আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠন বজরং দলের অস্ত্র প্রশিক্ষণে মুসলিম সাজিয়ে টার্গেট হিসেবে ব্যবহারের একটি ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের পুলিশ অযোধ্যাতে বজরং দলের প্রধানকে গ্রেফতার করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে-পড়া ঐ ভিডিওতে দেখা গেছে, বজরং দলের স্বেচ্ছাসেবকরা আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য হাতিয়ার নিয়ে জঙ্গিদের মোকাবিলার মহড়া নিচ্ছে – আর তাদের আক্রমণের নিশানা হিসেবে যাদের ব্যবহার করা হয়েছে তারা দেখতে দাড়িওলা মুসলমানদের মতো।
ভারতের মুসলিম নেতারা এই ধরনের প্রশিক্ষণের কড়া নিন্দা করেছেন। যদিও শিবসেনার মতো হিন্দুত্ববাদী দলগুলো এর মধ্যে কোনও অন্যায় দেখছে না। বজরং দল – যারা বিজেপির সহযোগী বিশ্ব হিন্দু পরিষদেরই যুব শাখা – তারা অযোধ্যাতে এই অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিবিরটি আয়োজন করেছিল গত ১৪ই মে।
বাবরি মসজিদ-রামমন্দির বিতর্কের শহর অযোধ্যায় পরিষদের নিজস্ব ক্যাম্পাস করসেবকপুরমের ভেতরেই ওই শিবিরে বজরং দলের স্বেচ্ছাসেবকদের শেখানো হচ্ছিল বন্দুক-হাতিয়ার নিয়ে কীভাবে ইসলামী জঙ্গিদের মোকাবিলা করতে হবে।
ভিডিওতে দেখা গেছে যুবকরা বন্দুক নিয়ে শূন্যে গুলি ছুঁড়ছেন। সদলবলে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন ইসলামী পোশাক পরা সাজানো জঙ্গিদের ওপর। এ সপ্তাহের গোড়া থেকেই ঐ শিবিরের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
অযোধ্যার মতো একটি স্পর্শকাতর স্থানে বজরং দল কীভাবে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এই ধরনের শিবির আয়োজন করতে পারে, প্রশ্ন ওঠে তা নিয়েও। তবে উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল ও বিজেপির সাবেক নেতা রাম নাইক দাবি করেন এরকম প্রশিক্ষণ দেয়া যেতেই পারে।
মি. নাইক যুক্তি দেন, “গরু সংরক্ষণের জন্য সব ধরনের প্রশিক্ষণ জরুরি। যে নিজেকে বাঁচাতে পারে না, সে সমাজকে কীভাবে বাঁচাবে? গরুদের কীভাবে বাঁচাবে? কাজেই আত্মরক্ষার উপায় তো শেখাতেই হবে। অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে শুধু আপত্তি তুললেই তো হবে না, কী উদ্দেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে সেটাও দেখতে হবে।“
রাজ্যপাল নিজে শিবিরের আয়োজকদের সমর্থনে মুখ খুললেও পুলিশ শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েছে বজরং দলের অযোধ্যা-ফৈজাবাদ ইউনিটের প্রধান মহেশ মিশ্রকে গ্রেফতার করতে।
ফৈজাবাদ পুলিশের ডিআইজি ভি. কে. গর্গ জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে এই গ্রেফতারের আগেই হায়দ্রাবাদের মুসলিম নেতা ও এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি মন্তব্য করেন, “বজরং দলের এই অস্ত্র শিবির এটাই প্রমাণ করে যে মোদি সরকার দেশকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। দেশের সেনা-পুলিশের ওপর ভরসা থাকলে হাতে অস্ত্র ওঠাতে হবে কেন?”
“আর দেশের বিপদ নিয়ে যদি বজরং দল এতই চিন্তিত হয়, তাহলে তারা ছত্তিশগড়-ঝাড়খন্ডে গিয়ে মাওবাদীদের সঙ্গে লড়াই করুক না? কিংবা কাশ্মীর সীমান্তে গিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের মোকাবিলা করুক,“ বলেন ওয়াইসি।
বিজেপির পক্ষ থেকে এই শিবির আয়োজনের বিষয়কে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা হলেও তাদের সঙ্গী শিবসেনা আবার অস্ত্র প্রশিক্ষণের উদ্যোগকে সমর্থন করেছে।
শিবসেনার মুখপাত্র ও এমপি সঞ্জয় রাউত বজরং দল নেতার গ্রেফতারের নিন্দাও করেছেন।
রাউতের যুক্তি, “জঙ্গিরা যখন গোপনে দেশের ভেতরেই প্রশিক্ষণ শিবির চালায় – এমন কী উত্তরপ্রদেশে বসেও শিবির চালায় – তখন তারা কি সরকারের কাছ থেকে অনুমতির তোয়াক্কা করে?”
“আর তাদের সঙ্গে টক্কর নিতে আমাদের বাচ্চারা যখন প্রস্তুতি নেবে, তখন কেন তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে?” ফলে এই প্রশিক্ষণ শিবিরের পক্ষে-বিপক্ষে রাজনৈতিক বিতর্ক এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।
আগামী বছরের শুরুতে উত্তরপ্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভোটের আগে এই ধরনের সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক ঘটনা আরও ঘটবে বলেও পর্যবেক্ষকরা এখন থেকেই আশঙ্কা করছেন। বিবিসি
২৭ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম