আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কয়েকদিন আগেই পাকিস্তানের বিতর্কিত পরমাণু বিজ্ঞানী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে দিল্লিকে ছাই করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে পাকিস্তান৷ সেই রেশ কাটতে না কাটতেই ফের ভারতে পরমাণু হামলার হুমকি মুম্বাই হামলার মূল চক্রী হাফিজ সাঈদের৷
তবে হাফিজ যখন এই হুমকি যখন দিলেন, তখনই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিদেশ বিষয়ক পরামর্শদাতা সরতাজ আজিজ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন যে, নয়াদিল্লির সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালাতে পাকিস্তান মোটেও ‘উদগ্রীব’ নয়৷ সেই কারণে হাফিজের এই হুমকির কথা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে৷ যদিও কাদিরের মতোই হাফিজের হুমকিকেও একেবারে গুরুত্ব দিতে নারাজ নয়াদিল্লি৷ তবে হাফিজের এই মন্তব্যের পর গোটা ভারতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে৷
হাফিজের এই মন্তব্যের কারণেই পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রগারের নিরাপত্তা নিয়েই ফের একবার প্রশ্ন উঠল৷ ভারত ও আমেরিকা বারবার পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রগারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷ কিন্তু পাকিস্তান প্রতিবারই সেই দাবি একেবারে ফিরিয়ে দিয়েছে৷ দু’ দেশই রীতিমতো আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল যে, ভবিষ্যতে হয়তো পরমাণু অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ কার্যত জঙ্গিদের হাতেই চলে যেতে পারে৷
তবে এবার হাফিজের এই হুমকির ফলে কূটনৈতিক মহল প্রশ্ন তুলছে যে, তা হলে কি শেষ পর্যন্ত জঙ্গিদের হাতে চলে গিয়েছে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র? আর কূটনৈতিক মহলের ধারণা যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, তাহলে তা বিশ্বের পক্ষেই ক্ষতিকর৷ এমনটা হলে ভবিষ্যতে আইএসের হাতেও চলে যেতে পারে পরমাণু অস্ত্র৷ কারণ, কিছুদিন আগেই আইএস দাবি করেছিল যে, পরমাণু অস্ত্র পেতে আর অল্প সময়ের অপেক্ষা৷
কিছুদিন আগেই মুম্বাই হামলার মূল তথা জামাত-উদ-দাওয়া প্রধান হাফিজ সাঈদের গতিবিধি সম্পর্কে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে৷ ওই রিপোর্টের বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গিয়েছে৷ সাঈদ সাম্প্রতিককালে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত অঞ্চলের প্রচুর জঙ্গি ঘাঁটিতে গিয়েছেন৷ সেখানকার জঙ্গিদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠকও করেছেন৷
প্রসঙ্গত, ভারত সীমান্তে লেজার ওয়াল দেয়ার পর থেকেই অনুপ্রবেশ কঠিন হয়ে গিয়েছে৷ সেই কারণে নতুন করে জঙ্গি নিয়োগ থেকে জঙ্গি-প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখছেন স্বয়ং হাফিজ৷ এমনকী, কয়েকদিন ধরেই সীমান্তবর্তী প্রায় ১০টি গ্রামে ভাষণ দিয়েছেন হাফিজ৷ আর সেখানেই বারবার ভারতে পরমাণু অস্ত্রের হুমকি দিয়েছেন৷
সেরকম একটি ভাষণে মুম্বাই হামলার প্রধান বলেছেন, “ভারতীয় সেনা ছাউনি থেকে যদি একটি ড্রোন হামলাও হয়, তা হলে আমাদের কাছেও ভারতে হামলা চালানোর জন্য রয়েছে পরমাণু অস্ত্র৷” গোপন সূত্রে জানা গিয়েছে যে, এ বছরের প্রথমদিকে সাঈদের পরামর্শ মেনেই ভারত বিরোধী সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানোর জন্য প্রচুর জঙ্গি নিয়োগ করেছে পাক-গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এবং পাক-সেনা৷
এমনকী, ওই জঙ্গিদের প্রশিক্ষণেও প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে নওয়াজ শরিফ প্রশাসন৷ ২০০৮ সালে জাতিসংঘ সাঈদকে সন্ত্রাসী হিসেবে নাম ঘোষণা করেছে৷ তার জঙ্গি সংগঠনকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ তবুও পাকিস্তানে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন হাফিজ৷ পাকিস্তান সন্ত্রাসী কার্যকলাপে কোনো মদত দেবে না বলে ঘোষণা করা সত্ত্বেও হাফিজের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না পাক প্রশাসন৷ পাকিস্তানের এই দ্বিচারিতার সমালোচনা করেছে গোটা বিশ্বই৷ এমনকী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও সন্ত্রাস বন্ধে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন৷
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্কর ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন যে, পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি আলোচনার পথ আস্তে হলেও এগোচ্ছে৷ এমনকী, ইসলামাবাদের সঙ্গে সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে যে নয়াদিল্লি সব সময় পা এগিয়ে রেখেছে, তার নজির এর মধ্যেই দিয়েছে তারা৷ পারিক্করের সেই দাবিকে একবারে উড়িয়ে দিয়ে সরতাজ আজিজ জানিয়েছেন যে, নয়াদিল্লির সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য কোনোভাবেই উদগ্রীব নয় ইসলামাবাদ৷ কারণ প্রতিবার শেষ মুহূর্তে ভারত পিছিয়ে এসেছে৷ যদিও আজিজের মন্তব্যের বিষয়ে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি৷-সংবাদ প্রতিদিন
৭ জুন, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই