আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কাশ্মীরের উত্তপ্ত পরিস্থিতির জন্য অমর্ত্য সেনও এ বার নরেন্দ্র মোদির সরকারকে কাঠগড়ায় তুললেন। এক টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘সরকার এতটাই খারাপ ভাবে কাশ্মীর-পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে যে এটাকে ভারতীয় গণতন্ত্রের উপরে সবচেয়ে বড় দাগ হিসেবেই দেখছে গোটা বিশ্ব।’
সমালোচনা হচ্ছিলই। কাশ্মীরের উত্তপ্ত পরিস্থিতির জন্য মূলত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি দুষছিল মোদি সরকারকে। আরএসএস নেতাদের একাংশও মনে করছেন, কাশ্মীরের পরিস্থিতি ঠিক ভাবে সামলানো হচ্ছে না। কিন্তু নেবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও এ ভাবে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে মুখর হওয়ায়, চাপ আরও বাড়ল প্রধানমন্ত্রী মোদি ও তার সরকারের উপরে।
কাশ্মীরিদের মধ্যে যে দেশের বাকি অংশ সম্পর্কে নানা রকম মত রয়েছে, সে কথাও অবশ্য উল্লেখ করেছেন অমর্ত্য। কিন্তু সেই বাস্তবতার নিরিখেও সরকার যে ভূমিকা নিচ্ছে, অমর্ত্যের মতে সেটা বড় রকমের ভুল। এই সূত্রে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, কাশ্মীরে আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি ঠিক রাখাটা জরুরি। তবে সেটাই কাশ্মীরিদের মূল সমস্যা বলে ধরে নেওয়াটা ভুল।
অমর্ত্য সেনের এই সমালোচনার জবাবে সরকারের তরফে কেউ মুখ খোলেননি তাৎক্ষণিক ভাবে। এবং ভূস্বর্গে অব্যাহতই রয়েছে অশান্তি। দক্ষিণ কাশ্মীরের কাজিগুন্দে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে গুরুতর জখম আরও এক জনের মৃত্যু হয়েছে মঙ্গলবার। এই নিয়ে ১১ দিনে উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে হল ৪৪। তবে গুলিচালনার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছে সেনাবাহিনী।
সোমবার রাতে কাজিগুন্দে কার্ফু উপেক্ষা করে নিরাপত্তাবাহিনীর গাড়িতে পাথর ছুড়তে থাকেন স্থানীয়রা। পরিস্থিতি সামলাতে গুলি চালায় সেনা। ঘটনাস্থলেই মারা যান দু’জন। সেই ঘটনাতেই এক আহতের মৃত্যু হয়েছে মঙ্গলবার। সেনার এক মুখপাত্রের কথায়, ‘আমরা অনুতপ্ত। বাহিনীর অস্ত্র কাড়ার চেষ্টা হয়েছিল। বাধ্যই হয়ে গুলি চালাতে হয়।’
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মঙ্গলবার স্থানীয়দের কাছে গিয়ে শান্তি ফেরানোর আর্জি জানাতে সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি।
মঙ্গলবার পাকিস্তানে লাহৌর থেকে ইসলামাবাদের উদ্দেশে ‘কাশ্মীর ক্যারাভ্যান’ নিয়ে রওনা হয়েছে লস্কর-ই-তইবার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সাঈদ। আগামীকাল সেই গাড়ি-মিছিল ইসলামাবাদে পৌঁছলে বিরাট সভা হওয়ার কথা। এমনকী মিছিল নিয়ে কাশ্মীরে ঢুকে পড়ার হুমকিও দিয়েছেন তিনি। সুর চড়িয়েছে পাক সরকারও।
জানানো হয়েছে, কাশ্মীরের ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’-এর প্রতিবাদে আগামী কাল পাকিস্তান জুড়ে ‘কালা দিবস’ পালিত হবে। পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে মিছিল ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনও হবে। কাশ্মীরিদের সমর্থনে প্রাদেশিক এবং কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মকর্তারা হাতে বাঁধবেন কালো ব্যান্ড। আয়োজন হয়েছে বিশেষ প্রার্থনারও। এমনকী পাক বংশোদ্ভূতরাও যিনি যে দেশে আছেন, সেখানকার পার্লামেন্ট ও জাতিসংঘে প্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্ষোভ দেখাবেন বলে জানানো হয়েছে। -আনন্দবাজার
২০ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস