আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানে সামরিক বাহিনীর মূলত তিনটি শাখার সদস্যরা জড়িত ছিল বলে ইসরাইলি পত্রিকা হারেৎজ এ খবর জানিয়েছে। এসব সদস্য বিমানবাহিনী, সামরিক পুলিশ এবং সাজোয়া ইউনিটের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
শুক্রবার রাতে তুরস্কে অভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাহসী পদক্ষেপ এবং জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসায় অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। পুলিশ বাহিনী সরকারের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেয়।
পরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেন, সামরিক বাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশের অভ্যুত্থান চেষ্টা ভণ্ডুল করে দেয়া হয়েছে। সরকার এখন পুরো দেশের দায়িত্বে রয়েছে।
অভ্যুত্থানকারীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার অভিযোগ আনা হবে বলে জানিয়েছেন এরদোগান।
ইস্তাম্বুলে উৎফুল্ল সমর্থকদের উদ্দেশ্যে এরদোগান বলেন, তারা জনগণের বিরুদ্ধে জনগণের বন্দুক তাক করেছিল।
অভ্যুত্থান চেষ্টা রুখে দিতে সাধারণ মানুষও ট্যাংকের সামনে দাঁড়ায়, তাদের চেষ্টাতেই রুখে যায় বিদ্রোহ।
শুক্রবার রাতে বিদ্রোহীদের হামলায় বিমান, ট্যাংকও ব্যবহার করা হয়।
এরগোদান এ সময় কৃষ্ণ সাগরীয় একটি অবকাশ যাপন কেন্দ্রে ছিলেন। তার হোটেলেও বোমা হামলা হয়।
অভ্যুত্থানের খবর পেয়েই এরদোগান দেশবাসীকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান। লাখ লাখ লোক রাস্তায় নেমে এলে বিদ্রোহীরা ভয় পেয়ে যায়।
এরদোগান, প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়িলদিরিম এবং অন্যদের সাহসী উদ্যোগে বিদ্রোহীরা বুঝতে পারে, তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে।
সেনাদের একটি অংশের করা অভ্যুত্থান চেষ্টা শেষ পর্যন্ত জনগণের প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়। বিদ্রোহী সেনাদের ট্যাঙ্ক থামিয়ে দিয়েছে নিরস্ত্র জনগণ।
অভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়ে পড়লে মসজিদগুলো থেকে ফজরের নামাজের সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগেই আযান ও কোরআন তেলাওয়াত শুরু হয়। রাজপথে নেমে আসতে থাকে সাধারণ মানুষ।
এদিকে অভ্যুত্থানের খবরে তুরস্কের পর্যটন শহর মারমারিসে অবকাশ যাপনে থাকা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান ইস্তাম্বুলে ফিরে আসেন। তিনি বিমানবন্দরে উপস্থিত সমর্থকদের উদ্দেশ্যে সেনা অভ্যুত্থান প্রতিরোধে জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান।
এরপর রাজধানী আংকারা, ইস্তাম্বুল, দিয়ারবাকির, ইদিরনে ও ডেনিজলি শহরসহ দেশটির প্রায় সবক'টি শহরের রাজপথে নেমে আসে গণতন্ত্রপন্থী জনগণ।
এ সময় গণতন্ত্রণের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকে হাজার হাজার মানুষ। তারা 'অভ্যুত্থান নয়, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সব সেনা' স্লোগান দিতে থাকে। তাদের জাতীয় পতাকা হাতে দেখা যায়।
এর আগে সাধারণ মানুষকে পাথর ছুঁড়ে এবং লাঠি দিয়ে আঘাত করে ট্যাঙ্ক থামাতে দেখা যায়। তারা আটক বিদ্রোহী সেনাদের পুলিশে সোপর্দ করে। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় গণতন্ত্রপন্থী পুলিশ ও সেনারা।
তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর ২,৭৪৫ বিচারককে বরখাস্ত করা হয়েছে। হাই কাউন্সিল অব জাজেজ অ্যান্ড প্রসিকিউটর্স এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে কেন তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে তার কোনো ব্যাখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয়নি।
এর আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে মোট ২৬৪ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব
এরদোগানের নেতৃত্বাধীন সরকারি বাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক নাগরিক রয়েছে ১৬১ জন।
অভ্যুত্থানকারীদের মধ্যে ১৬১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে ১,১৪০ জন।
এদিকে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
হোয়াইট হাউজ থেকে পাঠানো এক বিবৃততে তিনি এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে ওবামা বলেছেন, সবার উচিত তুরস্কের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে সমর্থন করা। রক্তপাত এবং সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দেয় সেনাবাহিনীর একাংশ। সেনাবাহিনীর ওই অংশটি তুরস্কের ডানপন্থী সরকার উচ্ছেদের দাবিও করে।
তবে সেনাবাহিনীর এ দাবি নাকচ করে দিয়েছে দেশটির সরকার।
শুক্রবার রাত থেকে গণতন্ত্রপন্থীদের সঙ্গে অভ্যুত্থানকারীদের সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় পাঁচ জেনারেল ও ২৯ জন কর্নেলসহ ২ হাজার ৮৩৯ জন বিপথগামী সেনাসদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটকের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
১৬ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম