আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সফল ভাবেই দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করল কানাডার উদ্ধারকারী বিমান। ইতিহাসে এই নিয়ে তৃতীয়বার এমন ভয়ঙ্কর শীত আর একটানা রাতের দক্ষিণ মেরুতে কোনও বিমান নামল। রীতিমতো ঝুঁকি নিয়েই সেখানে পৌঁছে গেছেন উদ্ধারকারী দলের চার সদস্য। দক্ষিণ মেরুর মার্কিন গবেষণা কেন্দ্রের অসুস্থ এক বা দু’জন কর্মীকে উদ্ধার করে আনতে এই অভিযান। উদ্ধারকারী ছোট্ট ওট্টার বিমানটিতে আছেন একজন পাইলট, একজন কো-পাইলট, একজন চিকিত্সক এবং একজন ইঞ্জিনিয়ার।
ভয়ঙ্কর শীতের আন্টার্কটিকায় এখন মাসের পর মাস সূর্যহীন আকাশ। শুধুই রাত। প্রাকৃতিক আলোর উত্স বলতে শুধু চাঁদ আর তারা। তাপমাত্রা -৭৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এ আন্টার্কটিকা এখন প্রায় অগম্য। আর এর মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন দক্ষিণ মেরু গবেষণা কেন্দ্রের দু’জন। চিকিত্সক থাকলেও ওখানে রেখে চিকিত্সা সম্ভব নয়। অন্তত একজন অসুস্থের ক্ষেত্রে। তাই তাঁকে তুলে আনতেই এই ঝুঁকির অভিযান। দশ ঘণ্টা ওড়ার পর শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার অস্থায়ী রানওয়েতে নিরাপদে নেমে পড়েছে বিমান। এ বার অসুস্থদের ফিরিয়ে আনার পালা।
ষোল-সতেরো বছর আগেও এ ধরনের উদ্ধার অভিযান অসম্ভব ছিল। ১৯৯৯ সাল। দক্ষিণ মেরুর এই অ্যামান্ডসেন-স্কট গবেষণাগারের চিকিত্সকের ডান স্তনে গজিয়ে ওঠা মাংসপিণ্ড ধরা পড়েছিল এমন শীতকালেই। সেই চিকিত্সক নিজেই সেই মাংসপিণ্ড থেকে টিস্যু সংগ্রহ করে নিজেই বয়োপসি করেন। ধরা পড়ে ক্যানসার। নিজেই নিজের কেমোথেরাপি শুরু করেন তিনি। কোনও উপায় ছিল না ফিরে আসার। কে যাবে, কী ভাবেই বা যাবে ওই দুর্গম প্রদেশে? তার ছ’মাস পর আবহাওয়া বদলালে, শীত কমলে, ফিরিয়ে আনা হয়েছিল তাঁকে।
অ্যামান্ডসেন-স্কট গবেষণাগার
জনমানবহীন, দুর্গম দক্ষিণ মেরুতে এই মার্কিন গবেষণাগারটি গড়ে ওঠে ষাট বছর আগে। ছ’মাসের বেশি এখানে সূর্যের আলো পড়ে না। তার মধ্যে তিন মাস, মার্চ থেকে জুন, টানা নিকষ কালো রাত্রি। এমন এলাকায় গিয়ে বসবাসের তুলনায় পাণ্ডবদের বনবাসও কিছু নয়। লোক নেই, জন নেই। গাছপালা থাকা সম্ভব নয়। কয়েকটা মাত্র প্রজাতির মেরুদণ্ডী প্রাণীর বাস। শীত বাড়তে বাড়তে এক সময় তাপমাত্রা নেমে আসে -১২৮ডিগ্রি ফারেনহাইটে (প্রায় -৮৯ডিগ্রি সেলসিয়াস)। এই দুর্গম নির্জন প্রদেশে বসেই গবেষণার কাজ করে চলেছেন এক দল মানুষ। শুধু আমেরিকাই নয়, দক্ষিণ মেরুতে গবেষণা কেন্দ্র তৈরি করেছে আরও অনেক দেশ।
কী হয় এই সব গবেষণা কেন্দ্রে? আমেরিকার এই অ্যামান্ডসেন-স্কট গবেষণাকেন্দ্রটা চালায় সে দেশের পোলার প্রোগ্রাম ফর ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন। পরিবেশ, জলবায়ু, আবহাওয়া পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা চলে এখানে। আছে দুটো রেডিও টেলিস্কোপ যা দিয়ে ব্রহ্মাণ্ডের আদি সময়কে খুঁজে চলেছেন এক দল গবেষক। আছে আইস কিউব নিউট্রিনো অবজারভেটরি যা দিয়ে পরমাণুর গভীরের সব কণাদের গতিবিধি, আচার ব্যবহার নজর করা হয়। নির্জন প্রান্তরে বসে এ ভাবেই চলে বিজ্ঞানের মহাযজ্ঞ।
২৩জুন২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এআর