আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ব্রেক্সিট নাকি রিমেইন? আপনি কি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে, নাকি থাকার পক্ষে?
এই এক প্রশ্ন ব্রিটেন জুড়ে। আর একদিন পরেই গণভোট। ব্রিটেনের জনমত একেবারে বিভক্ত। যে কোন দিকে যেতে পারে ফল।
কিন্তু এই গণভোটের সঙ্গে ব্রিটেনের বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টের ব্যবসার কি সম্পর্ক? কিংবা বাংলাদেশ থেকে আনা মাছ-মাংস-সব্জির?
গণভোট সামনে রেখে আর সবার মতো ব্রিটেনের বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরাও জড়িয়ে পড়েছেন তীব্র বিতর্কে। একটি অংশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে। অন্যরা থাকার পক্ষে।
দুই পক্ষই তাদের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি-তর্ক তুলে ধরছেন। অনেকে নেমে পড়েছেন গণভোটের প্রচারণায়।
ব্রিটেনে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কাজ করেন যে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়, দক্ষ কর্মীর অভাবে সেই ব্যবসা এখন সংকটে।
একটা সময় ছিল, যখন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দক্ষ কর্মী নিয়ে আসতেন।
কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন আসে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়।
বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনা বন্ধ করে দেয়া হয়। রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ হয়ে যেতে থাকে দক্ষ কর্মীর অভাবে।
“রেস্টুরেন্ট মালিকরা দেখলেন, যেখানে তারা বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনতে পারছেন না, সেখানে ইউরোপ থেকে বিনাবাধায় যে কেউ ব্রিটেনে চলে আসতে পারে, কাজ করতে পারে। এটা তাদের একটা বিরাট ক্ষোভের কারণ”, বলছিলেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট এবং ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডসের প্রতিষ্ঠাতা এনাম আলী।
এই ক্ষোভ থেকে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট মালিকরা গণভোটে ইউরোপ ছাড়ার পক্ষে জোরে-শোরে প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করছিলেন এনাম আলী।
“রেস্টুরেন্ট মালিকরা মনে করেন যখন ইউরোপ থেকে লোক আসা বন্ধ হয়ে যাবে, তখন নন-ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে কর্মী আনার সুযোগ খুলে যাবে। তারা মনে করছেন বাংলাদেশ থেকে বা ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়ে আসার ক্ষেত্রে একটা সুযোগ তখন তৈরি হবে।”
উপমহাদেশ থেকে লোক আনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ব্রিটেনের অনেক বাংলাদেশি বা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট পূর্ব ইউরোপীয় দেশ থেকে আসা লোকজনকে কাজে নিতে শুরু করে। অনেক রেস্টুরেন্টে পোলিশ, রোমানিয়ানদের এখন কাজ করতে দেখা যায়।
ব্রিটেন ইইউ ছাড়লে এদের জায়গায় আবারও ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে কর্মী আনার সুযোগ দেয়ার জন্য রেস্টুরেন্ট মালিকদের সংগঠনগুলো সরকারের সঙ্গে লবিং করছে।
কিন্তু এনাম আলী বলছেন, সেরকম সম্ভাবনা নেই, প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ডাউনিং স্ট্রীটে তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে সেটা পরিস্কার করে দিয়েছেন।
ব্রিকলেন টু ইউরোপ : গণভোটের এই ডামাডোলের মধ্যেই ব্রিক লেনে চলছিল ব্রিটেনের পোশাক রফতানিকারকদের এক বিরাট মেলা। সফল বাংলাদেশি উদ্যোক্তা মামুন চৌধুরি মেলায় অংশগ্রহনকারীদের একজন।
মামুন চৌধুরি তার পূর্ব লন্ডনের কারখানায় যেসব শীতের কোট তৈরি করেন, সেগুলো রফতানি হয় মূলত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। সেরা রফতানিকারক হিসেবে তিনি রাণীর কাছ থেকে পুরস্কারও পেয়েছেন। তিনি ব্রিটেনের ইইউ ছাড়ার ঘোরতর বিরোধী।
“আমার ব্যবসার আশি শতাংশ কাঁচামাল আমি ইউরোপ থেকে আমদানি করি। কোন রকম ট্যাক্স, ভ্যাট ছাড়া আমি এসব কাঁচামাল আনছি। যখন আমরা ইইউ থেকে বেরিয়ে যাব, তখন আমার ব্যবসার খরচ অনেক বেড়ে যাবে।”
মামুন চৌধুরির আরও আশংকা, ব্রিটেন ইইউ ছাড়লে পাউন্ডের বড় দরপতন ঘটবে। সেটাও তার কাঁচামালের আমদানি খরচ আরও বাড়িয়ে দেবে।
ব্রিটেনের আরেক সফল বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ইকবাল আহমেদের আশংকাও তাই। তার কোম্পানি ইবকো বাংলাদেশ সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে মাছ এবং কাঁচা শাকসব্জি আমদানি করে। এরপর সেগুলো আবার ব্রিটেন থেকে রফতানি করা হয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে।
"আমাদের ব্যবসার বড় অংশ ইউরোপের সঙ্গে। ব্রিটেন ইউরোপ ছাড়লে সেটা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সেজন্যে গণভোটে আমরা ইউরোপে থাকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছি", বলছিলেন তিনি।
ব্রিটেন জুড়ে গণভোট সামনে রেখে এখন কেবল এই লাভ-ক্ষতির হিসেব চলছে। ২৩শে জুনের গণভোটে কি সিদ্ধান্ত হয় তা নিয়ে সবাই আছেন অনিশ্চয়তায়।-বিবিসি
২২ জুন, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই