সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬, ০৮:২২:২৩

বাংলাদেশের আইএস জঙ্গি, পশ্চিমবঙ্গে বৌভাতে নিমন্ত্রিত অতিথি

বাংলাদেশের আইএস জঙ্গি, পশ্চিমবঙ্গে বৌভাতে নিমন্ত্রিত অতিথি

সুরবেক বিশ্বাস : পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে লাভপুরের রেজিস্ট্রি অফিসপাড়ায় এক বৌভাতের অনুষ্ঠানে হঠাৎ আগমন বাংলাদেশের নাগরিকের। পাত্রের বড় ভাইয়ের বিশেষ পরিচিত হিসেবে নিমন্ত্রিত বাংলাদেশের ওই যুবক। গত বছরের ঘটনা। আগন্তুককে দেখে ওই পরিবার ও পাড়ার অনেকের প্রশ্ন, কে সে?

পাত্রের বড় ভাই পশ্চিমবঙ্গের সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গি হিসেবে ধরা পড়া মোহাম্মদ মুসাউদ্দিন বা মুসা। আর তার ছোট ভাইয়ের বৌভাতের নেমন্ত্রন খেতে বাংলাদেশ থেকে যে এসেছিল, তার নাম আবু সুলেমান। বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে যে কি না আইএসের ‘ভাবধারা’ প্রচার করে মুসার মতো যুবকদের প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিয়েছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি।

ভারতের কোনও কোনও যুবকের পাশাপাশি আইএস কার্যকলাপের ক্ষেত্রে বিদেশি বাংলাদেশী এই সুলেমান এখন ভারতীয় গোয়েন্দাদের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’। বাংলাদেশের একটি সূত্র থেকে গোয়েন্দারা জেনেছেন, এ বছর এপ্রিলে রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকিকে গলা কেটে খুনের ঘটনায় সুলেমান জড়িত। এ বছর জানুয়ারিতে কালিয়াচকে হিংসার ঘটনাতেও তার যোগ থাকার প্রমাণ মিলেছে।

ভারতীয় গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের খবর, বছর আঠাশের সুলেমান এখন দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের কয়েকটি রাজ্য চষে বেড়াচ্ছে আইএসের ক্যাডার নিয়োগের জন্য। ইতিমধ্যেই একাধিক বার গোয়েন্দারা তাকে ফস্কেছেন। এক গোয়েন্দা অফিসার বলেন, ‘উত্তর ভারত জুড়ে বাংলাদেশের বহু নাগরিকের বসবাস। এদেরই উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করছে সুলেমান।’

বাংলাভাষীদের মধ্যে সুলেমান আইএসের হয়ে প্রচারে রীতিমতো সফল বলে স্বীকৃতিও পেয়েছে— এমনই খবর ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি-র। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, আইএসের অনলাইন পত্রিকা ‘দাবিক’-এর বাংলা সংস্করণ বার করার দায়িত্ব সুলেমানের। ওই ম্যাগাজিন ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়।

কিন্তু বহু বাংলাভাষী, বিশেষ করে দরিদ্র, অল্প শিক্ষিত মানুষ ইংরেজি ভাষায় তেমন সড়গড় নন। অথচ আইএসের মুখপত্রে কী বলা হচ্ছে, সেটা তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া জরুরি। সেই দায়িত্বই সুলেমানের উপর বর্তায়। ২০১৪ সালের ৫ জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ‘দাবিক’-এর ১৪টি সংখ্যা বেরিয়েছে।

তবে গোয়েন্দারা জেনেছেন, আইএসের ওই মুখপত্রের বাংলা সংস্করণ সাইবার জগতে এখনও আসেনি। এখন ওটি কেবল ছাপা হয় এবং বিলি করা হয় নিজেদের বা সমমনস্কদের মধ্যে। বর্ধমান স্টেশন থেকে ৪ জুলাই ধরা পড়া বীরভূমের মুসার অবশ্য ‘দাবিক’-এর বাংলা সংস্করণ পড়ার প্রয়োজন হয়নি। মধ্য কলকাতার একটি কলেজের সাবেক ছাত্র, উচ্চ-মাধ্যমিক পাশ মুসা দিব্যি ‘দাবিক’-এর ইংরেজি সংস্করণ পড়তো।

তদন্তে জানা গিয়েছে, আইএস এবং বাংলাদেশ সম্পর্কিত একটি ওয়েবসাইট মুসা নিয়মিত ঘাঁটাঘাঁটি করত আর তার মাধ্যমেই গত বছর সুলেমানের সঙ্গে তার পরিচয় সাইবার দুনিয়ায়। মাস দুয়েক আগে মালদহে মুসাকে ডেকে পাঠায় সুলেমান।

গোয়েন্দারা জেনেছেন, মালদহ স্টেশনে দেখা করে তারা একটি ভাতের হোটেলে খাওয়া দাওয়া করে। মুসা তাদের জানিয়েছে, সুলেমানের সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আর এক জন এসেছিল। মুসাকে সুলেমান ওই ব্যক্তির আসল নাম বলেনি। শুধু বলেছিল, সাইবার দুনিয়ায় তার সঙ্গে ‘বাংলার বাঘ টু’ নামে যার সঙ্গে কথোপকথন হয়, এ-ই সেই লোক।

১৮ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে