সোমবার, ০৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:৫৫:২৩

আইএস প্রশ্নে ভারতীয় বিশ্লেষকদের ভিন্ন সুর

আইএস প্রশ্নে ভারতীয় বিশ্লেষকদের ভিন্ন সুর

শুভজ্যোতি ঘোষ : ঢাকার গুলশানে অভিজাত রেস্তোরাঁয় বন্দুকধারী জঙ্গিদের নৃশংস হামলার পর ভারতেও ইসলামিক স্টেট বা তাদের অনুসারী গোষ্ঠীগুলো অনুরূপ হামলার ছক কষতে পারে বলে সে দেশের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।

বাংলাদেশ সরকার যদিও দাবি করেছে গুলশানের হামলার সঙ্গে আই এসের কোনও সম্পর্ক নেই, ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এই মূল্যায়ন পুরোপুরি মানতে রাজি নয়, তাদের বক্তব্য আইএসের অনুমোদন পেতে ইরাক বা সিরিয়ায় যেতেই হবে এমন কোনও মানে নেই।

হামলায় যে জঙ্গিকে জীবিত ধরা সম্ভব হয়েছে, এখন তার কাছেই এই রহস্য উন্মোচনের চাবিকাঠি মিলতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।

ভারতে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আক্রমণের ধরন ও তার প্রচারের পদ্ধতি থেকে এখানে আইএস-র হলমার্ক বা ছাপ একেবারে স্পষ্ট।

এমন কী, খুব শিগগিরি ভারতের মাটিতেও এই ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি হলে তারা অবাক হবেন না। ভারতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রাহুল বেদী মনে করেন ভারতেরও অবিকল একই ধরনের হামলায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

গত বেশ কয়েক মাস ধরে ভারতে আইএস-র রিক্রুটমেন্ট ও র‍্যাডিকালাইজেশনের অনেক খবর মিলেছে, দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোও আইএস-র হামলার সম্ভাবনা নিয়ে ওয়াকিবহাল।

“ফলে ঢাকার মতো দিল্লিও যে কোনও দিন একই কায়দায় আক্রান্ত হতে পারে,” বলেন তিনি।

বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে গুলশানের হামলাকারীরা সবাই বাংলাদেশেরই লোক – তারা বাইরের কোনও সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর নয়।

ঢাকায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত বীনা সিক্রি কিন্তু পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন, তারা যে আন্তর্জাতিক কোনও গোষ্ঠীর হাতে র‍্যাডিকালাইজড হয়নি সেটা কীভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে?

“বুঝলাম এরা সবাই বাংলাদেশী, কিন্তু তাদের এ পথে এনেছে কে, র‍্যাডিকালাইজ করেছে কে? এরা উচ্চশিক্ষিত, ধনী ঘরের ছেলে – কেউ মাদ্রাসার ছাত্র নয়। তারা কীভাবে র‍্যাডিকালাইজড হল? মনে রাখতে হবে তাদের এ পথে নিয়ে আসতে আইএস বা আল কায়দাকে কিন্তু বাংলাদেশ আসতে হবে না, ইন্টারনেটই তার জন্য যথেষ্ট,” বলেন তিনি।

বস্তুত বাংলাদেশে তাদের মাটিতে কোনও হামলার পেছনেই যে আইএস-র হাত দেখে না, খানিকটা অনুযোগের সুরেই কয়েক সপ্তাহ আগে তা জানিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ।

ঢাকা বরাবরই এ সব হামলাকে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের কাজ বলে চিহ্নিত করলেও দিল্লি কিন্তু গত বেশ কয়েক মাস ধরেই ভারতে আইএস-র উপস্থিতি স্বীকার করে আসছে।

গত সপ্তাহেই হায়দ্রাবাদে আইএস-র একটি জঙ্গি সেল ধরা পড়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। দু’দেশের অবস্থানে এই ফারাক কি জঙ্গি হামলার যৌথ মোকাবিলাতে প্রভাব ফেলতে পারে?

রাহুল বেদী বলছেন, “সন্ত্রাসবাদ সব সময়ই সন্ত্রাসবাদ, তা সে আইএস, আল কায়দা বা অন্য যে কোনও গোষ্ঠী – যারাই করুক না কেন। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশে আইএস-র অস্তিত্ব মানতে প্রস্তুত নন।”

“এর পেছনে অন্য অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে আমার ধারণা গুলশানে যে জঙ্গিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে সেই এ ব্যাপারে শেষ কথা বলতে পারে। মুম্বাইতে ২৬/১১র হামলার তদন্তে আজমল কাসভ যেমন ছিল আসল চাবিকাঠি, তেমনি এই ব্যক্তিও পেছনের সব কিছু ফাঁস করে দিতে পারে,” বলেন তিনি।

তবে তার জন্য সম্ভবত আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে আইএস থাকুক বা না-থাকুক, বা থাকলেও যে আকারেই থাকুক – সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার মোকাবিলায় ঢাকা ও দিল্লির হাত মিলিয়ে চলা ছাড়া উপায় নেই, বিশেষজ্ঞরা সবাই সে ব্যাপারে একমত।সূত্র : বিবিসি


৪ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে