আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দেশের নাম কী? ছাত্রের জবাব, ‘পশ্চিমবঙ্গ’। কোন রাজ্যে বাস করো? প্রশ্নকর্তাকে হতভম্ব করে দিয়ে উত্তর এল, ‘বাংলাদেশ’।
ছাত্রটি অষ্টম শ্রেণির। আর প্রশ্নকর্তা বর্ধমানের জেলাপ্রশাসক সৌমিত্র মোহন। সোমবার দুপুরে রাজ্যের একটি স্কুলে আচমকা পরিদর্শনে গিয়ে ছাত্রটির মুখে এসব শুনে প্রায় ভিরমি খাওয়ার অবস্থা হল তাঁর।
এদিন সকাল থেকে পরপর জেলার পাঁচটি স্কুলে ‘সারপ্রাইজ ভিজিটে’ যান জেলাশাসকের নেতৃত্বে পরিদর্শক দল। তবে শুধু খারাপ নয়, পরিদর্শকদের জন্য চমকও ছিল। এক কেজি লোহা ভারী, না এক কেজি তুলো? এই প্রশ্নের উত্তর পরিদর্শকদের রীতিমতো হাতেকলমে বুঝিয়ে ছেড়েছে একটি প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা। সৌমিত্র বলেন, ‘‘খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে ঠিক। কিন্তু গ্রামে অসংখ্য মেধার সন্ধান মিলেছে। এদের সঠিক পরিচর্যার প্রয়োজন। এই ‘সারপ্রাইজ ভিজিটে’র মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়নেরই চেষ্টা করছি।’’
বর্ধমান শহর থেকে ন’কিলেমিটার দূরে রাইপুর-কাশিয়াড়া হাইস্কুলে এদিন সকালে পৌঁছন পরিদর্শকেরা। অষ্টম শ্রেণির ঘরে ঢুকে বিভিন্ন সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন করতে থাকেন তাঁরা। সেখানে এক ছাত্রের মুখে দেশ ও রাজ্যের নাম যথাক্রমে ‘পশ্চিমবঙ্গ’ এবং ‘বাংলাদেশ’ শুনে দৃশ্যত হতভম্ব হয়ে পডেন জেলাপ্রশাসক এবং তার সঙ্গী ডিপিও (জেলা সর্বশিক্ষা মিশন আধিকারিক) স্বরদ্যুতি চৌধুরী এবং জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদের সভাপতি অচিন্ত্য চক্রবর্তী। অস্বস্তিতে পড়েন উপস্থিত শিক্ষকেরাও।
ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক উত্তম ভৌমিক বলেন, ‘আমাদের কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়ে সতর্ক করেছেন। একইসঙ্গে মেধাবী পড়ুয়াদেরও পরিদর্শকেরা পেয়েছেন। তবে একজন ছাত্র দেশ এবং রাজ্যের নাম ভুল বলায় আমরা লজ্জিত। এ ধরনের ছাত্রদের জন্য আলাদা ক্লাসের ব্যবস্থা করছি।’
আউশা প্রাথমিক স্কুলের এক শিক্ষকের অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাওয়া হলে প্রধানশিক্ষক বলেন, ‘আমাকে সকাল ৯টায় অনুপস্থিত শিক্ষক আসতে পারবেন না জানিয়েছেন।’ সন্দেহ হওয়ায় জেলাশাসক প্রধানশিক্ষকের মোবাইল ফোনের ‘কল-লিস্ট’ দেখতে চান। কিন্তু তাতে অনুপস্থিত শিক্ষকের ফোন করার কোনও প্রমাণ মেলেনি। সত্যি কথা না বলার জন্য প্রধানশিক্ষক ক্ষমা চেয়ে নেন।
পরে জেলাশাসক বলেন, ‘প্রধানশিক্ষক এবং অনুপস্থিত শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিস দেব।’ এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, অনুপস্থিত শিক্ষক মাঝেমধ্যেই আসেন না স্কুলে।
লোহা-তুলো নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে কুচুট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদে পড়ুয়াদের ব্যাখ্যায় খুশি হয়েছেন পরিদর্শকেরা। জেলাশাসক বলেন, ‘‘বুদ্ধিমত্তা-সহ ব্যাখ্যা শুনে সত্যিই আশ্চর্য হয়ে গিয়েছি। আমরা নগদ ৫০০ টাকা দিয়ে ওই পড়ুয়াদের পুরস্কৃত করেছি।’
তবে স্বরদ্যুতি জানিয়েছেন, বেশ কিছু জায়গায় শিক্ষকদের না জানিয়ে অনুপস্থিতি, মিড-ডে মিল, বাথরুমের ব্যবহার বিধি, অপরিচ্ছন্নতা, পড়ুয়াদের কম হাজিরা, পড়ানোর পদ্ধতি নিয়ে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে ভাল শিক্ষক এবং স্কুলকে আগামী অক্টোবর মাসে পুরস্কৃত করা হবে।-এবেলা
২৮ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন