বৃহস্পতিবার, ২৬ মে, ২০১৬, ১১:২৭:৫৮

পাইলট চেঁচিয়ে উঠলেন, কিন্তু আমি বাবাকে ছেড়ে নামতে পারছিলাম না : জুহি

পাইলট চেঁচিয়ে উঠলেন, কিন্তু আমি বাবাকে ছেড়ে নামতে পারছিলাম না : জুহি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিংয়ের সময় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি যখন মুখ থুবরে পড়ে, তখন যাত্রীদের অবস্থা কী হয়েছিল শুনলে আপনিও চমকে যাবেন।

দিল্লির নজফগড়ের কাছে বিচ কিং এয়ার সি-৯০এ প্লেন ধানক্ষেতের মধ্যে ল্যান্ড করে।  তখন তার মধ্যে ছিলেন ৭ জন যাত্রী।  তাদের মধ্যে ১ জনকে গুরুতর জখম অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তখন যেটা ঘটেছে তা সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা।  এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে পাটনা থেকে দিল্লি যাচ্ছিলেন জুহি রায়সহ তার অসুস্থ বাবা।

সেদিনের ঘটনা মনে করতেই শিউরে ওঠেন এখনো। 'প্লেন ল্যান্ড করার সময় পাইলট চেঁচিয়ে উঠলেন, দৌড়ান সবাই।  প্লেন দরজা খুলে দিতেই যাত্রীরা সবাই হুড়মুড় করে নামতে শুরু করেন।

কিন্তু আমি বাবাকে ছেড়ে নামতে পারছিলাম না।  বাবা তখনও স্ট্রেচারে শুয়েছিলেন। ইমার্জেন্সি ল্যান্ড করার সময় স্ট্রেচারটি একটু ক্ষতিও হয়েছিল।

দূর থেকে পাইলট চেঁচাছিলেন, সবাই নিরাপদ দূরত্বে চলে যান।  বিমানটি বিস্ফোরণ হতে পারে।  আমি নামলাম, কিন্তু বাবাকে সঙ্গে নিয়েই।  একহাতে স্ট্রেচারের একদিকটি ধরে দৌড়াতে থাকলাম।

তার মধ্যেই বিমান থেকে নামতে যাত্রীদের মধ্যে ঠেলাঠেলি লেগে গেছে।  আমি তখন কাঁদতে কাঁদতে চেঁচাতে শুরু করলাম, কেউ সাহায্য করুন প্লিজ।  

দেখি সবাই নিজের প্রাণ বাঁচাতে দৌড় লাগিয়েছে। অসহায় দেখে পাইলট এগিয়ে এলেন সাহায্য করতে। স্ট্রেচারে আরেক দিকটি ধরলেন তিনি।  

এরপর প্লেন থেকে বাবাকে বের করে নিরাপদে নিয়ে যেতে পেরেছিলাম।  এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন নয়ডার এমবিএ-এর ছাত্রী জুহি রায়।

একটুও না থেমে গড়গড় করে বলে যেতে থাকেন বাবাকে নতুন জীবন দেয়া এই বীরাঙ্গনা।  একটি গাছের তলায় সব যাত্রী একসঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিল।

কিন্ত সেই সময় জুহির মাথায় আসে, অক্সিজেনের সিলেন্ডার বিমানের মধ্যে পড়ে রয়েছে।  বাবাকে বাঁচাতে এটাই ছিল তার শেষ সম্বল।

সেটা আনতে আবার দৌড় দেন জুহি।  অন্যদিকে জুহির এ কর্মে রীতিমতো চিন্তায় ছিলেন সেখানকার উপস্থিত যাত্রীরা।  

কারণ যেকোনো সময় বিমানে বিস্ফোরণ হতে পারে। প্রাণ যেতে পারে জুহির।  কিন্তু নিজের জীবনকে পরোয়া না করে প্রাণ বাঁচালেন বাবার।  এটাই জীবনের সেরা কাজ করলেন জুহি।

তবে এখানেই শেষ নয়, তার কৃতিত্বে মুগ্ধ যাত্রীরাও। অসুস্থ বাবাকে তো বটেই, বাকি অসুস্থ যাত্রীদেরও সাহায্য করেন জুহি।

অক্সিজেন সিলেন্ডার আনার পর ফের বিমানের ভেতর যান, বাবার মেডিক্যাল ফাইলস আনতে।  এরপর ১০০ নম্বরে ডায়াল করে স্থানীয় থানা পুলিশে খবর দেন।  বলে দিন সঠিক লোকেশনও।  সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
২৬ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে