আর্যভট্ট খান : ছেলেকে সাত পাকে বাঁধতে গিয়ে নিজেই বিতর্কে বাঁধা পড়লেন ভারতের ঝাড়খণ্ডের সদ্য নিযুক্ত রাজ্য বিজেপি সভাপতি তালা মরান্ডি। একের পর এক বিতর্কের মধ্যেও কাল ধুমধাম করে হয়ে গেল বিয়ে। আসার কথা থাকলেও বিয়ের অনুষ্ঠানটি সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস। তবে তিনি না এলেও তার মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।
গোড্ডার বোরিয়ার বিধায়ক তথা রাজ্য সভাপতি তালা মরান্ডির ছেলে মুন্না মরান্ডির বিয়ে নিয়ে বিতর্ক শুরু দিন তিনেক আগে। গোড্ডারই এক আদিবাসী মহিলা মুন্না মরান্ডির বিরুদ্ধে পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগ করতে থানায় যান। তার অভিযোগ, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে দীর্ঘ দিন ধরে শারীরিক নিগ্রহ করেছে মুন্না। যদিও স্থানীয় থানা এই অভিযোগ প্রথমে নিতে চায়নি। তখন তিনি রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মহুয়া মাজির কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ নিতে বাধ্য হয় থানা। অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই বিয়ের কনে মমতা হাঁসদা, যার সঙ্গে মুন্নার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, বেঁকে বসেন। মমতা সাফ জানিয়ে দেন, ‘পাশবিক নির্যাতনে অভিযুক্ত ছেলেকে বিয়ে করতে পারব না।’
বুধবার বিয়ে। কার্ডে মুন্না ও মমতার নাম ছাপা হয়ে গিয়েছে। তার দু’দিন আগে মমতা বিয়ে করতে অস্বীকার করায় হইচই পড়ে যায়। এ দিকে, নির্ধারিত দিনেই মুন্নার বিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর তালা মরান্ডির পরিবারও। তড়িঘড়ি নতুন করে মেয়ে খোঁজা শুরু হয়। পাওয়াও যায় মেয়ে। গোড্ডারই লালমাটিয়া গ্রামের একটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করে ফেলেন তালা। নির্ধারিত দিনে মুন্নার বিয়ে হচ্ছে দেখে তালা মরান্ডির পরিবারের সবাই যখন হাঁফ ছেড়েছেন, তখনই গল্প অন্য দিকে মোড় নেয়।
কাল বিয়ের দিন দুপুরে জানা যায় লালমাটিয়ার যে মেয়েটির সঙ্গে ২১ বছরের মুন্নার বিয়ে ঠিক হয়েছে, তার বয়স ১১ বছর। নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করা নিয়ে যে রাজ্যে এত প্রচার চলছে সেখানে শাসক দলের সভাপতির ছেলেরই বিয়ে হচ্ছে নাবালিকার সঙ্গে! এই অভিযোগে সরব হন বিরোধীরা। কংগ্রেস বিধায়ক সুখদেব ভগত থেকে শুরু করে জেএমএম মহাসচিব সুপ্রিয় ভট্টাচার্য সকলেরই বক্তব্য, প্রথমে পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগ। এর পর নাবালিকাকে বিয়ে করার অভিযোগ। বিজেপির আসল চরিত্র এবার প্রকাশ পাচ্ছে।
এত সব বিতর্কের মধ্যেই অবশ্য গত কাল হয়ে গেল বিয়ের অনুষ্ঠান। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে মেয়েটি কি সত্যিই নাবালিকা? মেয়েটি যে স্কুলে পড়ে তার নথি কিন্তু বলছে মেয়েটির বয়স ১১। গোড্ডার মহাগামা এসডিএন অ্যাকাডেমির প্রধানশিক্ষক নারায়ণ মণ্ডল বলেন, ‘ওই মেয়েটি আমাদের স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলের নথি বলছে মেয়েটির জন্ম ২০০৫ সালের ২৫ জুলাই।’ যারা বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তাঁরা আবার বলছেন, দেখে কিন্তু মোটেও মনে হচ্ছে না মেয়েটির মাত্র ১১ বছর বয়স।
দিনভর টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মতো উত্তেজনার পরে অবশ্য মহা জাঁকজমকে বিয়ের অনুষ্ঠান হল গত রাতে। জমিয়ে খাওয়াদাওয়াও হল। কিন্তু বিতর্ক তালা মরান্ডির পিছু ছাড়েনি। গোড্ডার জেলাশাসক রাহুল সিনহা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘মুন্নার সঙ্গে যে মেয়েটির বিয়ে হল তার শারীরিক পরীক্ষা করে প্রকৃত বয়স নির্ধারণ করা হবে।’ জেলা চাইল্ড ম্যারেজ প্রোটেকশন অফিসার রীতেশ কুমার জানান, ‘সত্যিই যদি দেখা যায় মেয়েটি নাবালিকা, তা হলে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে এত বিতর্কের মধ্যেও ভেঙে পড়েননি রাজ্য বিজেপি সভাপতি। ছেলের বিয়েতে ফুল ও আলো দিয়ে সাজিয়েছেন বাড়ি। ছেলের উপর পাশবিক নির্যাতনের যে অভিযোগ উঠেছে, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বিরোধীরা।’ নাবালিকার সঙ্গে বিয়ে দিলেন কেন? তার জবাব, ‘আদিবাসী গ্রামের মেয়েদের জন্মের নথিপত্র অনেক সময়ই ঠিক থাকে না। স্কুলের নথিতে ভুল রয়েছে।’ -আনন্দবাজার
১ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস