইসলাম : কামন্ডার মুস্তাফা বদরুদ্দিন ১৯৬১ সালে লেবাননে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮২ সালে তিনি লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দেন। ওই বছরেই ইসরাইল সামরিক অভিযান চালিয়ে দক্ষিণ লেবানন দখল করে নিয়েছিল।
ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে এই বীর কমান্ডার হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। ১৯৯২ সালে বদরুদ্দিনকে হিজবুল্লাহর কেন্দ্রীয় মিলিটারি ইউনিটের কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। তার পরিকল্পনায় ও নেতৃত্বে ইসরাইল-বিরোধী বেশ কয়েকটি সামরিক অভিযান চালায় হিজবুল্লাহ।
এই বীর কমান্ডারের অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সংগ্রামী তৎপরতার কারণে ২০০০ সালে ইসরাইল দক্ষিণ লেবানন থেকে তার দখলদারিত্ব প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়।
কমান্ডার বদরুদ্দিন হচ্ছেন হিজবুল্লাহ মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর সিনিয়র উপদেষ্টা। তার জীবনে আরো যেসব সফলতা আছে তার মধ্যে রয়েছে- তিনি বহুবার লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনীকে দেশের ভেতরে ইসরাইলি গোয়েন্দা চক্র ধ্বংস করতে সহায়তা করেছেন।
২০০৯ সালে বদরুদ্দিন হিজবুল্লাহর ‘এক্সটারনাল অপারেশসন ব্রাঞ্চ’-এর প্রধান নিযুক্ত হন। এর আগে এ দায়িত্বে ছিলেন তারই নিকটাত্মীয় শহীদ কমান্ডার ইমাদ মুগনিয়া। মুগানিয়াও ইসরাইলি গুপ্তচরদের হাতে সিরিয়ায় মারা যান।
এছাড়া, ২০০১ সালে সিরিয়ায় উগ্র সন্ত্রাসীদের সহিংসতা শুরু হলে হিজবুল্লাহর যেসব কমান্ডার সিরিয়ায় লড়াই শুরু করেন বদরুদ্দিন তার অন্যতম। ১৩ মে শহীদ হওয়ার আগে তিনি সন্ত্রাসীদের হাত থেকে আলেপ্পো শহর মুক্ত করার বিষয়ে সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করছিলেন।
সিরিয়ায় সন্ত্রাসীদের যে তাণ্ডব চলছে তা হয়ত এক সময় থামবে। সিরিয়া ও ইরাকের দখল হয়ে যাওয়া ভূখণ্ড হয়ত একসময় মুক্ত হবে। কিন্তু যেসব বীর যোদ্ধা সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াইয়ে অকাতরে জীবন দিচ্ছেন তাদের আর ফেরত পাওয়া যাবে না। হয়ত তাদের রক্তের বিনিময়েই ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে; আবার বাসযোগ্য হয়ে উঠবে সিরিয়া আর ইরাক ।
শনিবার এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, তদন্তে প্রমাণ হয়েছে যে, সিরিয়ার দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে হিজবুল্লাহর অবস্থানে তাকফিরি সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গোলার আঘাতে কমান্ডার বদরুদ্দিন শহীদ হয়েছেন।
এতে আরো বলা হয়েছে,কমান্ডার বদরুদ্দিনের শাহাদাতের মধ্যদিয়ে হিজবুল্লাহর ইচ্ছা শক্তি ও প্রতিরোধ যুদ্ধ আরো প্রবল হবে।
বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ জোর দিয়ে বলেছে, তারা সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে; এ দুই শক্তির হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে নেমেছে তাকফিরি সন্ত্রাসীরা।
সিরিয়ায় যখন যুদ্ধবিরতি চলছে এবং পরিস্থিতি দিন দিন প্রেসিডেন্ট আসাদের পক্ষে চলে যাচ্ছে তখন কমান্ডার বদরুদ্দিনকে হত্যা করা হলো।
এদিকে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. আলী লারিজানি বলেছেন, লেবাননের হিজবুল্লাহ কমান্ডার মুস্তাফা বদরুদ্দিনের মৃত্যু ইহুদিবাদী ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে শুধু প্রতিরোধ আন্দোলনকে জোরদার করবে। শনিবার হিজবুল্লাহ মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহকে পাঠানো এক শোক বার্তায় তিনি এ কথা বলেছেন।
শুক্রবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফও কমান্ডার বদরুদ্দিনের হত্যার ঘটনায় হিজবুল্লাহ মহাসচিব হাসান নাসরুল্লাহকে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন।
শীর্ষ এ কমান্ডারের আত্মত্যাগের প্রশংসা করে ইরানের স্পিকার বলেছেন, হিজবুল্লাহর এই বীর শহীদ তার জীবনের বহু বছর ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই করে কাটিয়েছেন। হিজবুল্লাহ নিশ্চয় লেবাননের সেরা একজনকে হারিয়েছে কিন্তু এতে ইসরাইল-বিরোধী জিহাদি বাহিনীর প্রতিরোধ জোরদার হবে।
শোক বার্তায় ড. লারিজানি কমান্ডার বদরুদ্দিনের পরিবার-পরিজনের প্রতি শোক এবং সমবেদনা জানান। সিরিয়ায় যেসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৎপর রয়েছে ইসরাইল তাদের অন্যতম সমর্থক।
গত কয়েক বছর ধরে হিজবুল্লাহ প্রতিরোধ যোদ্ধারা উগ্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে সহায়তা করছে। এছাড়া, সিরিয়ার বেশ কিছু এলাকা সন্ত্রাসমুক্ত করেছে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা।
সংগঠনটি বলে আসছে, সিরিয়া থেকে সন্ত্রাসীরা যাতে লেবাননের ভেতরে ঢুকে পড়তে না পারে সেজন্য তারা সিরিয়ার মাটিতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
স্মরণ করা যেত পারে- হিজবুল্লাহ গঠনে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সহায়তা করেছিল। সে ক্ষেত্রে হিজবুল্লাহর এই ক্ষতি ইরানের জন্যও বড় ক্ষতি বলে বিবেচিত হবে। সাথে সাথে একথাও স্মরণ রাখা দরকার যে, সৌদি আরব ও তার কয়েকটি আরব মিত্র গত কয়েক মাস ধরে হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে আখ্যা দিয়ে আসছে। সম্প্রতি যখন হিজবুল্লাহ ও সৌদি আরবের মধ্যে বাগযুদ্ধ তীব্রতর হয়েছে তখন কমান্ডার মুস্তাফা বদরুদ্দিন শহীদ হলেন। -পূর্বপিশ্চম
১৬ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম