শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৬, ১২:৫৫:০৮

‘এরদোগানই সেরা’

‘এরদোগানই সেরা’

আলফাজ আনাম: নিজের জনপ্রিয়তায় আরেকবার অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে প্রমান করলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। একইভাবে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তার দক্ষতার প্রমান রাখলেন। ১৬ জুলাই সেনা অভ্যুন্থানের পর সাথে সাথে সাধারন মানুষকে রাস্তায় নেমে আসার আহবান জানিয়েছিলেন। সেই আহবানে সাড়া দিয়ে রাতের অন্ধাকারে তার সমর্থকরা নেমে এসেছিলো রাস্তায়। অভ্যুন্থানকারীদের ট্যাংক আর এপিসি গুলো ঘিরে ফেলে সাধারন মানুষ। সেনা বাহিনীর গুলিতে ৪২ জন মানুষ মারা গেলেও রাস্তা থেকে সরে যায়নি তার সমর্থকরা। শেষ পর্যন্ত আত্নসমর্পন করে সেনাবাহিনীর বিদ্রোহীরা।

অবকাশ যাপন কেন্দ্র থেকে ঝুকি নিয়ে ইস্তাম্বুল চলে আসেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। এর আগে ফেসটাইমে সিএনএনকে সাক্ষাতকার দিয়ে জনগনকে রাস্তায় নেমে আসার আহবান জানান। ইস্তাম্বুলে ফিরে চলে যান জনতার মাঝে। এ সময় তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীর একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ দেশের অখণ্ডতা ও ঐক্য নস্যাতের চেষ্টা চালায়।  এই বিশ্বাসঘাতকতার সাথে জড়িততের চড়া মূল্য দিতে হবে।
তিনি সামরিক বাহিনীতে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে বলেও জানান। বিদ্রোহী ১৫৬৩ জন সৈন্য ও অফিসারকে গ্রেফতারের পাশাপাশি নিয়োগ দেয়া হয়েছে নতুন সেনা প্রধান।

শুক্রবার রাতে অভ্যুত্থানচেষ্টার সময় তিনি কৃষ্ণ সাগরীয় এলাকায় একটি হোটেলে অবকাশ যাপন করছিলেন।  কামাল আতাতুর্কের পর এরদোগান নিজেকে দেশটির সেরা প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রতিষ্টিত করেছেন। ১৯২৩ সালে তুর্কি প্রজাতন্ত্র যাত্রা শুরুর পর  ১৮তম প্রেসিডেন্ট এ পর্যন্ত ৯ ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পেয়েছে তুরস্কবাসী। এদের মধ্যে মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও ইসমেত ইনুনু সর্বাধিক চারবার করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৭ সালে গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা চালু করা হয়। একই সাথে প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ সাত বছর থেকে পাঁচ বছরে কমিয়ে আনা হয়। বাড়ানো হয় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা।

২০০৩ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর উদার ইসলামপন্থী দল হিসেবে পরিচিত একেপি তুরস্কের রাজনৈতিক অঙ্গনে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে। আর এতে নেতৃত্ব দেন বর্তমান ৬২ বছর বয়সী এরদোগান। সমালোচকদের মতে, একেপি নেতা ক্রমেই তার কর্তৃত্ব সুসংহত করে চলেছেন এবং প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি একে চূড়ান্ত রূপ দিতে চাচ্ছেন। এই অভ্যুন্থান দমনের মধ্যদিয়ে তিনি যে সেনাবাহিনীতে আরেকবার শুদ্ধি অভিযান চালাবেন তা নিজেই ঘোষনা দিয়েছেন। একই সাথে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা আরো যাবে।

এরদোগানের জন্ম ১৯৫৪ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি ইস্তাম্বুলে। তার পরিবার জর্জিয়া থেকে ইস্তাম্বুলে এসেছিল। তার লেখাপড়া শুরু হয় ধর্মীয় শিক্ষালয় ইমাম হাতিপ স্কুলে। এরপর তিনি মারমারা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি এবং লোক প্রশাসনে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। রাজনীতিতে আসার আগে তিনি পেশাদার ফুটবলার এবং একটি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় নাজমুদ্দিন আরবাকানের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল সালভেশন পার্টির (মিল্লি সালামত পার্টি) মাধ্যমে। এরদোগান ১৯৮৫ সালে রাফাহ পার্টির ইস্তাম্বুল প্রদেশের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ইস্তাম্বুল প্রদেশ থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ সালের ২৭ মার্চ তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচনে রাফাহ পার্টি সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এ নির্বাচনে এরদোগান ইস্তাম্বুলের মেয়র এবং গ্রেটার মেট্রো ইস্তাম্বুল মেট্রোপলিটন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

তার জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির কারণে মেয়র হিসেবে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৯৭ সালের ১২ ডিসেম্বর দক্ষিণ তুরস্কে এক জনসভায় তুর্কি জাতীয়তাবাদী কবি জিয়া গোকাল্পের একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে আলোচনায় ঝড় তোলেন। কবিতাটি ছিল এ রকম Mosques are our barracks. domes our helmets, minarets our bayonets, belevers our soliders. এ কবিতা আবৃত্তির দায়ে তুর্কি সেকুলার সরকার তাকে দণ্ডিত করে। ১৯৯৭ সালে ওয়েলফেয়ার পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এ দলের সদস্যরা ভার্চু পার্টি (ফজিলত পার্টি) নামে নতুন দল গড়ে তোলেন। কিন্তু ১৯৯৯ সালে এ দলকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এ বছরই এরদোগানের নেতৃত্বে গঠিত হয় জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি।

২০০২ সালের নভেম্বরে পার্লামেন্ট নির্বাচনে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বিজয়ী হয়েও আইনগত নানা প্রক্রিয়ার কারণে এরদোগানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া বিলম্বিত হয়। অবশেষে ২০০৩ সালের ১৪ মার্চ তিনি তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কারণ মেয়র থাকা অবস্থায় কবিতা পড়ার কারণে তিনি শাস্তি ভোগ করছিলেন। আর এ কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। তার শাস্তির মেয়াদ শেষ হলে এবং বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ গুল তার আসন থেকে পদত্যাগ করলে সে আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হন এরদোগান। নির্বাচিত হয়ে তিনি পার্লামেন্টে আসেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে আরো দুদফায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে একে পার্টি তুরস্কের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বার বার বিজয়ী হয়ে আসছে।-অন্যদিগন্ত
১৬ জুলাই ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এমকেএইচ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে