আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যাঁরা এই ঘরে একরাত্রি কাটিয়েছেন তাঁরাই টের পেয়েছেন কোনও এক অদৃশ্য সত্ত্বার উপস্থিতি। অশরীরী কেউ যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে ঘরে, কিংবা লক্ষ করছে অতিথিদের চলাফেরা। বেড়াতে যেতে কে না ভালবাসেন? কিন্তু কেমন হয়, যদি বেড়াতে গিয়ে এমন হোটেলে উঠতে হয়, যেখানে রাতবিরেতে আপনার গা থেকে চাদর টেনে সরিয়ে দেবে ভূতে? কী ভাবছেন, ভূতের সিনেমার গল্প এসব? তাহলে জেনে রাখুন, এমন ভৌতিক হোটেল রয়েছে ভারতেই।
মু্ম্বই থেকে শ’খানেক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লোনাভেলা। আর সেখানেই রয়েছে হোটেল রাজ কিরণ নামের একটি হোটেল। বাইরে থেকে দেখে আর পাঁচটা সাধারণ হোটেলের মতোই মনে হবে। কিন্তু এই হোটেলের আসল রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এর ভিতরের একটি ঘরে। একতলায় রিসেপশনের ঠিক পিছনেই রয়েছে সেই অভিশপ্ত ঘরটি। যেখানে রাত্রি বেলা নাকি হানা দেয় অশরীরী আত্মারা।
যাঁরা এই ঘরে একরাত্রি কাটিয়েছেন তাঁরাই টের পেয়েছেন কোনও এক অদৃশ্য সত্ত্বার উপস্থিতি। অশরীরী কেউ যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে ঘরে, কিংবা লক্ষ করছে অতিথিদের চলাফেরা। এই ঘরে একরাত্রি কাটানো মুম্বইয়ের অরবিন্দ তাঁর যে অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন তা তো রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো। ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি আর তাঁর স্ত্রী লোনাভেলা ঘুরতে যান। অন্য কোনও নামিদামী হোটেলে ঘর না পেয়ে বাধ্য হন হোটেল রাজ কিরণে উঠতে। অবশ্য হোটেলটির বিশেষত্ব তখনও তাঁদের জানা ছিল না। কপালগুণে তাঁদের জন্য বরাদ্দ হয় ওই ভুতুড়ে ঘরটিই।
অরবিন্দ বলছেন, ‘‘আগেও অনেক হোটেলে থেকেছি। কিন্তু রাজ কিরণের মতো এত নির্জন হোটেল কখনও দেখিনি। প্রথম থেকেই আমাদের কেমন যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছিল। তবে ব্যাপারটাকে তেমন আমল দিইনি। স্বাভাবিকভাবে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম। ঘুমিয়েও পড়লাম। তারপর মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল। তাকিয়ে দেখি আমার স্ত্রীও জেগে রয়েছেন। তিনি আমায় ফিসফিস করে বললেন, ঘরের মধ্যে কেউ কি চলাফেরা করছে? আমারও কেমন যেন অনুভব হল কেউ একটা ঘুরে বেড়াচ্ছে ঘরের মধ্যে। আলো জ্বালিয়ে দেখি ঘরে কেউ নেই। ঘরের দরজা চেক করলাম ভিতর থেকেই লক করা রয়েছে। সবটাই মনের ভুল ভেবে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম।
একটু পরে যা ঘটল তা মনে পড়লে এখনও গায়ে কাঁটা দেয়। দেখি, আমার স্ত্রীয়ের গায়ের চাদরটা কে যেন টেনে সরিয়ে নিচ্ছে গা থেকে। স্ত্রী আঁতকে উঠে আবার গায়ে টেনে নিলেন চাদরটা। সঙ্গে সঙ্গে আবার কেউ যেন টেনে সরিয়ে দিল সেটাকে। যতবার তিনি গায়ে চাপা দিতে যান, ততবার নিজে থেকেই সরে যায় চাদর।’’ ভয়ে আতঙ্কে জড়োসড়ো অবস্থায় কোনওক্রমে সেই রাতটা কাটে এই দম্পতির। পরের দিন সকাল হতেই ঘর পরিবর্তনের জন্য হোটেলে অনুরোধ জানান তাঁর। হোটেলের কর্মীরা নির্বিকার মুখে অন্য ঘর বরাদ্দ করে দেন দু’জনের জন্য। সেই ঘরে অবশ্য আর কোনও উপদ্রব হয়নি।
শুধু অরবিন্দরা নন, হোটেল রাজ কিরণের ওই ভৌতিক ঘরটিতে যাঁরা একরাত থেকেছেন তাঁদের সকলেরই কমবেশি একই অভিজ্ঞতা হয়েছে। কেউ কেউ তো ওই ঘরে একরাতে থাকার পর মানসিকভাবে রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মনোচিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে তাঁদের ফিরতে হয়েছে স্বাভাবিক জীবনে। ভুক্তভোগীর সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে বলেই হোটেল রাজ কিরণও কুখ্যাতি অর্জন করেছে। এখন আর চট করে কেউ থাকতে চান না এই হোটেলে। ট্যুরিস্ট সিজনেও বেশিরভাগ ঘর ফাঁকাই পড়ে থাকে। তবে আপনার রক্তে যদি থাকে রহস্য-রোমাঞ্চের নেশা তাহলে ঘুরে আসতে পারেন লোনাভেলা। আর সেক্ষেত্রে রাত কাটানোর জন্য যে হোটেল রাজ কিরণকেই বাছবেন, তা তো বলাই বাহুল্য।-এবেলা
৩ জুন, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ