আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ব্রেক্সিট গণভোটে ‘লিভ’ অর্থাৎ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে ‘বেরিয়ে’ যাওয়ার পক্ষে যারা প্রচারণা চালিয়েছেন তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিকদের একজন নাইজেল ফারাজ।
ব্রিটেনে মি. ফারাজের রাজনীতিও গড়ে উঠেছে এই ইউরোপীয় জোটের বিরোধিতাকে ভিত্তি করে।
ক্ষমতাসীন কনসারভেটিভ দলের শীর্ষস্থানীয় বহু নেতা বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে প্রচারণা চালালেও বলা যায় ব্রেক্সিটের প্রতীক বা মুখ হয়ে উঠেছিলেন এই নাইজেল ফারাজ।
তার দলের নাম ইউ কে ইন্ডিপেন্ডেস পার্টি বা ইউকিপ। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টেরও একজন সদস্য তিনি।
গণভোটে ৫২-৪৮ ভোটে ‘লিভের’ জয়লাভের চারদিন পর মি. ফারাজ আজ মঙ্গলবার যখন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে প্রথমবারের মতো উপস্থিত হলেন তখন তিনি অন্যান্য রাজনীতিকদের তোপের মুখে পড়েন।
কোনো ধরনের রাখঢাক বা লুকোছাপা না করেই তারা মি. ফারাজের ওপর তাদের রাগ ও ক্ষোভ ঝেড়েছেন। এমনকি অভিবাসনবিরোধী এই ব্রিটিশ রাজনীতিকের বিরুদ্ধে ‘নাৎসি প্রচারণা’ চালানোরও অভিযোগ আনা হয়েছে।
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রধান জ্যঁ ক্লদ ইয়ুঙ্কার তার ভাষণের এক পর্যায়ে বলেন যে ‘ব্রিটিশ জনগণের ইচ্ছাকে’ সম্মান জানাতে হবে। তার এই বক্তব্যের সময় হাততালি দিয়ে উঠেন পাশে থাকা নাইজেল ফারাজ।
মি. ইয়ুঙ্কার তখন নাইজেল ফারাজের দিকে ঘুরে বলেন, “আমি খুব অবাক হচ্ছি যে আপনি এখানে। আপনি তো বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন, ব্রিটিশ জনগণও বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে। তো, আপনি কেনো এখানে? মনে রাখবেন আপনি এখানে শেষবারের মতো তালি বাজাচ্ছেন।”
তার ডান পাশে বসেছিলেন মি. ফারাজ। এসময় তিনি হাসছিলেন। তার টেবিলের ওপর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পতাকা।
মি. ইয়ুঙ্কার তখন বলতে থাকেন, “খুবই দুঃখজনক। আমিতো কোনো রোবট না। আমি একজন মানুষ।”
অন্যান্য রাজনীতিকরাও আরো এক ধাপ এগিয়ে মি. ফারাজকে আক্রমণ করেছেন। বেলজিয়ামের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গাই ফেরহফস্টাড বলেছেন, মি. ফারাজ তার প্রচারণার সময় ‘নাৎসি প্রোপাগান্ডা’ চালিয়েছেন।
ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টি গ্রুপের চেয়ারম্যান মানফ্রেড ভেবার নাইজেল ফারাজকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “ব্রিটিশ জনগণের কাছে ক্ষমা চান। আপনার লজ্জা পাওয়া উচিত। ব্রাসেলসকে আক্রমণ করা বন্ধ করুন।”
তখন আর মুখ বন্ধ করে বসে থাকেননি নাইজেল ফারাজ। ইউরোপীয় নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ব্যর্থতার অভিযোগ এনে পাল্টা আক্রমণ করে তিনি বলেন, “আপনারা সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করছেন।”
“আমরা ইউরোপ মহাদেশজুড়ে গণতন্ত্রকামীদের জন্যে আশার সঞ্চার করেছি। মনে রাখবেন, ব্রিটেনই একমাত্র সদস্য দেশ হবে না যারা এই জোট ছেড়ে চলে যাবে।”
মি. ফারাজ যখন ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন অন্যান্যরা তাকে দুয়োধ্বনি দিতে থাকেন। তবে নাইজেল ফারাজকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন ফ্রান্স ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতা মাঁরি লঁ পেন। তিনি বলেছেন, ব্রিটেনের গণভোট হচ্ছে ইউরোপীয় সিস্টেমের ওপর চপেটাঘাত।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় নেতাদের রাজনীতি ভীতি, ব্ল্যাকমেইল ও মিথ্যায় পরিপূর্ণ।
মি. ফারাজ ছাড়াও আরো একজন ব্রিটিশ রাজনীতিকের সমালোচনা হয়েছে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে। তিনি কনসারভেটিভ দলের নেতা ও লন্ডনের সাবেক মেয়র বরিস জনসন। ধারণা করা হচ্ছে, ডেভিড ক্যামেরনের পদত্যাগের পর ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে তিনিও প্রার্থী হতে পারেন।
মি. জনসনের প্রচ্ছন্ন সমালোচনা করে সাবেক বেলজিয়ান প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা স্বার্থপর মানুষ, যে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্যে যা খুশি করতে পারেন।”-বিবিসি
২৮ জুন, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই