আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের ‘মাদার তেরেসা’ খ্যাত খ্যাতনামা সমাজসেবক আবদুল সাত্তার ঈদী আর নেই। শুক্রবার করাচি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
তার ঈদী ফাউন্ডেশন পাকিস্তানের অন্যতম সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সব মানুষের সেবায় নিয়োজিত। তাকে বলা হয় ‘লিভিং সেইন্ট’ বা জীবন্ত পূণ্যাত্মা।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ তাকে ‘মানবতার মহান সেবক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং তাকে মরণোত্তর প্রেসিডেন্ট পদক প্রদান এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের ঘোষণা দিয়েছেন।
আবদুল সাত্তার ঈদীর ছেলে ফয়সাল ঈদী এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেলে সিন্ধু ইনিস্টিটিউট অব ইউরোলোজি অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্টেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাকে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল। পরে তাকে করাচি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
আবদুল সাত্তার ঈদী যুদ্ধবিরোধী ছিলেন। তিনি সব ধরণের নৃশংসতা, অপরাজনীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করেছেন।
গত মাসে ঈদীকে বিদেশে চিকিৎসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। তবে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি কেবল পাকিস্তানের সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা নেবেন, অন্য কোথাও নয়।
১৯২৮ সালে ভারতের গুজরাটে জন্ম ঈদীর। জনসেবামূলক কার্যক্রমের জন্য ১৯৮৬ সালে র্যামন ম্যাগসেসে সম্মাননা পেয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি শহরে অ্যাম্বুলেন্স, এতিমখানা, নারী আশ্রয় কেন্দ্র, বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ ও মর্গ পরিচালনা করে ঈদী ফাউন্ডেশন।
পাকিস্তানের মত দেশে যেখানে দুর্নীতির কারণে সরকারি সেবা চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়, সেখানে ঈদী ফাউন্ডেশন ছিল মানুষের ভরসার অন্যতম জায়গা।
‘পাকিস্তানিদের কল্যাণকাজে এবং তাদের জীবন ও জীবিকায় পরিবর্তন আনতে আবদুল সাত্তার ঈদীর মত ব্যক্তি খুবই কমই আছেন,’ বলেন নওয়াজ শরীফ।
আকারে ছোট ঈদীর ছিল দীর্ঘ শ্মশ্রু। তিনি ঐতিহ্যবাহী টুপি পরতেন। তার ছিল মাত্র দুটি কালো স্যুট। তিনি একটি ভাঙা টেপ রেকর্ডারে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত শুনতেন। বাস করতেন করাচিতে একটি খোলা কক্ষে।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সব অভাবী মানুষের সেবার মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানের মত একটি বিভক্ত সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের অগাধ শ্রদ্ধা অর্জন করেন।
‘আমার অ্যাম্বুলেন্স যখন একজন আহত-বেদনার্ত মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে যায়, লোকজন যখন হাসপাতালে পৌঁছায়, আমার তখন শান্তি লাগে যে আমি একজন বেদনার্ত মানুষকে সাহায্য করতে পেরেছি,’ রয়টার্সকে বলেছিলেন ঈদী।
‘আমার মিশন মানবতাকে ভালোবাসা… প্রতিটি দিনই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন।’
আজ শনিবার তার নামাজে জানাজা হবে পাকিস্তানের ইতিহাসে বৃহত্তম।
গত বছর করাচিতে তীব্র তাপদাহের সময় তার প্রতিষ্ঠান অসুস্থদের অ্যাম্বুলেন্স সেবা, নিহত দরিদ্রদের ঈদীর কবরস্থানে বিনা খরচে দাফনের ব্যবস্থা এবং নিহদের তাদের মর্গে রাখার জায়গা দেয়।
পাকিস্তানের চিরবৈরি দেশ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, ‘তিনি ছিলেন এক মহাপ্রাণ যিনি মানবতার সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।’
আবদুল সাত্তার ঈদীর স্ত্রী, যিনি পেশায় একজন নার্স, নারী ও দত্তক নেয়া এতিমদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি দেখাশুনা করেন। তাদের আশ্রয়ে আছে ২৫,০০০ শিশু।
ঈদী ফাউন্ডেশেন বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ইরান, শ্রীলঙ্কা, ক্রোয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইন্দোনেশিয়ায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে। সূত্র: রয়টার্স
০৯ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম