শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৬, ০৯:২৮:০৫

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তুরস্কের কড়া হুঁশিয়ারি

 যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তুরস্কের কড়া হুঁশিয়ারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শুক্রবার রাতে আকস্মিক সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় থাকা ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনকে দায়ী করেছে তুরস্ক।  তাকে আশ্রয় দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম।

যে দেশই গুলেনকে সমর্থন বা আশ্রয় দেবে, সে দেশের বিরুদ্ধেই যুদ্ধে জড়ানোর হুমকি দিয়েছে তুরস্ক।
আকস্মিক ও বেপরোয়া সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় বেশ ক্ষিপ্ত তুরস্ক সরকার।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ফেতুল্লাহ গুলেনকে যে দেশই সমর্থন দেবে তাদের বিরুদ্ধেই কঠোর অবস্থান নেয়া হবে। সেটা যুদ্ধের পর্যায়েও যেতে পারে।  ফেতুল্লা গুলেনকে যারা আশ্রয় দেবে তারা তুরস্কের শত্রু।

বর্তমানে মধ্যপন্থী এ নেতা যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে বসবাস করছেন।  স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসন নিয়েছিলেন ফেতুল্লা গুলেন।

শুক্রবার রাতে আকস্মিক ওই সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে ফেতুল্লাহ গুলেনকে সরাসরি দায়ী করা হচ্ছে। তবে গুলেনের হিজমেত আন্দোলন এ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানে সামরিক বাহিনীর মূলত তিনটি শাখার সদস্যরা জড়িত ছিল বলে ইসরাইলি পত্রিকা হারেৎজসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হচ্ছে।  এসব সদস্য বিমানবাহিনী, সামরিক পুলিশ এবং সাজোয়া ইউনিটের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।

সেনাবাহিনীর একটি অংশ এ অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করে।  তবে সেনাবাহিনীতে নেতৃত্ব দিয়েছেন কারা- এ বিষয়ে তুর্কি গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন আসছে।
 
প্রতিবেদনগুলোতে মূলত দুজনের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।  বলা হচ্ছে, দুই ব্যক্তি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পেছনে নাটের গুরু হিসেবে কাজ করছেন।
 
এদের একজন হচ্ছেন জেনারেল একিন ওজতুর্ক। তুর্কি বিমানবাহিনীর কমান্ডার থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালের আগস্টে অবসর নেন তিনি।  কিন্তু তিনি এখনো সুপ্রিম মিলিটারি কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
 
দ্বিতীয় ব্যক্তি হচ্ছেন লেফট্যানেন্ট জেনারেল মেতিন লিয়েদিল, যিনি স্থলবাহিনীর কমব্যাট ও সাপোর্ট ট্রেনিং কমান্ডার হিসেবে কর্মরত আছেন।
 
যুক্তরাজ্যের একটি থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউজের ফাদি হাকুরা মনে করেন, এরা সেনাবাহিনীর বিরাট অংশের প্রতিনিধিত্ব করে না।  তাদের ব্যর্থতা এটাও প্রমাণ করে যে, তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানের পক্ষে আর সমাজের বেশির ভাগ অংশের কোনো সমর্থন নেই।
 
তবে তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লা গুলেন অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত বলে জোর গলায় বলে আসছে।
 
প্রেসিডেন্ট এরদোগানের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র ফেতুল্লা গুলেন একজন ধর্মীয় নেতা।  তার হিজমেত আন্দোলনের বিরাট সমর্থন আছে তুরস্কে।  এরা নানা ধরনের স্কুল-কলেজ, এনজিও এবং ব্যবসা পরিচালনা করে। তাদের আছে অনেক মিডিয়া প্রতিষ্ঠান।
 
কিন্তু ফেতুল্লা গুলেনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে কয়েক বছর আগে। প্রেসিডেন্ট এরদোগান কঠোর সব ব্যবস্থা নেন হিজমেত আন্দোলনের বিরুদ্ধে।
 
অভ্যুত্থানের পেছনে এদের হাত আছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান এবং তার দলের নেতারা।  তবে ফেতুল্লা গুলেন জোর গলায় তা অস্বীকার করে আসছেন।
 
রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান এর আগে বহুবার সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।  তার সরকার সেনাবাহিনীর মধ্যে অনেক শুদ্ধি অভিযানও চালিয়েছে।
 
শুক্রবার রাত থেকে তুরস্কে সেনাবাহিনীর একটি অংশ অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে।  অভ্যুত্থানকারী ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ২৬৫ জনের বেশি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
 
এছাড়া অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জেনারেল ও ২৯ কর্নেলসহ প্রায় ৩ হাজার সেনা সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
 
এর আগে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাতেই গণতন্ত্রপন্থীরা রাজপথে নেমে আসে।  প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাহসী পদক্ষেপ এবং জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসায় অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।  পুলিশ বাহিনী সরকারের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেয়।

সামরিক বাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশের অভ্যুত্থান চেষ্টা ভণ্ডুল করে দেয়া হয়।  সরকার এখন পুরো দেশের দায়িত্বে রয়েছে।

অভ্যুত্থানকারীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার অভিযোগ আনা হবে বলে জানিয়েছেন এরদোগান।
ইস্তাম্বুলে উৎফুল্ল সমর্থকদের উদ্দেশ্যে এরদোগান বলেন, তারা জনগণের বিরুদ্ধে জনগণের বন্দুক তাক করেছিল।   

অভ্যুত্থান চেষ্টা রুখে দিতে সাধারণ মানুষও ট্যাংকের সামনে দাঁড়ায়, তাদের চেষ্টাতেই রুখে যায় বিদ্রোহ।
শুক্রবার রাতে বিদ্রোহীদের হামলায় বিমান, ট্যাংকও ব্যবহার করা হয়।

এরগোদান এ সময় কৃষ্ণ সাগরীয় একটি অবকাশ যাপন কেন্দ্রে ছিলেন।  তার হোটেলেও বোমা হামলা হয়।  অভ্যুত্থানের খবর পেয়েই এরদোগান দেশবাসীকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান।  তার আহ্বানে লাখ লাখ লোক রাস্তায় নেমে এলে বিদ্রোহীরা ভয় পেয়ে যায়।

এরদোগান, প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়িলদিরিম এবং অন্যদের সাহসী উদ্যোগে বিদ্রোহীরা বুঝতে পারে, তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে।  বিদ্রোহী সেনাদের ট্যাঙ্ক থামিয়ে দিয়েছে নিরস্ত্র জনগণ।

অভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়ে পড়লে মসজিদগুলো থেকেও ফজরের নামাজের সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগেই আযান ও কোরআন তেলাওয়াত শুরু হয়।  রাজপথে নেমে আসতে থাকে সাধারণ মানুষ।

এদিকে অভ্যুত্থানের খবরে তুরস্কের পর্যটন শহর মারমারিসে অবকাশ যাপনে থাকা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান ইস্তাম্বুলে ফিরে আসেন।  বিমানবন্দরে উপস্থিত সমর্থকদের উদ্দেশ্যে সেনা অভ্যুত্থান প্রতিরোধে জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান সফল হয়।

এরপর রাজধানী আংকারা, ইস্তাম্বুল, দিয়ারবাকির, ইদিরনে ও ডেনিজলি শহরসহ দেশটির প্রায় সবক'টি শহরের রাজপথে নেমে আসে গণতন্ত্রপন্থী জনগণ।

এ সময় গণতন্ত্রণের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকে হাজার হাজার মানুষ।  তারা 'অভ্যুত্থান নয়, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সব সেনা' স্লোগান দিতে থাকে।  তাদের জাতীয় পতাকা হাতে দেখা যায়।

এর আগে সাধারণ মানুষকে পাথর ছুঁড়ে এবং লাঠি দিয়ে আঘাত করে ট্যাঙ্ক থামাতে দেখা যায়।  তারা আটক বিদ্রোহী সেনাদের পুলিশে সোপর্দ করে।  পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় গণতন্ত্রপন্থী পুলিশ ও সেনারা।

তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর ২,৭৪৫ বিচারককে বরখাস্ত করা হয়েছে।  হাই কাউন্সিল অব জাজেজ অ্যান্ড প্রসিকিউটর্স এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে কেন তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে তার কোনো ব্যাখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয়নি।

এর আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে মোট ২৬৪ জন নিহত হয়েছে।  এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব
এরদোগানের নেতৃত্বাধীন সরকারি বাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক নাগরিক রয়েছে ১৬১ জন।

অভ্যুত্থানকারীদের মধ্যে ১৬১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে ১,১৪০ জন।

এদিকে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

হোয়াইট হাউজ থেকে পাঠানো এক বিবৃততে তিনি এ আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে ওবামা বলেছেন, সবার উচিত তুরস্কের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে সমর্থন করা।  রক্তপাত এবং সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দেয় সেনাবাহিনীর একাংশ। সেনাবাহিনীর ওই অংশটি তুরস্কের ডানপন্থী সরকার উচ্ছেদের দাবিও করে।
১৬ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে