শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬, ০২:২৮:০৫

অশ্রুভেজা কণ্ঠে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

অশ্রুভেজা কণ্ঠে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে এবার পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। গণভোটে ব্রিটিশ জনগণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার রায় দেয়ার প্রেক্ষিতে এ ঘোষণা দেন তিনি।

শুক্রবার ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে এক সংবাদ সম্মেলনে এক আবেগময়ী ভাষণে তিনি ওই ঘোষনা দেন। তিনি জানিয়েছেন, আগামী অক্টোবরে তিনি দায়িত্ব ছাড়বেন।

এর আগে বৃহস্পতিবারের গণভোটের রায়কে ডেভিড ক্যামেরন ‘মহান গণতান্ত্রিক চর্চা’ বলে মন্তব্য করেন যাতে ইইউ ছাড়ার পক্ষে ভোট পড়েছে ৫২ শতাংশ। ক্যামেরন ইইউতে থাকার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন। এরপক্ষে পড়েছে মাত্র ৪৮ শতাংশ ভোট।

স্ত্রী সামান্থাকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন ডেভিড ক্যামেরন। তিনি এখানে বলেন,  ছয় বছর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের সেবা করতে পেরে তিনি গর্বিত। কিন্তু ইইউ ত্যাগের আলোচনার ‘জাহাজের ক্যাপ্টেন হতে চান না’ তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি কিছু লুকাইনি। আমি আমার এই বিশ্বাসে স্পষ্ট ছিলাম যে ইইউর ভেতরেই ব্রিটেন অধিকতর শক্তিশালী, নিরাপদ ও উন্নততর। গণভোটেই আমি এটাই বলেছি।কিন্তু ব্রিটিশ জনগণ সুস্পষ্টভাবে ভিন্নপথ নিয়েছে এবং আমি মনে করে এই পথযাত্রায় জাতির দরকার নতুন নেতৃত্ব।’

চোখে জল নিয়েই ক্যামেরন বলেন, তিনি সহসাই সরে দাঁড়াচ্ছেন না এবং তিনি আগামী সপ্তাহ ও মাসগুলোতে মার্কেট স্থিতিশীল রাখতে কাজ করে যাবেন। আগামী অক্টোবরে ক্ষমতাসীন টোরি দলের কাউন্সিলে নতুন প্রধানমন্ত্রী ঠিক করা হবে বলে জানান তিনি।

যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকবে কি না, তা নিয়ে গণভোটের ঘোষণা গত বছর দিয়েই দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসেছিলেন ৪৯ বছর বয়সী ক্যামেরন। বিরোধী লেবার পার্টির অনেকে ক্যামেরনের পদত্যাগ চাইলেও দলটির প্রধান জেরমি করবিন বলেছিলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীরই।

মূলত ইউকে ইনডিপেনডেন্স পার্টির চাপের মুখেই ইউরোপের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট ছাড়ার গণভোটের দিকে যেতে হয় ক্যামেরনকে। যুক্তরাজ্যকে ইউরোপীয় জোট থেকে বের করে আনার লক্ষ্যে কিছু ডানপন্থি রাজনীতিবিদের উদ্যোগে ১৯৯১ সালে গঠিত হয় ইউকে ইনডিপেনডেন্স পার্টি। ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ে এই দল বেশ পরিচিতিও পায়।

২০১৩ সালে নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বে দলটি স্থানীয় কাউন্সিল নির্বাচনে সাফল্য পায় এবং প্রতিনিধিত্বের বিচারে যুক্তরাজ্যের চতুর্থ শক্তিশালী দলে পরিণত হয়।

ইনডিপেনডেন্স পার্টির এই উত্থান কনজারভেটিভ পার্টির জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। কনজারভেটিভ সমর্থকদের অনেকেই ইনডিপেনডেন্স পার্টির দিকে ঝুঁকে পড়েন। এমনকি একজন এমপিও এক পর্যায়ে দল বদলে ইনডিপেনডেন্স পার্টিতে যোগ দেন।

এরপর ইনডিপেনডেন্স পার্টির ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী প্রচার আরো জোর পায়। সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও কনজারভেটিভদের প্রতি সমর্থনের ঘাটতি দেখা যায়।

এই পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে অনেকটা চাপের মুখেই ইইউ প্রশ্নে গণভোটের প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য হন কনজারভেটিভ নেতা ডেভিড ক্যামেরন।

তবে এবার ভোটের আগে তিনি ব্রিটিশ নাগরিকদের সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘এই গণভোটের রায়ে যুক্তরাজ্য নিঃসঙ্গ হয়ে পড়তে পারে, যেখান থেকে ফিরে আসার পথ নেই।’ ভোটে হারের পর এখন নিজেই ডাউনিং স্ট্রিট ছাড়ার পথে এগোনার ঘোষণা দিলেন তিনি।
২৪ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে