সোমবার, ২০ জুন, ২০১৬, ০৬:৫৭:২৮

৩ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ

৩ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :সারা পৃথিবীর অন্তত ৬ কোটি মানুষ এখন বাস্তুচ্যুত, যাঁদের মধ্যে ২ কোটি ১৩ লাখ শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। এঁদের অর্ধেকের বেশি শিশু, যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। আর বিশ্বের ৫৪ ভাগ শরণার্থীই আসছেন পৃথিবীর তিনটি মাত্র দেশ থেকে। দেশগুলো হলো সোমালিয়া, আফগানিস্তান ও সিরিয়া।

জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) এই তথ্যই বলছে বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরাক ও সিরিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বে প্রতিদিনই শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশেও ৩ থেকে ৫ লাখ শরণার্থী রয়েছেন, যাঁদের প্রায় সবাই রোহিঙ্গা। এ ছাড়া এই মুহূর্তে অন্তত ১১ হাজার বাংলাদেশি আছেন, যাঁরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি নিয়েছেন।

এমন পরিপ্রেক্ষিতেই আজ ২০ জুন সোমবার সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবস পালিত হবে।

যুদ্ধবিগ্রহসহ নানা কারণে বিশ্বব্যাপী মানুষের উদ্বাস্তু হওয়ার ঘটনা নিয়ে গত বছরের শেষে ‘মিড-ইয়ার ট্রেন্ডস-২০১৫’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউএনএইচসিআর। তাতে বলা হয়, পৃথিবীতে শরণার্থী বা শরণার্থীর মতো অবস্থায় আছেন ৫ কোটি ৭৯ লাখ ৫৯ হাজার ৭০২ জন। ২০১৪ সালে যেখানে শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৯৫ লাখ, সেখানে ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে এসে সেই সংখ্যা পৌঁছায় ২ কোটি ২০ লাখে। ১৯৯২ সালের পর এই প্রথম বিশ্বব্যাপী শরণার্থীর সংখ্যা ২ কোটি ছাড়িয়ে গেল।

ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যে দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি শরণার্থী রয়েছেন, তার মধ্যে তুরস্কে ২৫ লাখ, পাকিস্তানে ১৬ লাখ, লেবাননে ১১ লাখ, ইরানে প্রায় ১০ লাখ, ইথিওপিয়ায় পৌনে ১০ লাখ ও জর্ডানে প্রায় ৭ লাখ শরণার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া কেনিয়ায় প্রায় ৬ লাখ, উগান্ডায় ৪ লাখ ২৮ হাজার, চাদে ৪ লাখ ২১ হাজার, সুদানে ৩ লাখ ২২ হাজার, ইরাকে ২ লাখ ৮৮ হাজার ও সিরিয়ায় দেড় লাখ শরণার্থী রয়েছেন। এ বছর এখন পর্যন্ত ২ লাখ ১১ হাজার ৫৬৩ জন ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে আশ্রয় নিয়েছেন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১০ লাখের বেশি।

চলতি বছরের ১১ মে ঢাকা সফরে এসে বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নাগরিক সমাজের উদ্দেশে কথা বলতে গিয়ে সুইডেনের বিচার ও অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী মরগান জোহানসন বলেন, ইরাক ও সিরিয়া যুদ্ধ অভিবাসী ও শরণার্থীর সংখ্যা বাড়িয়েছে। তাঁর মতে, যত দিন যুদ্ধ ও সংঘাত থাকবে, তত দিন এই সমস্যার সমাধান হবে না।

বর্তমানে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে এবং শরণার্থীর মতো অবস্থায় আছেন ৩ থেকে ৫ লাখ মানুষ। এঁদের মধ্যে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত আছেন ৩২ হাজার ৮৯৪ জন রোহিঙ্গা। বাকি ২ থেকে ৫ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। তবে সরকারিভাবে যে রোহিঙ্গা শুমারি শুরু হয়েছে, তাতে এই সংখ্যা ৩ লাখ বলে তথ্য মিলেছে। এঁদের বেশির ভাগই মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় রোহিঙ্গারা দেশে ফিরে যাক। সেটা হবে তাদের জন্য মর্যাদার। এতে আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান হবে।’

ভাগ্যের সন্ধানে বিদেশে যাওয়া অনেক বাংলাদেশিই উন্নত জীবনের জন্য বিদেশে গিয়ে শরণার্থী হিসেবে নাম লেখান। ইউএনএইচসিআরের ঢাকা কার্যালয় থেকে গতকাল জানা গেল, গত বছর পর্যন্ত নানা দেশে মোট ৩২ হাজার ৯৭৭ জন বাংলাদেশি ইউএনএইচসিআরের সহায়তা চেয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ১০ হাজার ৮৮১ জন শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি রিসার্চ মুভমেন্ট (রামরু) সমন্বয়ক সি আর আবরার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা পৃথিবীতেই শরণার্থী সমস্যা বাড়ছে। ২০১৬ সালে ইউরোপে যাঁরা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁদের ৯০ ভাগই এসেছেন সিরিয়া, আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে। এর মানে হলো যুদ্ধের কারণেই এখন শরণার্থী সমস্যা বাড়ছে। কাজেই যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আর বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যা বলতে গেলে মূল সমস্যা রোহিঙ্গা। ৩ থেকে ৫ লাখ রোহিঙ্গা আছেন। তাঁদের বিষয়ে আমাদের যেমন মানবিক হতে হবে, তেমনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও সমস্যা সমাধানে নজর দিতে হবে।-প্রথম আলো

 ২০জুন২০২৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এআর/এমএম

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে