আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পুরাে পৃথিবীতে বর্তমানে আলোচিত একটি নাম তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসপ তাইয়েপ এরদোগান। বিশেষকরে গত শুক্রবার রাতে তুরস্কের নির্বাচিত সরকার রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানকে উৎখাত করতে সেনাবাহিনীর একাংশ ব্যর্থ অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায়। এই অভ্যুত্থান নাটকে তারা সম্পূর্ণ ভাবে পরাজিত হয়েছে। আর এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়ত রয়েছে তাদের মধ্য থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় আট হাজার জনকে খুঁজে বাহির করে আটক করা হয়েছে। তবে সেই নাটকিয় রাতে তুরস্কের সেনাপ্রধান জেনারেল হুলুসি আকারকে নাকি বন্দুকের নলের মুখে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘোষণা দিতে বলা হয়েছিল।
সামরিক বাহিনীর এক ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য দিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম হুররিয়েত ডেইলি নিউজ।
সূত্র জানায়, অভ্যুত্থানের রাতে সেনাপ্রধানের প্রাইভেট সেক্রেটারি মেজর জেনারেল মেহমেত দিসলি সেনাপ্রধানের নিরাপত্তারক্ষী, সহায়তাকারী ও সচিবদেরকে নিয়ে অভ্যুত্থানকারীদের পক্ষাবলম্বন করেন। তারা বন্দুকের নলের মুখে সেনাপ্রধানকে অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেয়ার জন্য জোর তৎপরতা চালান।
তবে সেনাপ্রধান আকার তার সেক্রেটারির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এ কারণে দিসলি ক্ষিপ্ত হয়ে সেনাপ্রধানকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করেন। পাশাপাশি তার ঘাড়ে বেল্ট দিয়ে চেপে ধরেও নির্যাতন করেন। এরপরেও আকারা অভ্যুত্থানকারীদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার সেক্রেটারি দিসলি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের ঘোষণায় স্বাক্ষর করুন কমান্ডার। আপনি দেখতে পারবেন, খুব ভালো কিছু ঘটবে।’
এ সময় ডেপুটি সেনাপ্রধান জেনারেল ইয়াসার গুলের, সেনাবাহিনীর জেনারেল সালেহ জাকি কোলাক ও বিমান বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল আবেদিন উনাল এক বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলেন। সেখানে তারা নিজেদের সহায়তাকারী ও নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে বন্দী হয়ে পড়েন।
এক পর্যায়ে সেনাপ্রধানকে নিজেদের দলে ভেড়াতে না পেরে আঙ্কারা থেকে উত্তর-পশ্চিমে আতিনজি বিমানঘাঁটিতে জিম্মি করে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায় বিদ্রোহী সেনা সদস্যরা।
এদিকে অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরেও শনিবার সকাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট এরদোগান ঠিক জানতেন না, তার সেনা প্রধানের ভাগ্যে কি ঘটেছে।
সকালে ইস্তাম্বুলে এরদোগান বলেন, সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল হুলুসি আকার কোথায়, কী অবস্থায় আছেন, তিনি জানেন না।
এরপর আঙ্কারা থেকে উত্তর-পশ্চিমে আতিনজি বিমানঘাঁটিতে অভিযান চালিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল হুলুসি আকারকে উদ্ধার করা হয়।
অপর দিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এর্দোগানকে বহনকারী বিমানটি আটক করতে চেয়েছিল অভ্যুত্থানকারীদের অন্তত দু'টি এফ-সিক্সটিন জঙ্গি বিমান। রয়টার্সের বরাত দিয়ে প্রেস টিভি এ খবর দিয়েছে।
অভ্যুত্থান চলাকালে এর্দোগান যখন মারমারিস অবকাশ কেন্দ্র থেকে বিমানে করে ইস্তাম্বুলে আসছিলেন তখন অভ্যুত্থানকারীদের অন্তত দু'টি বিমান তাদের পিছু নিয়েছিল বলে তুরস্কের একজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তার বরাত দেয়া হয়েছে সেই প্রতিবেদনে।
অভ্যুত্থানের সময় বিদ্রোহীরা সেনাপ্রধানকে আটক করেছিল। পরে এরদোগান এই জেনারেল দান্দারকে ভারপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান নিয়োগ করেছিলেন।
অভ্যুত্থানের আগে এরদোগানকে দান্দার বলেছিলেন, ‘আপনিই আমাদের বৈধ প্রেসিডেন্ট। আমি আপনার পক্ষে আছি। এটা একটা মারাত্মক ক্যু। আঙ্কারার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ইস্তাম্বুলে আসুন। আমি সেখানকার সড়ক এবং অন্যান্য ব্যবস্থা ঠিক করে রাখব।’
হুরিয়াত জানায়, প্রেসিডেন্ট হোটেল ত্যাগ করার আধা ঘণ্টা পর ৪০ জন বিদ্রোহী সৈন্য ঝড়ের বেগে সেখানে প্রবেশ করে। কিন্তু ততক্ষণে এরদোগান ইস্তাম্বুল রওনা হয়ে গেছেন।
হোটেলে প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষীদলের সাথে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ হয়। এতে বিদ্রোহীরা পরাজিত হয়। তাদের একটি হেলিকপ্টারও বিধ্বস্ত হয়। তারা তখন পার্বত্য এলাকায় পালিয়ে যায়।
১৮ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই